জুমবাংলা ডেস্ক : দুর্নীতি, লুটপাট ও টাকাপাচারের সন্দেহে সাবেক হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, আমলাসহ অন্তত শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে অন্তত দেড় হাজার ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও তলব করা হয়েছে। গড়ে দিনে শতাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এখন এসব ব্যাংক হিসাবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কালের কণ্ঠের করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
তবে সংস্থাটি আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্সের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। কাজ শেষে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছরের আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন দুঃশাসন ও স্বেচ্ছাচারিতার অবসান ঘটে।
সরকারের পতনের পর তাঁর আমলের মন্ত্রী-এমপি, বিভিন্ন সহযোগীসহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির খবর বেরিয়ে আসছে। হাসিনা পালানোর সঙ্গে সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তিরাও গাঢাকা দেন। অনেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে আটক ও গ্রেপ্তার হন। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
একই সঙ্গে তাঁদের স্ত্রী, সন্তানসহ ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়ার তালিকায় সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম রয়েছে।
বিএফআইইউয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থপাচার রোধ ও পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপসহীন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রথমত, পাচারের সঠিক তথ্য উদ্ধার, পরিমাণ নির্ণয় ও পরে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
যদি কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে পাচারের তথ্য প্রমাণিত হয় তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু তাঁদের ব্যবসায় ক্ষত সৃষ্টি হতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন কিছু পরিচিত সাবেক এমপি, মন্ত্রী বা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী কর্মকর্তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার খবর মিডিয়ায় আসে। কিন্তু এটা একটি আংশিক চিত্র। প্রতিদিন শতাধিক ব্যাংক হিসাব জব্দ করছে বিএফআইইউ। এখন পর্যন্ত ব্যাংক হিসাব জব্দ এবং তলবের তালিকায় যুক্ত হয়েছে প্রায় দেড় হাজার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম। এখন তাঁদের প্রধান কাজ লেনদেনের চিত্র পর্যালোচনা করে পাচার শনাক্ত করা। পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া।
এ বিষয়ে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন, তাঁদের সম্পদ দেশে ফেরত আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা উচিত। যেহেতু দেশে পাচারের টাকা ফেরত আনার উদাহরণ রয়েছে, সুতরাং আমরা পারব না কেন? দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করে ও ইন্টারপোলের সাহায্যে এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাংকিং টাস্কফোর্স গঠনসহ আর্থিক খাত সংস্কারে গত দুই মাসে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আমি সেগুলোকে ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করি। তবে ব্যাংকের প্রতি এখনো সঞ্চয়কারীদের একটি ভয় লক্ষ করা যাচ্ছে। এটাকে দূর করতে হবে। সে জন্য সবার আগে ঋণের প্রকৃত অবস্থা নিরূপণ করতে হবে। এরপর নির্ধারণ করতে হবে কারা ইচ্ছাকৃত ও কারা অনিচ্ছাকৃত খেলাপি। আর কোন ঋণের বিপরীতে জামানতের পরিমাণ কত।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য অনুসারে, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশ থেকে অন্তত ১৪ হাজার ৯২০ কোটি বা ১৪৯.২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্ত সংস্থা টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে সরকার। এই টাস্কফোর্সের সভাপতি করা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। আর টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা দেবে বিএফআইইউ।
পাচারের টাকা ফেরাতে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকের সময় পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা চেয়েছেন তিনি। এ ছাড়া বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানতে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া শুরু করেছে।
সিআইডি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), কাস্টমস, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিএসইসি ও দুদক অর্থপাচার প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এস আলম, বেক্সিমকোসহ বড় বড় বেশ কিছু শিল্প গ্রুপের মালিকদের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করেছে বিএফআইইউ। পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।