দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত কঠোর অবস্থান নিতে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার বিশ্লেষণ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বক্তব্য দেন।
দুর্নীতি দমনে অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। রোববার ধানমন্ডির টিআইবি অফিসে ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে দেওয়া অঙ্গীকার নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
“এই সরকারের সময়ে আরও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে—এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই।”
তিনি জানান, টিআইবি বর্তমানে সরকারের পুরো মেয়াদ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রস্তুত করছে। দেশের দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “৫৪ বছরের জঞ্জাল, বিশেষ করে গত ১৫ বছরের দুর্বলতা কাটিয়ে এক লাফে সুশাসিত, গণতান্ত্রিক, দুর্নীতিমুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গড়ে ফেলা কোনো জাদুর কাঠির কাজ নয়। এটি দীর্ঘ একটি প্রক্রিয়া—এটি মেনে নিতে হবে।”
ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, এখন পরিবর্তন ও ইতিবাচক সংস্কারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে রাজনৈতিক দলগুলো সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার ভাষায়, “রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনের আগে ও পরে তাদের কার্যক্রমে অর্থ, পেশি ও ধর্মের প্রভাব কতটা পড়বে। ফলাফল অনেকটাই এর ওপর নির্ভর করবে।”
সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি নেতৃবৃন্দ নির্বাচনি প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে শাসনব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন, “এটা অনেকটা রাজনৈতিক দলের সংস্কারের মতো; এটা ভেতর থেকে আসতে হবে এবং তাদের নিজেদেরই করতে হবে। ব্যবসায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারলে চূড়ান্তভাবে ব্যবসায়ীরাই লাভবান হবেন। তা না হলে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লাভবান হন, অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। যেটা গত ১৫ বছরে দেখা গেছে।এর ফলে রাষ্ট্রকাঠামো দখল হয়েছে। ব্যবসায় খাতের একাংশ কর্তৃত্ববাদ বিকাশের একটি পিলার হিসেবে কাজ করেছে। সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেটাই আমরা চাই।”
আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকা উচিত এমন ৫২টি প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন টিআইবি। এর মধ্যে প্রথম সাতটি প্রস্তাব পড়ে শোনান ড. ইফতেখারুজ্জামান।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে: জুলাই জাতীয় সনদ ও এর বাইরে থাকা সংস্কার কমিশনগুলোর বিভিন্ন সুপারিশ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করা; জুলাই সনদসহ অন্যান্য সংস্কার কমিশনের ওপর ভিত্তি করে যেসব অধ্যাদেশ জারি ও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো ও কার্যকর ও অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থান ও কর্তৃত্ববাদী সরকারের আমলের সব হত্যা, অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অব্যাহত রাখা।
বাকি প্রস্তাবগুলো পড়ে শোনান টিআইবির জ্যেষ্ঠ গবেষণা কর্মকর্তা মো. জুলকারনাইন এবং গবেষণা ও নীতি পরিচালক মোহাম্মদ বদিউজ্জামান। এসব প্রস্তাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ, দলের কার্যক্রমে গণতন্ত্র, সুশাসন ও শুদ্ধাচারের চর্চা, সম–অধিকার ও ন্যায়বিচার, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যাংক–আর্থিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবেশ ও জলবায়ু খাতে সংস্কার, বেসরকারি খাতে সুশাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার করার আহ্বান জানানো হয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “গত ৫৪ বছর ও ১৫ বছরের জঞ্জাল কাটিয়ে উঠে চট করে দুর্নীতিমুক্ত দেশ করা সম্ভব নয়। এর জন্য সময় লাগবে। দেশে দুর্নীতি বেড়েছে নাকি কমেছে, সে হিসাব টিআইবি এখনও করেনি। তবে দুর্নীতি অব্যাহত আছে।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



