লাইফস্টাইল ডেস্ক : সকালে এক কাপ কফি ঘুমের রেশ কাটিয়ে তরতাজা অনুভব করাতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে ক্যাফিনের প্রভাব দীর্ঘ সময় ধরে দেহে থাকে। এমনকি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা’তে অবস্থিত ‘নোভা সাউদার্ন ইউনিভার্সি’সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, গ্রহণ করার ৪৫ মিনিটের মধ্যে ৯৯ শতাংশ ক্যাফিন দেহে শোষিত হয়। তবে ক্যাফিনের অর্ধেক জীবন, অর্থাৎ যে সময়ে যে পরিমাণ ক্যাফিন গ্রহণ করা হয়েছে, সেই পরিমাণের অর্ধেকের প্রভাব থেকে যায় পরবর্তী দীর্ঘ সময় পর্যন্ত।
কারও কারও ক্ষেত্রে ক্যাফিনের এই অর্ধেক প্রভাব চলতে পারে দেড় থেকে সাড়ে নয় ঘণ্টা।
তাই দুপুরের পর কফি পান করলে রাতে ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি স্লিপ’ ডাক্তার হিসেবে খ্যাত মনোবিজ্ঞানি মাইকেল ব্রুস ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “রাতে ভালো ঘুম দিতে চাইলে দুপুরের পর নিয়মিত কফি পান করার মতো ভুল এড়াতে হবে।”
যে কারণে দিনের প্রথমভাগে কফি পান বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ
কফির বেশ কিছু স্বাস্থ্যোপকারিতা রয়েছে। যেমন- প্রদাহরোধী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কফি।
কারণ ক্যাফিন ‘অ্যাডেনোসিন’য়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। এই ‘নিউরোট্রান্সমিটার’ ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
ডা. ব্রুস বলেন, “ক্যাফিন একটি উদ্দিপক উপাদান যা ঘুম হওয়ার ক্ষেত্রে ‘অ্যাডেনোসিন’য়ের প্রভাবে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।”
সাধারণভাবে ‘অ্যাডেনোসিন’ সারাদিন ধরে দেহে সঞ্চিত হয়। যা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সংকেত প্রদান করে। তবে ক্যাফিন এই প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটায়।
তাই ভালো ঘুমের জন্য কফি এবং ক্যাফিন আছে এরকম পানীয়, যেমন- চা বা এনার্জি ড্রিংকস গ্রহণের পরিমাণ কমানোর পাশাপাশি দিনের প্রথমভাগেই পানের অভ্যাস গড়া উপকারী।
ডা. ব্রুসের ভাষায়, “কফি প্রেমিরা যে ভুলটা করেন তা হল দুপুরের পর কফি গ্রহণ। যদি সঠিক সময়টা বলি, সেটা হল দুপুর দুটার পর আর কফি পান করা উচিত না।”
তিনি আরও জানান, ঘুমের সমস্যা তৈরি করে বলে ‘ইনসমনিয়া’ বা অনিদ্রা রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ক্যাফিনের অবশিষ্টাংশের প্রভাব যেহেতু ছয় থেকে আট ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে সেই হিসাব করে, কফি পান করা থামালে ঘুমের সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।
এছাড়া কয়েকটি উপায়ে কফি পান করলে ঘুমের উন্নতিও হয়।
কফি পান বন্ধ করার সময় ঠিক করা: “প্রতিদিন দুপুরের পর কফি পান করবো না- এমন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে”- পরামর্শ দেন ডা. ব্রুস।
সাধারণত ঘুমানোর সময়ের আট ঘণ্টা আগে থেকে কফি পান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়।
এই নির্দেশনার ওপর ভিত্তি করে নিজের ওপর ক্যাফিনের প্রভাব কী রকম সেটা বের করে দিনের কোন সময়ে কফি পান বন্ধ করতে হবে সেটা বের করা যায়।
পরিমাণে দিকে নজর রাখা: দেখা গেছে দুপুরের আগেই হয়ত তিন কাপ কফি পান করা হয়েছে।
তাই ডা. ব্রুস বলেন, “এই কারণে ক্যাফিন গ্রহণের পরিমাণের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ শুধু কফি নয়, সারাদিনে আরও ক্যাফিন সমৃদ্ধ পানীয় পান করা হচ্ছে কিনা সেদিকেও নজর দেওয়া প্রয়োজন।”
মনে রাখতে হবে কফি ছাড়াও নানান খাবার ও পানীয়তে ক্যাফিন থাকে। আর যত বেশি ক্যাফিন গ্রহণ করা হবে ততই এর প্রভাব হবে দীর্ঘস্থায়ী।
ঘুম থেকে ওঠার ৯০ মিনিট পর কফি পান: যদিও ঘুম থেকে ওঠার পরপরই চা বা কফির জন্য মন আনচান করে।
তবে ডা. ব্রুসের পরামর্শ হল, অন্তত ৯০ মিনিট অপেক্ষা করা। কারণ সকালে দেরি করে কফি পান করলে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
দিনের প্রথমভাগে কর্টিসল হরমোনের ওঠা নামা চলে। যাকে বলে ‘কর্টিসল অ্যাওয়েকিং রেসপন্স (সিএআর)’
“এই ওঠা-নামার মানে হল স্বাস্থ্যকর স্নায়ুতন্ত্র। আর এটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় এবং ‘অটোইমিউন’ রোগের ঝুঁকি কমাতে প্রভাব রাখে। ৯০ মিনিট পর কফি পান করলে সিএআর’য়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এমনকি সারাদিন ধরে শক্তিও দেয়।” একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন বস্টন নিবাসী পুষ্টিবিদ অ্যাবিগেইল হুবের।
কফির সাথে অন্য কিছু না মেশানো: স্বাদ বৃদ্ধিতে কফির সাথে নানান কিছু মেশানো হয়। তবে ডা. ব্রুস এর ঘোর বিরোধী, বিশেষ করে মিষ্টি ধরনের কিছু মেশানো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস নয়।
এমনকি এগুলো ঘুমের ওপরেও বাজে প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি চিনি দেহে প্রদাহ তৈরি করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।