নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগ দিতে আজ দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দিল্লি যাচ্ছেন।
বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকটি হবে নয়াদিল্লির ৭ নম্বর লোককল্যাণ মার্গে নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে।
প্রতিবেশী দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের এ বৈঠকে বহুল আলোচিত তিস্তা, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাসহ জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো প্রাধান্য পাবে বলে ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের আগে দুদেশের মধ্যে তিনটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সরকারপ্রধানের দিল্লি সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে আজ কৃষি গবেষণা ও শিক্ষা সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি বিনিময় চুক্তির মেয়াদ ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাড়ানো এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনপিসিআইর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। ভারতের এনপিসিআই ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হলে দুপক্ষের মধ্যে নেটওয়ার্ক-টু-নেটওয়ার্ক সংযোগের মাধ্যমে রুপি-টাকায় পারস্পরিক লেনদেনের কাজ সহজ হবে।
এ ছাড়া দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বিদ্যুৎ ও রেলপথের একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন হতে পারে বলে জানান তিনি।
ভারতের সভাপতিত্বে জি-২০ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এবং সভাপতিত্বের এই মেয়াদে ভারত বাংলাদেশসহ মোট ৯টি দেশকে সব জি-২০ বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।
এই দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
মোমেন বলেন, ‘ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে অনন্য সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেব এই সুযোগ পেয়েছে, যা বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারত আয়োজিত ১৮তম জি-টোয়েন্টির সব বৈঠকেই বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করছে এবং বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ও সুপারিশ উপস্থাপন করছে, যা আয়োজক দেশ ভারতসহ অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রশংসা অর্জন করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক অবিশ্বাস্য গতি পেয়েছে যাকে সর্ম্পকের ‘সোনলী অধ্যায়’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
মোমেন বলেন, ‘জি-২০ সম্মেলনে অংশগ্রহণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) গতিশীল নেতৃত্বে গত ১৪ বছরে সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের স্বীকৃতি।’
জি-টোয়েন্টি সম্মেলন শুরুর পর ৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং শীর্ষ সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’-এর ওপর দু’টি ভাষণ দেবেন।
মোমেন বলেন, ‘ওয়ান আর্থ’ এবং ‘ওয়ান ফ্যামিলি’ সেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন, কোভিড মহামারীর পরে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, ইউরোপে যুদ্ধের ফলে জ্বালানি, খাদ্য এবং সারের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের বৈশ্বিক সরবরাহের মারাত্মক ব্যাঘাতের চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা যায় তা তুলে ধরবেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের মেয়াদে বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের অভিজ্ঞতা অংশগ্রহণকারী বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরবেন বলেও জানান তিনি।
একই দিনে প্রধানমন্ত্রী সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট আলবার্তো অ্যাঞ্জেল ফার্নান্দেজ, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
১০ সেপ্টেম্বর, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় এবং শেষ দিনে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যান্য দেশের নেতাদের সাথে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এরপর তিনি সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশ নেবেন।
সম্মেলনের শেষ দিনে ‘জি ২০ নিউ দিল্লি নেতাদের ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হবে। মোমেন আশা প্রকাশ করেন যে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি অনন্য অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের গভীর সম্পর্কের জন্য একটি মাইলফলক হবে।
১০ সেপ্টেম্বর বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।