বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনুমোদন ছাড়া ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সিটিউটের কার্যক্রম পরিচালনা এবং ইন্সটিটিউটে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়েগ, ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ফাঁকি, তিন বছর ধরে তেমন কোন কাজ ছাড়াই বসে বসে বেতন নেওয়া এবং সাংবাদিক হেনস্তাসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে দুদক রংপুর শাখার সহকারী পরিচালক মো.হুসাইন শরিফের নেতৃত্বে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল এই অভিযান পরিচালনা করেন।
এসময় দুদক রংপুর শাখার সহকারী পরিচালক মো.হুসাইন শরিফ বলেন, ড.ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইন্সিটিউটের বৈধতা না থাকার সত্ত্বেও এখানে কর্মকর্তা কর্মচারীরা কর্মরত রয়েছেন। তাদের পেছনে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হচ্ছে মর্মে অভিযোগ রয়েছিল। আমরা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে এখানে অভিযান পরিচালনা করি। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করে দেখেছি এই অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। এখানে যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত আছেন তারা কোন কাজ না থাকা সত্ত্বেও বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন মর্মে আমাদের প্রতিয়মান হয়েছে। তবে সম্প্রতি এই ইনস্টিটিউটের নীতিমালা মহামান্য চ্যান্সেলর কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে মর্মে জানতে পারি। ইতিপূর্বে ২০২৪ সাল পর্যন্ত উনারা অবৈধভাবে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন মর্মে আমাদের প্রতিয়মান হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রতিবেদন কমিশনের কাছে প্রেরণ করব এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
জানা যায়, ২০০৯ সালের ৩ ডিসেম্বর দশম সিন্ডিকেট সভার নবম সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ড. ওয়াজেদ ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনস্টিটিউট থেকে এমফিল, পিএইচডি ডিগ্রি দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর ২০১১ সালের ৩ নভেম্বর ২০তম সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১২ সালের ৭ মার্চ একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১১-২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে এমফিল, পিএইচডিতে ভর্তি করানো হয়।
গবেষণার জন্য অনুমোদন না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়া নিজের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীলকে নিয়োগ দেয়ার জন্য ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই এই ইন্সিটিউটে গবেষক ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন বলে কথিত আছে এবং তার আমলেই এই ভর্তি শুরু হয়। এরপর ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ২০৫ জন গবেষক ভর্তি হন। এরপর এই ইন্সটিটিউটে ভর্তির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়, ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ ইন্সটিটিউটে কর্মরত প্রায় সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন বসে বসেই বেতন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, ইন্সিটিউটে সর্বমোট সাত জন কর্মকর্তা ও একজন কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন এমএলএস এস কর্মরত আছেন।
সাত জন কর্মকর্তার মধ্যে আছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার খন্দকার গোলাম মোস্তফা, প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড.প্রসন্নজিৎ সরকার, সাবেক উপাচার্য আবদুল জলিলের মেয়ে রুমানা ফেরদৌসী জলীল, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রফিউল আজম খানের স্ত্রী ডেপুটি রেজিস্ট্রার সিরাজুম মুনিরা, সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম, সিনিয়র রিসার্চ অফিসার মেহজাবিন ইলাহী এবং রংপুর বিভাগের জিয়া পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান। কাজ না থাকায় অফিসেও নিয়মিত দেখা যায় না এসকল কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে রিসার্চ অফিসার ড. মো. রোকনুজ্জামান গবেষণার চেয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে । বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এই অফিসারদের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখা যায়, কোন কর্মকর্তারই কোন গবেষণা নেই।
গবেষণা বিষয়ক ওয়েবসাইট রিসার্চ গেইটে খুঁজে মাত্র ড.প্রসন্নজিৎ সরকার ও সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার আবু সায়েম এর দুই তিনটি গবেষণা সংক্রান্ত আর্টিকেল পাওয়া যায়, বাকিদের কোন গবেষণা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অমাণ্য করে এভাবে প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়ানোর পরেও প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভবিষ্যতে এখানকার কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে রাজনীতিতে জড়াবে। এছাড়া কর্মকর্তা রোকনুজ্জামানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য এবং সাংবাদিক হেনস্থার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা তার যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. শওকাত আলী বলেন,তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর আমি তাদের শোকজ করেছিলাম। তখন তারা মাফ চেয়েছেল। কিন্তু যথাযত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবকিছু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা ইতিমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি। আমরা আমাদের নিজস্ব গতিতে চলবো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।