দুধের শিশুসহ কারাগারে মা, পিস্তল দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ


জুমবাংলা ডেস্ক : মা’দক না পেয়ে এক নারীকে পিস্তল দিয়ে ফাঁসিয়ে তার এক বছরের শিশু সন্তানসহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়।

একই সঙ্গে ওই পরিবারের আরেকজনকে গ্রেফতার করলেও ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে পঞ্চগড় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার বিকেলে ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মীরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাদক খুঁজতে গিয়ে মাদক ব্যবসায়ীর স্ত্রীর কাছে অবৈধ পিস্তল পাওয়া গেছে।

অভিযোগ ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার প্রেমচরণজোত সীমান্ত এলাকার লিটনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। পুলিশের তালিকায় লিটন একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে এসআই মাহবুবুর রহমান, সিপাই আব্দুর রহমান, সিপাই খায়রুল ইসলাম এবং ওয়্যারলেস অপারেটর মামুনুর রশিদসহ চারজন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

অভিযান পরিচালনাকারীদের দাবি, লিটনের স্ত্রী ঝর্না বেগমের কোমরে একটি পুরনো পিস্তল পাওয়া যায়। পরে ঝর্নাকে তার এক বছরের শিশু সন্তানসহ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় অভিযান পরিচালনাকারীরা। এ ঘটনায় সোমবার রাতেই তেঁতুলিয়া মডেল থানায় লিটন ও ঝর্নাকে আসামি করে মামলা হয়। মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান।

তবে লিটনের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, লিটনকে না পেয়ে প্রথমে তার ভাই খাজা নাজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে তার কাছে এক লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মীরা। টাকা দাবি করায় লিটনের বড় ভাই মানিক মিয়া পুলিশের ৯৯৯ ও দুদকের ১০৬ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন অভিযানকারীরা। হঠাৎ লিটনের স্ত্রী ঝর্না বেগমকে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন তারা। এ সময় খাজা নাজিম উদ্দিনকেও বিনা কারণে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়িতে তোলা হয়। শেষে নাজিমের স্ত্রী ৫০ হাজার টাকা দিয়ে তার স্বামীকে মুক্ত করেন। কিন্তু অস্ত্র দিয়ে লিটনের স্ত্রী ঝর্নাকে তার এক বছরের শিশু সন্তান মাসুমা আক্তারসহ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় তারা।

মঙ্গলবার ঝর্না বেগমকে তার এক বছরের মেয়েসহ আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। বর্তমানে নিরপরাধ শিশুটিও মায়ের সঙ্গে কারাগারে রয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযুক্ত লিটন বলেন, আমি ১০ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। আমার সাথে আমার মা ও স্ত্রী ছিল। রোববার রাতে আমরা হাসপাতাল থেকে বাড়ি আসি। সোমবার আমি বাইরে ছিলাম। পরে শুনি মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে আমার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে। মা’দক না পেয়ে পিস্তল দিয়ে ফাঁসিয়ে আমার শিশু সন্তানসহ স্ত্রীকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে তারা। আমি যদি কোনো অপরাধ করি, তাদের কাছে যদি প্রমাণ থাকে, তাহলে আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাক। কিন্তু আমার শিশু সন্তানসহ নিরপরাধ স্ত্রীকে কেন গ্রেফতার করা হলো।

লিটনের সেজ ভাই খাজা নাজিম উদ্দিন বলেন, দুপুরে দেখি হঠাৎ কয়েকজন সাদা পোশাক পরা লোক ও কয়েকজন পুলিশ আমাদের বাড়িতে ঢুকছে। ঢুকেই তারা সার্চ করা শুরু করলো। আমি জিজ্ঞাসা করতেই আমার হাতে হ্যান্ডকাপ পরান এবং এক লাখ টাকা দাবি করেন। পরে আমার ভাই তাদের সাথে তর্ক করায় লিটনের স্ত্রীর কাছে হঠাৎ অস্ত্র পেয়েছে বলে দাবি করেন। তাকে ও আমাকে গ্রেফতার করে গাড়িতে তোলা হচ্ছিল। পরে আমার স্ত্রী তাদের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিলে আমাদের ছেড়ে দিয়ে লিটনের স্ত্রীকে নিয়ে চলে যায়।

লিটনের বড় ভাই মানিক মিয়া বলেন, যখন আমি শুনছি তারা টাকা দাবি করছে, আমি তাদের টাকা দিতে নিষেধ করি। তখন আমি ৯৯৯ ও ১০৬-এ ফোন করে অভিযোগ করি। কিন্তু সাড়া পাইনি। পরে আমার ছোট ভাই ৫০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্ত হয়। আমার ভাই যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে তারা গ্রেফতার করে নিয়ে যাক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু নিরপরাধ মানুষকে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হলো কেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।

লিটনের মা মঞ্জুমা বেওয়া বলেন, একজন মহিলা পুলিশ আমার পুত্রবধূর গায়ে হাত তুলেছেন। হঠাৎ তারা বলে বসেন, আমার পুত্রবধূর কাছে নাকি অস্ত্র আছে। অস্ত্র কোথা থেকে এলো কেউ বলতে পারে না। এটা তাদেরই কারসাজি।

পঞ্চগড় মা’দকদ্রব্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক আব্দুল মান্নান বলেন, তারা যেসব অভিযোগ করছে তা মিথ্যা। লিটন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তালিকাভুক্ত মা’দক কারবারি। আমরা তার বাসায় অভিযান চালাই। ভুলক্রমে আমরা তার বড়ভাই খাজা নাজিম উদ্দিনকে আটক করলেও পরে তাকে ছেড়ে দেই। কিন্তু তল্লাশির সময় লিটনের স্ত্রী ঝর্নার কোমরে একটি পিস্তল খুঁজে পাই। পরে লিটন ও তার স্ত্রী ঝর্নাকে আসামি করে অস্ত্র আইনে মামলা করা হয়।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি জহুরুল ইসলাম বলেন, মা’দকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছে একটি পিস্তল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এটি ভারতে তৈরি। এই পিস্তলে একটি গুলি ব্যবহার করা যায়। এ বিষয়ে থানায় একটি মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার গ্রেফতারকৃত ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সূত্র : জাগো নিউজ

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *