জুমবাংলা ডেস্ক : সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার ঘোষণা দিয়েছে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলন। সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে জনমনে নানা বিতর্ক তৈরি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নিসচার চেয়ারম্যান ও চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। পাশাপাশি সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের সড়ক দুর্ঘটনার হিসাব ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় প্রশ্ন তোলেন এই চিত্রনায়ক।
তিনি বলেন, ‘নিসচা ২০১২ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান প্রকাশ করে আসছে। সরকার ও দেশবাসীকে জানানো হয়েছে, কাজটি আমরা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে শুরু করেছি। সেই সঙ্গে বলেও আসছি, ডাটা সংগ্রহের জন্য এটা যথেষ্ট নয়।’
সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আমরা সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরেছি। কিন্তু এখন অনেকে এ পরিসংখ্যান উপস্থাপন করছে। এতে নানা বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এ কারণে ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘শুরু থেকে আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি, কোনো বেসরকারি সংগঠন বা কোনো ব্যক্তির পক্ষে সড়ক দুর্ঘটনার প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারের একটি সার্বক্ষণিক মনিটরিং সেল এবং লোকবল প্রয়োজন। প্রযুক্তিগত উন্নতিরও দরকার আছে। এখানে রাষ্ট্রযন্ত্রের সহযোগিতা অপরিহার্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতি বছর তাৎক্ষণিক মামলার ওপর ভিত্তি করে একটি প্রতিবেদন দিত পুলিশ। আমাদের প্রতিবেদনের সঙ্গে যার বিস্তর ফারাক ছিল। পুলিশের প্রতিবেদনটি আমরা গ্রহণযোগ্য বলে মনে করতাম না। ৩০ দিনের মধ্যে মারা গেলে সেই তথ্য সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে বিবেচিত হওয়ার কথা। আমাদের দেশে সেটা পুলিশ উল্লেখ করে না। এ কারণে এই ডাটাটির গ্রহণযোগ্যতা আছে বলে আমরা মনে করি না। তাছাড়া অনেক সংগঠন যখন দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান দিতে শুরু করে এবং একেকজনের ডাটায় একেক রকম তথ্য প্রকাশ হতে থাকে, তখন থেকেই বিতর্ক শুরু।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়া তথ্যকে যখন অতিরঞ্জিত বলে মন্তব্য করেন, তখন জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।’
নিসচার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার প্রশ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও সরকারের, সড়ক মন্ত্রণালয়ের বিআরটিএও সরকারের। তাহলে দুটি মন্ত্রণালয়ের সড়ক দুর্ঘটনার ডাটার হিসাব ভিন্ন ভিন্ন কেন? দুটি মন্ত্রণালয়ের এই পারস্পরিক বিরোধী অবস্থার কারণে দেশে সঠিকভাবে দুর্ঘটনা নিরসনের কারণ উদঘাটন করা যায়নি। এ কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখনও আমাদের দেশে একটি বিষফোঁড়ার মতো হয়ে আছে। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিসংখ্যান দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতি বছরই বিগত বছরের রেকর্ড ভাঙছে। মৃত্যুর পাশাপাশি আহতের তালিকাও বেড়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ হচ্ছে। আমরা যে কাজটি শুরু করেছিলাম সেটি সরকারকে পথ দেখাতে উদ্যোগী হবে। সরকার এ বিষয়ে কাজ শুরু করুক।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– নিসচার যুগ্ম মহাসচিব গণি মিয়া বাবুল, মহাসচিব লিটন এরশাদ প্রমুখ। দীর্ঘ ৩১ বছর ধরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তার উদ্যোগে গঠিত ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংক্ষেপে নিসচা সংগঠনটি ২০১২ সাল থেকে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে আসছে।
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি ২০২৩’ এ আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা বা রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে, ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৩৭৬ জনের। একইভাবে, ২০১৮ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা মৃত্যু হয়েছে দুই হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫ দশমিক তিন শতাংশ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২৩ সালে পাঁচ হাজার ৪৯৫ সড়ক দুর্ঘটনায় সারা দেশে নিহত হয়েছেন পাঁচ হাজার ২৪ জন। পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে ওই বছর পাঁচ হাজার ৯৩ দুর্ঘটনায় চার হাজার ৪৭৫ জন নিহত। আরও দুই একটি সংগঠনের তথ্যও এরচেয়ে অনেক বেশি। আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটিও প্রত্যেক রিপোর্টের সঙ্গে মিলছে না। এতে করে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সরকার, পুলিশ ও বিভিন্ন রিপোর্টে ভিন্নতা রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বাংলাদেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া। তবে বিআরটিএ সেটা মানে না। যে যার মতো তথ্য দিয়ে তার পরিসংখ্যান সঠিক বলে দাবি করছে। কেউ হাসপাতালের তথ্য দিচ্ছে না। এভাবে তো হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।