ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারের কাজে ব্যবহারের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনতে যাচ্ছে বিএনপি।
মূলত, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বাচনী প্রচারের নিরাপত্তায় একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি নেতাদের নিরাপত্তার জন্য একটি বুলেটপ্রুফ মিনি বাস কেনারও অনুমতি পেয়েছে দলটি।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিএনপিকে একটি বুলেটপ্রুফ বাস কেনার অনুমতি দেওয়া হয় চলতি মাসের শুরুর দিকে। এর আগে, গত জুন মাসে একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি দেওয়া হয়।
তবে, কোন দেশ থেকে কোন মডেলের বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, দলীয় এক সূত্র বলেছে, জাপান থেকে গাড়িগুলো কেনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর এ ব্যাপারে বলেন, নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান জনসংযোগ করতে সারা দেশ ভ্রমণ করবেন; মানুষের সঙ্গে মিশবেন। একদিকে তাদের নিরাপত্তা, অন্যদিকে জনসম্পৃক্ততা। এই সময়ে তাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জরুরি। এ কারণেই বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক দলের জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনুমতি সাধারণত খুব কম দেওয়া হয়। অতীতে কেবল রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিদেশি দূতাবাস বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের জন্যই এ ধরনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সূত্রে জানা গেছে, জাপান, কানাডা ও জার্মানি সাধারণত বুলেটপ্রুফ গাড়ি তৈরি করে। শেখ হাসিনার জন্য নব্বইয়ের দশকে এবং ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছিল জাপান থেকে।
বারভিডার সভাপতি আবদুল হক বলেন, বেসরকারিভাবে কেউ বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনতে পারেন না, এটি সরকারিভাবে অনুমোদিত হতে হয়। একেকটি গাড়ির দাম পড়ে প্রায় ২ লাখ ডলার, আর ৮০০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে আনলে মোট খরচ দাঁড়ায় প্রায় ২২ কোটি টাকা।
এদিকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ছাড়াও আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্যও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিএনপি। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, একটি শটগান ও দুটি পিস্তলের লাইসেন্সের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টি এখনও বিবেচনাধীন আছে।
২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি দ্রুত দেশে ফিরবেন এবং নির্বাচনে অংশ নেবেন। এ অবস্থায় পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) তাদের প্রতিবেদনে জানায়, নির্বাচনী প্রচারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান হামলার ঝুঁকিতে থাকতে পারেন। এ অবস্থায় প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের আক্রমণ বা সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কা বিবেচনায় বুলেটপ্রুফ গাড়ির অনাপত্তি দেওয়া হয়েছে।
বুলেটপ্রুফ গাড়ির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে এসবির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সারা দেশে নির্বাচনী প্রচারে সম্পৃক্ত হবেন। দুজন নির্বাচনী জনসভায় অংশগ্রহণ করবেন। নির্বাচনী জনসভায় তাঁদের গমনাগমনের পথে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও তাদের নিয়োগ করা এজেন্ট অথবা সন্ত্রাসীদের কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবননাশের হুমকি আছে। দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দল ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবের কারণে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা জনসভা, রোডমার্চ বা রাজনৈতিক শোডাউনের সময় আক্রমণের শিকার হতে পারেন। খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বহুমাত্রিক নিরাপত্তা হুমকি বা ঝুঁকি থাকায় তাঁদের সার্বক্ষণিক ব্যবহারের জন্য একটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কিনতে সংস্থার (এসবি) অনাপত্তি প্রদান করা হলো।
প্রসঙ্গত, পুলিশ প্রটোকলের পাশাপাশি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থাও আছে। এটি চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্স (সিএসএফ) নামে পরিচিত। খালেদা জিয়া কোথাও গেলে তার নিরাপত্তায় বিশেষ পোশাকে সিএসএফের সদস্যদের দেখা যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।