জুমবাংলা ডেস্ক: খুলনায় বিদেশি কুকুরের বাণিজ্যিক খামার করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সাদিকুর রহমান গালিব নামে যুবক। গত ৭ বছরে অনলাইনে ও সরাসরি দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্রি করেছেন ৩ শতাধিক কুকুর। চ্যানের ২৪-এর প্রতিবেদক মামুন রেজার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
বর্তমানে তার খামারে রয়েছে জার্মান সেফার্ডসহ ৩০টি বিদেশি কুকুর। তার কাছ থেকে কেনা কুকুর ব্যবহার করা হচ্ছে বিজিবিসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থায়ও। সফল উদ্যোক্তা গালিবের বিদেশি কুকুরের বাণিজ্যিক খামার দেখে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে।
খুলনার সাদিকুর রহমান গালিব প্রবাসে ছিলেন বেশ কয়েক বছর। এরপর দেশে ফিরে ২০১৫ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার আমভিটা এলাকায় ৬ একর জমিতে খামার শুরু করেন। ৯টি পুকুর কেটে সেখানে শুরু করেন সাদা মাছ চাষ।
পুকুরগুলোর নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন হয় পাহারাদারের। সে কারণে তিনি তার খামারে প্রথম দেশি কুকুর পোষা শুরু করেন। কিন্তু দেশি কুকুরগুলোকে মানুষ লাঠি নিয়ে তাড়া দিলেই সেগুলো ভয়ে সরে যেতো। বিষয়টি দেখে গালিব মনে মনে ভাবলেন দেশি কুকুরের পরিবর্তে তিনি বিদেশি কুকুর পালন শুরু করবেন। ২০১৫ সালে একটি জার্মান শেফার্ড কুকুর কেনেন তিনি। কিছুদিন পর তার জন্য একটি স্ত্রী কুকুর কেনেন। ৫৪ হাজার টাকার দুটি কুকুর দিয়ে যাত্রা শুরু হয় গালিবের। এক বছরের মাথায় একবারে ৯টি বাচ্চা হয়। তিনি বাচ্চাগুলো বিক্রি করতে বিক্রয় ডট কমে বিজ্ঞাপন দেন। অনেকে আগ্রহ দেখান কুকুরছানা কেনার জন্য।
এ সময় তিনি ৭টি কুকুরের বাচ্চা বিক্রি করেন। তখন তিনি দেখলেন একেকটি কুকুরছানা ২০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। পরে তিনি আরও তিনটি জাতের কুকুর কেনেন। রট ওয়াইলার, লাছা ও স্পিডস জাতের কুকুর কিনে তিনি বাণিজ্যিকভাবেই কুকুর পালনের দিকে ঝুঁকে পড়েন।
সাদিকুর রহমান গালিব জানান, কুকুরগুলো অধিকাংশ সময় খামারে ছাড়া থাকে। অপরিচিত কেউ এলেই তার ওপর হামলা করে। কিন্তু মালিকের শেখানো মতো তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ আচরণ করলে কিছুই বলে না। খামারে সাপ, গুইসাপ, শেয়ালসহ অন্যান্য বন্য প্রাণীও এসব কুকুরের ভয়ে আসতে পারে না। কুকুরগুলোর কারণে সেখানে কোনো চোর-ডাকাতও ঢুকতে সাহস পায় না।
গালিব এক ছেলে ও দুই মেয়ের বাবা। তার রয়েছে দুই তলার দুটি ভবন। পরিবারের সবার সঙ্গেই কুকুরগুলোর রয়েছে বন্ধুসুলভ আচরণ। বর্তমানে ১২টি পুকুর, সাদা মাছ ও রঙিন মাছের চাষ, কবুতর পালন, কচ্ছপ ও কুকুরের খামার রয়েছে তার। বাণিজ্যিক এই খামারের নাম দিয়েছেন ‘খুলনা ক্যানেল’।
সাদিকুর রহমান গালিব বলেন, দুটি কুকুর দিয়ে শুরু করেছিলাম। বর্তমানে আমার খামারে জার্মান শেফার্ড, ডোবার ম্যান, রটহোইলার, স্পিডস, লাছা, ল্যাবরেডর, গোল্ডেন রেটরিভার এই সাত প্রজাতির ৩০টি বিদেশি কুকুর রয়েছে। যার মধ্যে তিনটি কুকুর ছানা। গত ৭ বছরে ৩ শতাধিক কুকুর বিক্রি করেছি। কুকুর ছানার ৪৫ দিন বয়স হলে বিক্রয়যোগ্য হয়।
তিনি বলেন, অনলাইনে এবং সরাসরি কুকুর বিক্রি করছি। অনলাইনে ‘খুলনা ক্যানেল’ নামে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে দেখে মানুষ কুকুর কেনার জন্য অর্ডার দিচ্ছেন। অনেকে অগ্রিম বুকিংও দিয়ে রাখেন। মানুষ বাড়ি পাহারা এবং সখের বসে কুকুর পোষেন। যাদের প্রয়োজন তারা বিদেশি কুকুর কিনতে আমার এখানে ছুটে আসেন। শুধু কুকুর কিনতেই নয়, প্রজননের জন্যও আমার এখানে আসছেন, নিচ্ছেন পরামর্শ।
কুকুরগুলোকে তিনি দুইবেলা খাবার দেন। দুপুর ১২টায় একবার এবং সন্ধ্যায় একবার। লবণ ও চিনি না দিয়ে মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে কুকুরগুলোকে খাওয়ানো হয়। তবে বাচ্চা ও গর্ভবতী কুকুরের খাবারের সময় ও মেন্যু আলাদা থাকে। কুকুরের থাকার জন্য ১৩টি ঘর রয়েছে।
গালিব বলেন, কুকুরগুলো আমার পরিবারের অংশ হয়ে গেছে। সারা দিন সেগুলোর দেখাশোনা, পুকুরের মাছ, কবুতর পালনে সময় কেটে যায়। যারা কুকুর কেনে তাদের পরামর্শ দেয়া হয়-কীভাবে কুকুর লালন পালন করবে, কৃমিনাশক ওষুধ দেবে, একটা সুন্দর নাম রাখা ইত্যাদি।
গালিব বলেন, কুকুরের বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিলে তারা শিখতে পারে। নতুন পরিবেশের সঙ্গে মিশতে পারে এবং যে উদ্দেশ্যে কুকুর নেবে, সেই প্রশিক্ষণ দিলে সফল হওয়া সম্ভব। বিদেশি এসব কুকুর ৩০০ থেকে ৪০০ শব্দ শিখতে পারে। এরা খুবই বুদ্ধিমান ও প্রভুভক্ত প্রাণী। এদের মুখের কথায় পরিচালনা করা যায়।
খামারে থাকা কুকুরগুলোর বিভিন্ন নাম রয়েছে। মাম্বা, জ্যাক, জেমি, জিমি, রিমি, ইভি, লুসিসহ বিভিন্ন নামে এসব কুকুরকে ডাকেন তিনি। যার নাম ধরে ডাকেন সেই কুকুর দৌড়ে চলে আসে গালিবের কাছে। হুকুম দেয়া মাত্র সেই কাজ করে।
গালিব আরও বলেন, বিদেশি কুকুর পালনে তিনটি জিনিস থাকতে হবে, তা হলো টাকা, জায়গা ও সময়। তাহলে কুকুরের বাণিজ্যিক খামার গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব।
শখের বশে শুরু করে রঙিন মাছ চাষে ইঞ্জিনিয়ার তারেকের বাজিমাত, মাসে আয় ৫০ হাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।