জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই পরিবর্তনের (৫ আগস্ট) পরে যখন আমরা দুই-একটা জায়গায় খোঁজখবর নেই, অফিস আদালতে খোঁজখবর নেই— ভয়াবহ কাণ্ড, ভয়াবহ দুর্নীতি, চুরি, ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া সরকারি আমলাদের মধ্যে আর কোনও চিন্তা নেই। এটা বলতে আমি বাধ্য হলাম।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের উদ্যোগে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী ও জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের ১২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’ উপলক্ষে আয়োজিত গ্রন্থ আড্ডায় তিনি এসব কথা বলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে আন্দোলন ও বিভিন্ন দাবিদাওয়া প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কখনও ধৈর্য হারাবেন না, আশা হারাবেন না। আমি কেন জানি না, আমাদের প্রত্যাশা অনেক কিন্তু আমাদের ধৈর্য একেবারেই কম। এই তো মাত্র কয়েকটা মাস হয়েছে। এরমধ্যেই আমরা পাগল হয়ে গেছি সব। আমাদের সরকার অনেক ভুলত্রুটি করছে। ভুলতো করবেই তারা তো আর সরকারে ছিল না, রাজনীতি করেনি, রাজনীতি বিষয়টা তারা জানে না, করেনি, ঠিক না? তাদেরকে তো সে সময়টা দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আমলেতো কেউ একটা কথা বলারও সুযোগ পায়নি, সাহসও কেউ পায়নি। আর এখন যেহেতু একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে, সবাই ঝাপিয়ে পড়ছে।
সরকারের সমালোচনা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এটাতে লাভটা কার? এটাতে এই দেশের, এই সমাজের, এই মানুষের কোনও লাভ হবে না। ধৈর্য ধরে সামনের দিকে যাই, অনেক ত্রুটি আছে, ত্রুটিতো তারা নিয়েই এসেছে, একেবারে ধ্বংসপ্রাপ্ত জঞ্জাল। আমার চিন্তায়ও ছিল না এটা এত খারাপ হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এটার পরিবর্তন তো আপনার একদিনে হবে না, এত দ্রুত হবে না। ধৈর্য ধরেন, একটা গণতান্ত্রিক স্ট্রাকচার খারা হোক, সেই স্ট্রাকচার হলে নিশ্চয় আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবো।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মধ্যে ধৈর্য ব্যাপারটা ছিল। দূরদৃষ্টি-সম্পন্ন চিন্তাভাবনাগুলোকে তিনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন, প্রথমেই তিনি যুদ্ধ শুরু করে দেননি। প্রথমে শুনেছেন, সব বিজ্ঞ বিজ্ঞ মানুষদের নিয়ে বসেছেন।
বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় এই নেতা বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে সবসময়, হটকারিতা করা যাবে না। অতি বিপ্লবী কোনও চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সমাজে আরও অস্থিরতা, চরম একটা অবস্থা সৃষ্টি করা হয়তো কোরনাভাবেই কাম্য হবে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করাটা বোধহয় ঠিক হবে না, এই কথাটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মাহবুব উল্লাহ (অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ) ভাইয়েরা থিওরি পড়াতেন, তার মধ্যে একটা কথা ছিল রোমান্টিসিজম। রোমান্টিসিজম মানে শুধু প্রেম নয় বিপ্লবের প্রতি প্রেম। অর্থাৎ এই মুহূর্তে আমি সব পালটে দেবো, এই মুহূর্তে আমি সব দখল করবো, অন্যায় রোধ করবো, এটা হয় না। আপনাকে ধাপে ধাপে করতে হবে।
সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের এখানে এখন যে অস্থিরতা চলছে, এই অবস্থা যদি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, আমাদেরকে ধৈর্য ধরে পা ফেলতে হবে। এমন কিছু আমরা করবো না, যাতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে আরও বিপদ যেন আমরা ডেকে না আনি। এই বিষয়গুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একটা কথা আমি আবারও বলি, আমাকে কেউ ভুল বুঝবেন না। ‘আপনি এত নির্বাচন নির্বাচন করেন কেন?’ বিশেষ করে ছাত্ররাতো বলেনই। নির্বাচন বলার কারণটা হচ্ছে একটাই, আমি বিশ্বাস করি, আমি জানি না আমার বিশ্বাসটা ভুল কি না, যেকোনও নির্বাচিত সরকার কিন্তু একটা অনির্বাচিত সরকারের চেয়ে ভালো। আমার অ্যাক্সেস থাকে, আমি যেতে পারি, কথা বলতে পারি।
বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা আমাদের পড়ালেখা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদম শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একদম শেষ। সেটার মধ্যে কোনও কিছু অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে একদম ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত সব জায়গায় দেখবেন যে, এত নিচে চলে গেছে তার মান, এটা বলে বুঝানো যাবে না। একেবারে কুড়িগ্রামের চরের মধ্যে যে প্রাইমারি স্কুল বা হাই স্কলে কী শিক্ষা পাচ্ছে, সেটার খবর আমরা অনেকেই রাখি না।
জিয়া স্মৃতি পাঠাগারের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জহির দিপ্তীর সঞ্চালনায় এসময় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, নরসিংদী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুরে এলাহী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।