শরৎ শেষ না হতেই উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে কড়া নাড়ছে শীত। গত কয়েক দিনে এ জনপদে সকালের কুয়াশা জানান দিচ্ছে ঋতুচক্রে হেমন্তের আগেই শীতের আগমন বার্তা। তবে কয়েক দিনের গোলমেলে আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে স্থানীয়দের। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা আর তার পরেই সূর্যদেবের কড়া তাপ।
মাঝেমধ্যে হচ্ছে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বর্ষণ। সব মিলিয়ে এ এক অন্য ঋতুবৈচিত্র্যের খেলা। অবশ্য প্রকৃতিপ্রেমীরা বেশ উপভোগ করছেন এ সময়টি। শীতের আবহ ঘিরে এরই মধ্যে পঞ্চগড়ে পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। শীতের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে স্থানীয়রাও কাঁথা-কম্বল বের করতে শুরু করেছে। শীতকালকে ঘিরে পর্যটনের বড় সম্ভাবনা দেখছে জেলা প্রশাসন।
গত কয়েক দিন ধরেই পঞ্চগড়ে সকাল বেলায় কখনো হালকা আবার কখনো ঘন কুয়াশা পড়ছিল। গতকাল শুক্রবার ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় পথ ঘাট প্রান্তর। ছোট-বড় সব সড়ক ও মহাসড়কে দূরপাল্লাসহ সব যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করতে হয়। এরই মধ্যে কৃষক, শ্রমজীবীসহ মুসল্লিরা পথে বের হন। সকাল সাড়ে ৭টায় দেখা মেলে সূর্যের। তাপ বাড়তে থাকলে ছাতা মাথায় দিয়ে পথঘাটে বের হতে হয় মানুষকে। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমতে থাকে। গতকাল এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়।
অবশ্য প্রকৃতির এই আচরণকে স্বাভাবিক মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পঞ্চগড় জেলা শহরের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের পঞ্চগড়ে এখন দার্জিলিংয়ের মতো আবহাওয়া। সকালে কুয়াশা, দিনে রোদ আর মাঝেমধ্যে হচ্ছে বৃষ্টিও।’
আশরাফুল আলম বলেন, ‘এখনো পুরো হেমন্তকাল বাকি। তার আগেই শীতের আগমন বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। হিমালয় কাছে হওয়ায় এ জেলায় শীত আসে একটু আগেই। আবার শীত যায়ও সবার পরে। এখনকার শীত উপভোগের। তবে এর চেয়ে বেশি হলে এ এলাকার মানুষের জন্য তা কষ্টকর হয়ে যায়।’
ঢাকা থেকে আসা জোবায়ের হাসান বলেন, ‘শীত এলে পঞ্চগড় হয়ে ওঠে হিমালয়কন্যা। শিশির ঝরা ঘাসে হাঁটতে ভালো লাগে। এই শীত উপভোগ করার জন্যই পঞ্চগড়ে এসেছি। আশা ছিল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখব। আকাশ পরিষ্কার না থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি। তবে পঞ্চগড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপে মুগ্ধ হয়েছি।’
দিনাজপুর সদর উপজেলার খোদমাধবপুর মিস্ত্রিপাড়া জামে মসজিদে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লি মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আশ্বিন মাসের শেষে ঘন কুশায়া পড়ে গেছে, শীত হয়তো এসে গেছে। একদিকে বৃষ্টি, আরেক দিকে গরম ও কুয়াশা। এসব মিলিয়েই আমাদের এই বাংলাদেশ।’
দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, কয়েক দিনের সামান্য বৃষ্টির কারণে আজ শুক্রবার ভোর থেকে ঘন কুয়াশা পড়েছিল। এ সময় এমন কুয়াশা স্বাভাবিক বিষয়। তবে দিনাজপুরের তাপমাত্রা ২৩ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে।’
পঞ্চগড় পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের ঋতুবৈচিত্র্য পাল্টে যাচ্ছে। যে সময় যেটা হওয়ার কথা সেটা হচ্ছে না। শরতকালেই শীতের রূপ দেখা যাচ্ছে। আবার দিনে অন্যচিত্র। মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাতও হচ্ছে। এগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, উত্তরে হিমালয় কাছে হওয়ায় পঞ্চগড়ে শীতের প্রকোপ বেশি। গত কয়েক দিনে দিনের বেলায় কড়া রোদ থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা কমে আসছে। একই সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়ছে। এটি শীতের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানান, ‘শীতকে ঘিরে আমরা পঞ্চগড়ের বড় পর্যটনের সম্ভাবনা দেখছি। এই সময় পরিষ্কার আকাশ থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘাও দেখা যায়। আর পর্যটকরা পঞ্চগড়ের সমতলের চাশিল্পসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান ঘুরেও মন জুড়ায়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।