দুই উপজেলার চার গ্রামজুড়ে ‘রেসকোর্স’, ঘোড়দৌড় দেখতে মানুষের ঢল

রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : পূর্বে পলাশবাড়ীর মির্জাপুর গ্রাম। উত্তরে ডাকুনী ও পশ্চিমে নারায়নপুর। এই দুটি গ্রামও একই উপজেলার। দক্ষিণে গোবিন্দগঞ্জের বেড়ামালঞ্চা। গাইবান্ধার এই চার গ্রামের মাঠজুড়ে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে গেল আজ শুক্রবার বিকেলে। এই খেলা দেখতে ঢল নেমেছিল মানুষের।

মরহুম আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মণ্ডল স্মৃতি ঘোড়দৌড় নামের এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ডাকুনী, নারায়নপুর, মির্জাপুর ও বেড়ামালঞ্চা যুবসমাজ।

আয়োজকদের দাবি, খেলায় লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম হয়েছিল।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক একর মাঠের চারদিক রশি দিয়ে ঘিরে ঘোড়দৌড়ের কোর্স বানানো হয়েছে। সীমানা বোঝানোর জন্য মাঝেমধ্যে তা লাল, নীল পতাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। উত্তর পাশে বসানো হয়েছে মঞ্চ।

মঞ্চ থেকে ঘোষক জানালেন, আজ (শুক্রবার) প্রতিযোগিতার উদবোধনী খেলা। কাল শনিবার আরও বেশি প্রতিযোগী খেলায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে রাজশাহীর তাসলিমা থেকে শুরু করে নওগাঁ, নীলফামারী ও জামালপুরসহ বিভিন্ন জেলার প্রতিযোগী রয়েছেন। আগামী রবিবার ফাইনাল খেলা হবে।

বিকেল তিনটার দিকে দেখা যায়, ফাঁকা চষা জমির ভেতর প্রতিযোগীরা ঘোড়া নিয়ে অনুশীলন করছেন। চারপাশ থেকে মানুষ যেন হুমড়ি খেয়ে ছুটছেন খেলা দেখতে। কেউ আসছেন পাশের জমিতে ফুটে থাকা হলুদ সরিষাখেতের আইল ধরে, কেউবা চষা জমির মাঝ দিয়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, পুরুষের পাশাপাশি নারী দর্শনার্থীও অনেক।

এক দর্শক মজা করে বললেন, ‘খেলা দেখার জন্য বউ-ঝিয়েরা রান্নাবান্না ফেলেই ছুটে এসেছেন।’

ইসলাম শেখ নামের একজন ইজিবাইকচালক এসেছিলেন পাশের বাসুদেবপুর থেকে। এটি পড়েছে পলাশবাড়ী উপজেলায়। এই চালক ইজিবাইকবোঝাই যাত্রীও এনেছেন। তিনি বললেন, খেলা দেখতে প্রচুর মানুষ আসছে। তার খেলা দেখাও হবে, ভাড়াও হবে।

খেলা উপলক্ষে বসেছিল মুড়িমুড়কিসহ নানা খেলনাপাতির দোকানও। দেদার বিক্রিও হচ্ছিল সেসব।

শামসুল ইসলাম নামের একজন দোকানি জানালেন, যেখানেই এমন খেলাধূলা বা লোকসমাগম হয়, সেখানেই তিনি যান। এসব জায়গায় বেচাবিক্রি ভালো হয়।

বিকেল চারটার পর শুরু হয় প্রতিযোগিতা। প্রথম দফায় তিনটি ঘোড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। সেগুলো হলো, আল্লাহ ভরসা, পঙ্খীরাজ ও পাগলী ২। তিন রাউন্ডের এই খেলায় সবাইকে টেক্কা দিয়ে সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রতিযোগীর ঘোড়াটি প্রথম হয়। দ্বিতীয় দফায় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী আরও তিনটি ঘোড়া অংশ নেয়। এর মধ্যেও সেই কনিষ্ঠ প্রতিযোগীর ঘোড়াটিই প্রথম হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, এই স্থানে এর আগেও প্রতিযোগিতা হতো। কিন্তু গত কয়েক বছর তা বন্ধ ছিল। এখন আবার শুরু হলো। এ উপলক্ষে আশপাশে উৎসব ছড়িয়ে পড়ে। খেলা দেখতে দূরের আত্মীয়রাও আসেন। ফলে তা মিলনমেলায় পরিণত হয়।

গোবিন্দগঞ্জের পুরন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু শাহীন বলেন, এমন প্রতিযোগিতা গ্রামবাসীকে নির্মল বিনোদন দেয়। পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিতে এসব খেলাকেন্দ্রিক মেলা ও জনসমাগম ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।

লুটেরারা দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে : জামায়াত আমির