জুমবাংলা ডেস্ক: মাদুর শিল্প সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বহু বছরের পুরোনো একটি কুটির শিল্প। উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের মাদরা গ্রামের সুনীল মণ্ডল যুবক বয়স থেকেই মাদুর বিক্রি করছেন। এ অঞ্চলের ২০০ থেকে ৩০০ পরিবারের আয়ের প্রধান উৎস ছিল এ মাদুর শিল্প। কিন্তু কাঁচামাল সংকটের পাশাপাশি উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় মাদুর শিল্প বর্তমানে চরম সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কালের বির্বতনে সেই প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী এই কুটির শিল্পটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখনো মাদুর শিল্পটি টিকিয়ে রাখতে মাদরা গ্রামটিতে এ কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন মাত্র দু-একটি পরিবার। তাদের মধ্যে অন্যতম সুনীল মণ্ডল। যিনি প্রায় ৭০ বছর ধরে মাদুর বিক্রি করছেন।
জানা গেছে, সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকে মাদুরের ব্যবহার হয়ে আসছে। বেদে মাদুরের ব্যবহার উল্লেখ করা আছে। সেখানে মাদুরকে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থায় যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মহাভারতে শুকনো ঘাসের আসনের ওপর বসতে দেওয়া হতো বলে উল্লেখ করা আছে। যা মাদুরের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এখনো গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে অতিথি এলে মাদুর পেতে বসতে দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। তবে শহরে ধনী পরিবারেও অনেক সময় কারুকার্যশোভিত মাদুরের দেখা মেলে। মাদুর গরমের দিনে আরামদায়ক এবং স্বাস্থ্যসম্মত। প্রচণ্ড গরমে শরীরের ঘাম শুষে মাদুর দেহ শীতল করে। আর গ্রামের অতিথিরা মাদুরে শুয়ে প্রকৃতির হাওয়ার আরামদায়ক ঘুম উপভোগ করতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাদুর শিল্পে ভাটা পড়ে। মাদুর শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় মারাথাগাছ। বিভিন্ন এলাকায় এটি মুর্তাবেত, মোড়াবেত, পাটিবেত প্রভৃতি নামে পরিচিত। মারাথাগাছ এক সময় পতিত জমিতে প্রচুর পাওয়া যেত। বর্তমানে মারাথাগাছের সংকট। মারাথাগাছ জন্মে ছোট ছোট জলাশয়ে, খাল বিলে এবং নদীর চরে। বর্তমানে যে মারাথাগাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ছাড়াও প্লাস্টিক শিল্পের বিপ্লব, প্রয়োজনীয় উপকরণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় বিলুপ্ত হতে চলেছে মাদুর।
মাদরা গ্রামের প্রবীণ সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের নারী-পুরুষ মাদুর বুননের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু এখন আর তেমন কেউ মাদুর তৈরি কিংবা বিক্রি করেন না। আমি প্রায় ৭০ বছর ধরে মাদুর বিক্রি করি। আমার দুই পুত্র সন্তান ও এক কন্যাসন্তান আছে। বড় ছেলে ব্যবসা ও ছোট ছেলে মাছ চাষ করে।’
আপনি এখনো কেন মাদুর বিক্রি করেন এমন প্রশ্ন করা হলে সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারি না। তাই সকাল হলে মাদরা গ্রাম থেকে প্রায় সাত-আট কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে তালা বাজারে হেঁটে আসি। যদি মাদুর বিক্রি হয় ভালো, না হলে আবার বাড়ি ফিরে যাই।’
অন্যরা কেন মাদুর বিক্রি ছেড়ে দিলেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও প্রতি কাউন মারাথাগাছের দাম ছিল ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। ফলে এক জোড়া মাঝারি ধরনের মাদুর উৎপাদনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। অথচ বাজারে এ মাদুরের প্রতি জোড়ার পাইকারি দাম ৮০০ টাকা। এতে এক জোড়া মাদুরে ২০ থেকে ৩০ টাকার বেশি লাভ থাকছে না। ফলে সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’
নিহার রঞ্জন, পরিমল কুমার, দীনেশ কুমার মণ্ডলসহ এলাকার কয়েকজন বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে আমাদের দাদা তার দাদা এই মাদুর শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বাবা-দাদুরাও এই পেশায় জড়িত ছিলেন। বর্তমানে মাদুর তৈরি করতে মেলের দাম আকাশছোঁয়া।
তালা উপজেলা অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশ বলেন, মারাথাগাছ চাষ কিংবা মাদুর তৈরির জন্য কোনো ভর্তুকি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দেওয়া হয় না।
ছাদে রঙিন মাছ ও মুক্তা চাষ করে ঘরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে রহমান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।