জুমবাংলা ডেস্ক : সদর উপজেলার রানীগঞ্জ মোড়ে একটি অটো রাইস মিলের খোলা জায়গায় এখন ১১টি উটপাখি পালন করছেন সুলতান ইফতেখার। প্রাণীগুলোকে দেখতে তার মিলে ভিড় করছেন আশপাশের মানুষ।
গতকাল দুপুরে দিনাজপুর সদর উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকার মিল চাতাল ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখারের সঙ্গে তার মিল চাতালে গিয়ে কথা বলা হলে তিনি উটপাখির পালনের বিষয় বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, তার মনের অনেক দিনের ইচ্ছা অনুযায়ী এই উটপাখিগুলো তিনি দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদের মাধ্যমে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, এই উটপাখিগুলো তিনি তার মিল চাতালের পাশেই খামার গড়ে তুলে পাখিগুলো পালন-পালন করছেন। গরু-ছাগল যে রকম খাবার খেয়ে বেড়ে উঠে সে ধরনের খাবার এই উটপাখিগুলো খায় এবং হজম শক্তি খুবই ভালো। উটপাখিগুলোর লালন-পালনে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রোগ-বালাইও তেমন একটা নেই। পাশে অবস্থিত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ শিক্ষক এবং চিকিৎসকরা তাদের নিজেদের সহযোগিতায় উটপাখিগুলোর চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি উটপাখিগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। ডিমগুলো ফুটানোর জন্য স্থানীয় হাবিপ্রবি ভেটেরিনারি বিভাগের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।
দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হারুন অর রশিদের সঙ্গে গতকাল কথা বলা হলে তিনি জানান, তার তত্ত্বাবধানে উটপাখিগুলোর চিকিৎসাসেবা ও বেড়ে ওঠার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আসছেন। উটপাখির উচ্চতা ৩ মিটার পর্যন্ত হয়। সর্বোচ্চ ওজন হয় ১৫৫ কেজি। সবচেয়ে দ্রুতগামী বা দৌড়বাজ এ পাখি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এটি সবচেয়ে বড় ডিমের অধিকারী, দেড় কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে এক একটি ডিমের ওজন।
তিনি জানান, উটপাখিগুলো চিকেন ফিড, আলফা ও নেপিয়ার ঘাস, ডুমুর ও নিমপাতা, ফুলকপি-বাঁধাকপি, লালশাকসহ বিভিন্ন শাকসবজি ও পাথরের গুঁড়া খেয়ে থাকে। দুই আঙুলবিশিষ্ট পায়ের অধিকারী উড়তে না পারা এই পাখি ও তার ডিমের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম নয়।
গত ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝির দিকে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্ববাবধানে ১৩টি পাখি নিয়ে আসেন সুলতান ইফতেখার চৌধুরী। এ দেশের মাটি ও আবহাওয়ার সঙ্গে পাখিগুলোকে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন তিনি, যাতে আগামী দিনে বাণিজ্যিকভাবে এটি পালন করা যায়।
মিলের সুপারভাইজার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে পাখিগুলো হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ছিল। ডিম থেকে বাচ্চা প্রজনন ও স্বাভাবিকভাবে লালন-পালনের জন্য এই মিলে নিয়ে আসা হয়। যেহেতু এগুলো মরুভূমির প্রাণী, তাই তাদের স্বাভাবিক লালন-পালন করার জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের মিলে পুরুষ উটপাখি আছে সাতটি ও মেয়ে চারটি। ইতোমধ্যে এগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। সেগুলো হাজী দানেশের ভেটেরিনারি বিভাগের মাধ্যমে ফোটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যদি ডিমগুলো থেকে বাচ্চা জন্ম নেয়, তাহলে আমরা উটপাখির বংশবিস্তার করাতে সক্ষম হব।’
উটপাখির পালক সুলতান ইফতেখার চৌধুরী বলেন, ‘উটপাখি সাধারণ তৃণভোজী প্রাণী। এগুলোর খাবার খুব একটা ব্যয়বহুল নয়। ঘাস, গাছের পাতা, ফিড খেতে দেওয়া হয়। আমাদের কাছে অনেকে উটপাখি কিনতে চায়। এদের বংশবিস্তার করা সম্ভব হলে পরবর্তী সময়ে বাইরে বিক্রি করার চিন্তা করব।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন বলেন, ‘উটপাখি মরু অঞ্চল ও আফ্রিকার বনে পাওয়া যায়। এটি বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশে লালন-পালন করা হচ্ছে। উটপাখির মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। এই পাখির মাংসে চর্বির পরিমাণ ৩ শতাংশেরও কম থাকে। উটপাখির পশম ও চামড়ার বিদেশে চাহিদা রয়েছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।