সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর লুটপাটে ‘টপ টু বটম’ ছিল এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ স্থানীয় ব্যক্তি থেকে শুরু সচিবালয় পর্যন্ত জড়িত রয়েছে বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি সাদা পাথর পরিদর্শন করে সিলেট মহানগর বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৪২ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি করেছে দুদক। এছাড়াও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চারজন বর্তমান ও সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপার, ওসি এবং বিজিবিও জড়িত রয়েছে বলে তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযুক্ত আরও কয়েকজনের নামের তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এদিকে দুদকের এই তালিকা প্রকাশের পরপরই বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদি ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
অন্যদিকে এই বিষয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সিলেট জেলা ও মহানগর।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির দুই নেতা বলেন, ‘দুদকের অনুসন্ধান: সিলেটে সাদাপাথর চুরির সঙ্গে জড়িত ৪২ জন’ শীর্ষক সংবাদে দুদকের সূত্র দিয়ে কোনো ধরনের তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাদের নাম লুটেরাদের তালিকায় যুক্ত করেছে। এতে তারা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি এ ধরনের বাস্তবতাবিবর্জিত কাল্পনিক সংবাদ প্রকাশের কারণে আশ্চর্য হয়েছেন
দুই নেতার পক্ষে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তিনি বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, কোনোভাবেই এই অপকর্মের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। যারা এ মিথ্যা তথ্যটি পরিবেশন করেছেন, তাদের এটি প্রমাণ করতেই হবে অথবা এ ধরনের মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
এ ধরনের ভিত্তিহীন, কাল্পনিক এবং গুজব ছড়ানোর জন্য তারা আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি।
দুদকের তালিকায় ৪২ জন
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর মো. ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সিলেট জেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন ও মহানগর প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাদেক মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, সদস্য হাজি কামাল (পাথর ব্যবসায়ী), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া (পা. ব্য.), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন ওরফে দুদু (পা. ব্য.), সিলেট জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক রুবেল আহমেদ বাহার (পা. ব্য.), সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুসতাকিন আহমদ ফরহাদ (পা. ব্য.), কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া ওরফে দুলা, যুগ্ম আহ্বায়ক রজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবদল নেতা জসিম উদ্দিন, সাজন মিয়া, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির কর্মী জাকির হোসেন, সদস্য মোজাফর আলী, মানিক মিয়া, সিলেটি জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মকসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহপরান, কোষাধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) শাহ আলম ওরফে স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম এবং পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদ বক্স, কার্যক্রম নিষিদ্ধ সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কর্মী বিলাল মিয়া (পা. ব্য.), শাহাবুদ্দিন (পা. ব্য.), গিয়াস উদ্দিন (পা. ব্য.), কোম্পানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল ওদুদ আলফু, কর্মী মনির মিয়া, হাবিল মিয়া ও সাইদুর রহমান।
এছাড়াও রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জের আনর আলী, উসমান খাঁ, ইকবাল হোসেন আরিফ, দেলোয়ার হোসেন জীবন, আরজান মিয়া, মো. জাকির, আলী আকবর, আলী আব্বাস, মো. জুয়েল, আলমগীর আলম ও মুকাররিম আহমেদ।
এছাড়াও দুদকের অনুসন্ধানে লুটপাটে জড়িত থাকাদের তালিকায় রয়েছে খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, সদ্য বিদায়ী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার, সাবেক ইউএনও মোহাম্মদ আবুল হাসনাত, ঊর্মি রায়, ও আবিদা সুলতানা, সিলেটের পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এবং বিজিবি।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদনে ১০ সুপারিশ
সিলেটের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাট নিয়ে আলোচিত তদন্ত প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। সাত পৃষ্ঠার এ তদন্ত প্রতিবেদনে এই লুটপাটে প্রশাসনের নির্দিষ্ট অংশ, উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সাদা পাথর লুটপাটে রাজনৈতিক নেতাদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলেও তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার (২০ আগস্ট) দুপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি সাত পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বিদায়ী জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের নিকট জমা দেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ বলেন, প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ তদন্তে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততা থাকায় আমরা সেই দপ্তরগুলোকে এসকল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছি।
তবে তিনি তদন্ত প্রতিবেদনের অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে নতুন জেলা প্রশাসক যোগদানের পরই বিস্তারিত জানতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।