আমরা জানি, সব কিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। আমরা জানি, মহাবিশ্বের সবটা আমরা দেখতে পাই না। যেটুকু দেখতে পাই, তাকে আমরা বলি ‘দৃশ্যমান মহাবিশ্ব’। তাহলে, এই দৃশ্যমান মহাবিশ্বে ঠিক কয়টা পরমাণু আছে, এটা কি আসলেই হিসাব করা সম্ভব? কিংবা কোনোভাবে সম্ভব এর উত্তর বের করা? কীভাবে? একটা একটা করে গুণে বের করা যাবে না নিশ্চয়ই। সেটা যে করা যাবে না, তা তো বলা বাহুল্য। কিন্তু একটা ধারণা কি অন্তত পাওয়া সম্ভব? উত্তরটা আমরা দেখব। শুরুটা করা যাক আমাদের দেহ থেকেই।
দ্য গার্ডিয়ান-এর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, আমাদের দেহে ৭ অক্টালিয়ন পরমাণু আছে। এক অক্টালিয়ন মানে, ১-এর পরে ২৭টা শূন্য। কোটিতে ১-এর পরে মাত্র ৭টা শূন্য থাকে (বিশ্বাস না হলে গুণেই দেখুন এক কোটি—১,০০,০০,০০০)। তাহলে অক্টালিয়ন কত বড়, হয়তো অনুভব করতে পারছেন। বৈজ্ঞানিকভাবে লেখা হয় ৭×১০২৭। এটুকু শুনে হয়তো ভাবতে পারেন, মহাবিশ্বে পরমাণুর হিসাব করা কীভাবে সম্ভব! এ তো নিছক পাগলামি! না না, এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। তারচেয়ে চলুন, দৃশ্যমান মহাবিশ্বের বিষয়টা একটু বুঝে নেওয়া যাক।
আমরা জানি, মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছে ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে। কাজেই আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, পৃথিবী থেকে চারদিকে তাকালে আমরা শুধু ১৩.৮ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত দেখতে পাই। কিন্তু মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। সে জন্য পৃথিবী থেকে যেকোনো দিকে তাকালে আমরা ৪৬.৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ পর্যন্ত দেখতে পাই। কিন্তু দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কথা জানলেই তো হবে না, এর মধ্যে কতটুকু পদার্থ আছে, সেটাও জানতে হবে।
ঘটনা হলো, মহাবিশ্বের বেশির ভাগটাই আমাদের অজানা। তাহলে, কতটুকু জানি আমরা। মাত্র ৫% এর মতো। আমাদের জানা সব পদার্থ—আমরা, সব প্রাণ, জড়পদার্থ, পৃথিবী, গ্রহ-উপগ্রহ-নক্ষত্র, গ্যালাক্সি বা গ্যালাক্সিপুঞ্জ—এই সবই মাত্র ৫%-এর মধ্যে। বাকি ৯৫% আমাদের অজানা। এর মধ্যে আছে কিছু অজানা ভর। অজানার ইংরেজি করা হয়েছে ডার্ক, তাই এই ভরকে বলা হয় ডার্ক ম্যাটার। আর অজানা একধরনের শক্তিও আছে, যাকে বলা হয় ডার্ক এনার্জি। এগুলো—মানে এই অজানা ভর ও শক্তি পরমাণু দিয়ে তৈরি নয়। অন্তত আমাদের জানা পরমাণু দিয়ে তৈরি না এগুলো।
আমাদের জানা ৫%-এর মধ্যে শুধু ভর নয়, শক্তিও আছে। আলবার্ট আইনস্টাইনের বিখ্যাত E = mc2 সূত্র থেকে আমরা জানি, দুটো সমতুল্য। তবে মহাশূন্যে প্রতিমুহূর্তে শক্তি থেকে কণা তৈরি হয়। এগুলো জোড়া কণা—একটি পদার্থের, আরেকটি প্রতিপদার্থের। এগুলো আবার মুহূর্তেই ধ্বংসও হয়ে যায়। কণাদের এই সৃষ্টি ও ধ্বংসের হার সমান, অন্তত এখন পর্যন্ত আমরা তাই জানি। সে হিসেবে এটুকু বলা যায়, মহাবিশ্বে মোট পদার্থের পরিমাণ অসীম নয়। সসীম।
এবারে আমরা বিষয়টাকে একটু সরল করে নিই। প্রথমত, মহাবিশ্বে পদার্থ ছড়িয়ে আছে সুষমভাবে। কারণ, আমরা জানি, মহাবিশ্ব সবদিকে, সবখানে একইরকম। দ্বিতীয়ত, আমরা ধরে নেব, সব পদার্থ নক্ষত্রের ভেতরেই আছে। আসলে তো তা নয়। তবে সৌরজগতের কথাই যদি ধরি, সূর্যই এর ৯৯.৮৬% ভর দখল করে আছে।
তা ছাড়া, গ্রহদের প্রতিটিকে হিসাবে ধরে কাজটা করাও কঠিন। সব মিলে, শুধু নক্ষত্রে সবটা ভর ধরে নিলে হিসাবটা একটু সরল হয়ে আসবে, তবে মহাবিশ্বের বিশাল স্কেলে সেটা খুব বেশি পার্থক্য আসলে গড়ে দেবে না। তিন, এবারে আমরা একটু বড় একটা লাফই দেব। ধরে নেব, মহাবিশ্বের সব পরমাণু আসলে হাইড্রোজেনের পরমাণু। এটাও ঠিক নয়, তবে ৯০% পরমাণুই যেহেতু হাইড্রোজেনের, সরল করার জন্য এটুকু আমরা করতেই পারি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।