জুমবাংলা ডেস্ক : দুর্নীতিবাজদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে।
সোমবার (২৪ জুন) সংসদের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেছেন, দেশে দুর্নীতির মচ্ছব চলছে। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। সরকারে বিভিন্ন জায়গায় রাসেল ভাইপার আছে। সেজন্য দুর্নীতি বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন এবং দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ঋণখেলাপি অর্থ আত্মসাতকারীদের বিচারে ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন’ করা দরকার।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, নিষ্ঠুর অলিগার্করা দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই অলিগার্কির স্বার্থ রক্ষার্থে মূল্যস্ফিতি কমিয়ে আনা যায়নি। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতি, দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকিং খাতে লুট ও নৈরাজ্য, খেলাপি ঋণের বিশাল পাহাড় দেশের অর্থনীতিকে ভঙ্গুর অবস্থায় উপনীত করেছে। এর থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার, জন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই ছিল বর্তমান সময়ের জরুরি কর্তব্য। কিন্তু সেই লক্ষ্যে বাজেটে কোন কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায় না। আওয়ামী লীগের যে নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে বাজেট প্রস্তাবনা তার থেকে যোজন যোজন দূরে, সাংঘর্ষিক।
তিনি বলেন, বাজার সিন্ডিকেট আগের মত খেলা করছে। মানুষকে তার শিকারে পরিণত করছে। সরকার স্বীকার করছে সিন্ডিকেট রয়েছে। কিন্তু সিন্ডিকেট ভাঙার কোন উদ্যোগ দেখি না।
মেনন বলেন, বিএনপি আমলের দুর্নীতির বিশ্ব সূচকে আমাদের সেই কলঙ্ক দূর হলেও ঐ সূচকে বাংলাদেশ এখনও শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে। বরং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতির সম্প্রতি যে চিত্র বেরিয়ে আসছে। তা দেশের ভাবমূর্তি কেবল নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, এ কথা এখন আর অস্বীকার করার উপায় নাই যে, সাবেক পুলিশপ্রধান ও সেনা প্রধানের দুর্নীতির চিত্র হিমশৈলের ক্ষুদ্র উপরিভাগ মাত্র। এখনই বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দুর্নীতির এই বিস্তার রোধ করা না গেলে হিমশৈলের ধাক্কায় দেশের উন্নয়ন অগ্রগতির সলিল সমাধি হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা এখানে দেখলাম পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার জন্য সাংবাদিকদের ধমক দেওয়া হয়েছে। অনেক মন্ত্রী এ তথ্যকে অনুমানভিত্তিক বলে অভিহিত করছেন।
তিনি আরও বলেন, মার্কিন ফাইন্যান্সিয়াল ইনট্রিগেটি ইন্সটিটিউশন দেখিয়েছে যে, বছরে ৭ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে কানাডার বেগম পাড়ায়, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে, সিঙ্গাপুর, দুবাইয়ের আধুনিক শপিংমল, রিয়েল এস্টেট ও হুন্ডি ব্যবসায়। এই টাকার লভ্যাংশও দেশে আসছে না। পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনার কোন উদ্যোগ নাই। অথচ প্রবাসীরা বিদেশে হাড়ভাঙা খাটুনির যে আয় দেশে পাঠায় তার ওপর কর বসানো হচ্ছে। তাদের বিদেশ যাত্রা নিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
সরকারের উদ্দেশে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এ নেতা বলেন, দুর্নীতির এই মচ্ছব বন্ধ করতে এখনই ‘বিশেষ কমিশন’ গঠন করুন, দুর্নীতিবাজদের অর্থ সম্পদ বাজেয়াপ্ত, বিচার করে কঠিনতম শাস্তি দিন। ঋণখেলাপি অর্থ আত্মসাতকারীদের জন্য ‘ট্রাইব্যুনাল গঠন’ করুন।
কক্সবাজার-১ আসনের এমপি ও কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বলেন, উন্নয়নের পথে বাধা হচ্ছে মাদক, দুর্নীতি ও ডিজিটাল প্লাটফর্মের অপব্যবহার। শুধু কমান্ড দিয়ে, দুর্নীতি দমন কমিশন দিয়ে দুর্নীতি কমানো যাবে না। এ জন্য মহা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
কক্সবাজারের মিয়ানমার সীমান্তে মানুষের মনের আতঙ্ক দূর করতে বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসন, স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষকে আরও জোরদার করার দাবি জানান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ কক্সবাজার সীমান্ত থেকে একটু দুরে। সমগ্র জাতি ও বিশ্ব সেন্ট মার্টিনের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা আশাকরি এ নিয়ে সংসদে কেউ না কেউ কিছু বলবেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মানুষের আতঙ্ক দুর করবেন।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিম মামলা জট নিরসনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান। এ জন্য তিনি নতুন বিচারক নিয়োগ, উচ্চ ও নিম্ন আদালতে বিচারকদের বেতনভাতা বাড়ানো, বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ শক্তিশালী হলে গণতন্ত্রও শক্তিশালী হবে।
ঝিনাইদহ-৩ আসনের সরকারদলীয় এমপি সালাহ উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা সীমান্তবর্তী এলাকা। তারকাঁটাবিহীন প্রায় ১৭ কিলোমিটার সীমান্ত দিয়ে সোনা চোরাচালান, নারী-শিশু পাচার ও মাদকদ্রব্যের চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীকে সমন্বয় করে একটি ম্পেশাল টাস্কফোর্স গঠন এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানাব।
বাজেট বাস্তবায়নে ব্যাংক ঋণ নির্ভরতার সমালোচনা করে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বলেন, সরকারকে কয়েকটি প্রেসার নেওয়া লাগবে। এই প্রেসারের বিষয়ে আমি সাজেশন দিতে চাই। এই বাজেটে ঋণ দিয়ে উন্নয়ন ব্যয় মেটানো হবে। আড়াই লাখ কোটি টাকার লোন নেয়া হবে। দেড় লাখ কোটি নেয়া হবে ব্যাংক থেকে। আমি এমপি হওয়ার পর একটা গাড়ি কিনেছি এক কোটি টাকা দিয়ে। ৫০ কোটি টাকা লোন নিয়েছি সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে। এই লোনের সুদের কারণে রাতে ঘুম আসে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে কীভাবে ঘুমাবেন এটা একমাত্র তিনিই জানেন। আড়াই লাখ কোটি টাকার ঋণের বোঝা উনার মাথায় থাকবে সবসময়।
তিনি বলেন,এই সরকারকে ও বাজেটকে ব্যর্থ করার জন্যও আরেকটা বাজেট আছে। এই বাজেট যাতে ব্যর্থ হয় তার জন্য নেতৃত্ব দিচ্ছেন ড. মুহস্মদ ইউনুস। তিনি চাচ্ছেন। তার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হবে। আছে ডলার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।