জুমবাংলা ডেস্ক : গত দুই বছর ধরে ছেলে শরীফ আলীকে হারিয়ে শোকের পাথরে চাপা পড়েছিল ময়মনসিংহের খোরশেদ আলীর সব সুখ-আনন্দ। ছেলেকে খুঁজতে ছুটেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। কিন্তু ছেলের কোনো খোঁজ পাননি খোরশেদ। একমাত্র আল্লার উপর ভরসা করেই ছেলের প্রতীক্ষায় দিন গুণতে থাকেন তিনি।
অবশেষে শেষ হলো তার সেই অপেক্ষা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ফিরে পেলেন ছেলেকে। গত শনিবার ময়মনসিংহ থেকে শ্রীমঙ্গলে এসে ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যান খোরশেদ।
বাবার হাতে ছেলেক তুলে দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বাবা-ছেলের এই মিলনে দুই জনের মুখেই ছিল বাঁধ ভাঙা হাঁসি। চোখে ছিল আনন্দঅশ্রু। এসময় আবেগ আল্পুত হয়ে পড়েন উপস্থিত অন্যরাও।
জানা যায়, পাগল প্রায় একটি ছেলে লাউয়াছড়া বনের জঙ্গলের রাস্তায় একটি ছেলে উলঙ্গ অবস্থায় পরে থাকতো। তার পায়ে পচন ধরেছিল। তা দেখে গত ২৩ অক্টোবর শহরের বাসিন্দা পার্থ সারথী দাশ তার ফেসবুক আইডিতে সাহায্য চেয়ে একটি পোস্ট করেন। তার এই পোস্ট দেখে শহরের শেখ সরোয়ার জাহান জুয়েল ও আজিজুর রহমান নাঈম তাদের নিজেদের আইডি থেকে তারাও একটি পোস্ট করেন।
তাদের এই পোস্ট দেখে ছেলেটিকে উদ্ধারের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় অঙ্গীকার সামাজিক ও সাহিত্য পরিষদ ও আমরা সেচ্ছায় রক্ত দেই সংগঠনের কর্মীরা। গত ২৪ অক্টোবর ওই দুই সংগঠনের কর্মী সরোয়ার জাহান জুয়েল, আজিজুর রহমান নাঈম, মাহাদী, সপ্নীল আকাশ, ইমু, সাদী মিলে একটি টিম গঠন করেন। ছেলেটিকে লাউয়াছড়া থেকে উদ্ধার করে শহরে নিয়ে আসা হয়।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসা করায়। পরে তাকে খাবার দিয়ে রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে রাখা হয়। তাকে চুল কাটিয়ে গোসল করানো এবং গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয় নতুন কাপর। তারা নিজেরাই পালা করে ছেলেটিকে দেখে রাখেন। জানতে চেষ্টা করে তার বাড়ির ঠিকানা। কিন্তু সে ময়মনসিংহ ছাড়া মুখে আর কিছুই বলতে পারছিল না।
পরে তারা ময়মনসিংহ গ্রুফে ছেলেটির ছবি পোস্ট করে সাহায্য চায়। ওই ছবি দেখে ময়মনসিংহ থেকে অসিফ আহম্মেদ স্থানীয় পোস্ট দাতাদের জানান ছেলেটি তার চাচাতো ভাই।
অসিফ আহম্মেদ বলেন, আমি গ্রুফে ছবি দেখে আমার চাচাত ভাইকে চিনতে পারি। পরে তার বাবাকে খবর দেই।
খোরশেদ আলী জানান, আল্লাহ তার ডাক শুনছেন। তিনি নামাজ পরে ছেলের জন্য কাঁদতেন, আর শুধু আল্লার উপর ভরসা রাখতেন।
তিনি বলেন, আড়াই বছর আগে অপরিচিত এক ঠিকাদারের সাথে তার ছেলে ফাইলিংয়ের কাজে যাবার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। তখন সে সুস্থ ছিল। এক বছর কাজ কারিয়ে ঠিকাদার তার ছেলেকে কোনো টাকা দেয়নি। এই ভয়ে ছেলে আর বাড়িতে আসেনি।
শেখ সরোয়ার জাহান জুয়েল ও আজিজুর রহমান নাঈম জানান, মানবিকতার জায়গা থেকেই আমরা ছেলেটিকে উদ্দার করি এবং তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি।
পার্থ সারথী দাশ বলেন, একটি ফেসবুক পোস্টে আড়াই বছর পর বাবা তার হারানো ছেলেকে ফিরে পেয়েছেন। এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমার দিনে দিনে সবাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। তবে তরুণদের এই ঘটনা প্রমাণ করে যে আমরা আত্মকেন্দ্রিক নই। মানুষের পাশে দাঁড়াতে জানি এবং যে কারও বিপদে এখনো তরুণরা এগিয়ে আসতে পারে। এটা তরুণ সমাজের জন্য একটি ইতিবাচক শিক্ষা হয়ে কাজ করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।