সকালে ঘুম থেকে উঠে এমন দুই বা তিনটি কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন ইংল্যান্ডের সাইকোথেরাপিস্ট কামাল্যান, যেসব কাজ ব্যক্তির মন ভালো করে। কারণ সকালে প্রথম যে কাজটা করা হয় সেটি ভালো অনুভব করার জন্য ডোপামিন হরমোন নিঃসৃত করে।
যেমন- সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ হলো ঘর গোছানো, এতে মন প্রফুল্ল হয়। এরপর দাঁত ব্রাশ করা। রাতভর ঘুম শেষে শরীর কিছুটা শুষ্ক (ডিহাইড্রেট) হয়ে যায়, তাই পানি প্রয়োজন। এক গ্লাস পানি পান করা। ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাকৃতিক আলোতে কিছুক্ষণ হাঁটা।
কামাল্যান বলেন, যদি সকাল ভালোভাবে শুরু করেন, আপনার সারাদিন ভালো কাটবে। আপনি বেশ গুছিয়ে সুন্দরভাবে দিনটি অতিবাহিত করতে পারবেন।
কিভাবে দিনের শুরু করা উচিত, এ বিষয়ে সম্প্রতি এক ইনফ্লুয়েন্সারের সকালের রুটিনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, কয়েক কোটি ভিউ পেয়েছে সেটি।
ভিডিওতে দেখা যায়- আস্টন হল নামের ওই ইনফ্লুয়েন্সার ভোর চারটার আগে উঠে দাঁত ব্রাশ করছেন, এরপর তিনি সাঁতার কাটছেন, ধ্যান করছেন, জার্নাল পড়ছেন, কলার খোসা দিয়ে মুখ ঘষছেন, ওয়েট লিফটিং করছেন, বরফের মধ্যে মুখ ডোবেচ্ছন, এমন আরও অনেক কিছু করে শেষমেশ সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি নাস্তা করেন।
তার এই রুটিন দেখে নেট দুনিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেখানে আস্টনের মতো ছয় ঘণ্টা ধরে দিনের শুরু করাকে বেশিরভাগ মানুষই বিলাসিতা বলেছেন।
তবে ছয় ঘণ্টা ধরে দিনের শুরু না করলেও সুন্দরভাবে শুরু করাটা আবশ্যক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ইংল্যান্ডের সাইকোথেরাপিস্ট (মানসিক রোগের চিকিৎসা করেন যিনি) কামাল্যান কর বলেন, দিনের শুরু ভালোভাবে করতে ডজনখানেক কাজ করার দরকার নেই। তবে সুস্থ, স্বাভাবিক ও গঠনমূলক একটি দিন অতিবাহিত করার জন্য সকালের কাজগুলো পুনর্মূল্যায়ন করা যেতেই পারে। যে কাজগুলো ব্যক্তির মন উৎফুল্ল রাখতে সহায়তা করে ও সারাদিনের জন্য শক্তি জোগায়, সেগুলো জানা প্রয়োজন।
মানুষের কাজকর্ম ঠিক কিভাবে তার জীবনকে প্রভাবিত করে, সেটি নিয়ে কয়েক বছর ধরে গবেষণা করছেন ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক শন ম্যাকক্লেইন।
প্রতিদিন সকালে রুটিনমাফিক একই ধরনের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ম্যাকক্লেইন শন বলেন, মানুষ যদি প্রতিদিন সকালে একই ধরনের কাজ করেন, তাহলে তার আলাদা করে চিন্তা করতে হয় না। এতে অন্য সময়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য মস্তিষ্কে শক্তি সঞ্চিত হয়। সকালে রুটিন মাফিক কাজ করা এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক শর্টকার্ট।
তিনি বলেন, মানুষের মস্তিস্ক সাধারণত অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তেমন চিন্তাভাবনা করতে পছন্দ করে না। চিন্তা-ভাবনার ক্ষেত্রে মানুষকে হিসেবি হতে বলেছেন তিনি।
শনের গবেষণার তথ্যমতে, যেসব মানুষ কোনো রকম বিঘ্ন ছাড়া দিনের শুরুটা ভালোভাবে করেন, তারা কর্মক্ষেত্রে ভালো করেন, তারা শান্ত মেজাজে নিজেদের কাজগুলো করতে পারেন। অন্যদিকে যারা বিশৃঙ্খলভাবে দিনের শুরু করেন, তারা সারাদিন মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন। তিনি বলেন, সকালের রুটিনে কোনো বিঘ্ন ঘটলেই সারাদিন এলোমেলো হয়ে যায়। একবার তার মেয়ের একটি প্রোগ্রামের কথা ভুলে অন্য কাজ করছিলেন বলে জানান এই গবেষক।
শন বলেন, প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু রুটিন থাকে। তবে খুব কম মানুষই সেটি ভেবেচিন্তে ঠিক করেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কাজ করতে করতে সেটিই রুটিন হয়ে গেছে, বিষয়টি এমন।
কামাল্যান কর বলেন, সকালে তাড়াহুড়ো করে গোসল করা, খাওয়া কিংবা বাসা থেকে বের হওয়া এগুলো খারাপ জিনিস। এর ফলে মানুষের শরীর থেকে অতিরিক্ত কর্টিসোল হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনটি মানুষের সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সার্কাডিয়ান রিদম হলো দিনভর একটি মানুষের শরীর কিভাবে কাজ করবে, তা পরিচালনার জন্য একটি ঘড়ির মতো ব্যবস্থা। যেখানে মানুষের ঘুমিয়ে পড়া, জেগে ওঠা, শরীরের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে মানসিক অবস্থা, সব ধরনের ক্ষুধা- সবই নিয়ন্ত্রিত হয়।
কামাল্যান বলেন, এই সার্কাডিয়ান রিদমের কারণেই মানুষ সকালে জেগে ওঠে। তবে অতিমাত্রায় কর্টিসোল নিঃসৃত হলে সেটি মানুষের মধ্যে উদ্বিগ্নতা ও অস্বস্তির সৃষ্টি করে।
সকালে যেসব মানুষের এমন তাড়াহুড়ো হয়ে থাকে, তাদের ৩০ মিনিটি আগে এলার্ম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কামাল্যান। তবে এলার্ম দিয়ে আরেকটু ঘুমানোর জন্য ‘স্নুজ বাটন’ চাপতে নিষেধ করেছেন তিনি। এতে বরং মানুষ সারাদিন তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকেন বলে জানান তিনি।
ঘুম থেকে ওঠার পর প্রাকৃতিক আলোতে কিছুটা হাঁটার পরামর্শ দেন তিনি। এমনকি মেঘলা আবহাওয়া হলেও এই হাঁটা সার্কাডিয়ান রিদমের জন্য ফলপ্রসূ বলে জানান এই চিকিৎসক। নাস্তা না করা পর্যন্ত কফি জাতীয় কিছু না খেতে বলেছেন কামাল্যান।
কামাল্যান বলেন, সারাদিন ভালোভাবে চলার জন্য, ঠিকঠাকভাবে নিজের কাজ করার জন্য এই অভ্যাসগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।