জুমবাংলা ডেস্ক: গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্য ‘ধনীর চিড়া’। এ চিড়ার দাম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা। কখনো কখনো তা ৫০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। ঐতিহ্যবাহী ‘ধনীর চিড়া’ খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল সুদূর ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। এর স্বাদ আর সুগন্ধ জয় করেছিল ব্রিটিশ রানি ভিক্টোরিয়ার মন।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সূত্রাপুর ইউনিয়নের বারবাড়ীয়া গ্রামের শ্রী দুর্লভ সরকারের স্ত্রী শ্রীমতি ধনী রানি সরকার এ চিড়ার উদ্ভাবক। তার নামানুসারেই বাংলার সেই বিখ্যাত চিড়ার নাম হয় ‘ধনীর চিড়া’।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৮৫০ সালের দিকে অভাবগ্রস্ত হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ধনী রানি সরকার। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় ধনী রানি সরকারের স্বামী দুর্লভ সরকার মারা যান। রেখে যান দুটি সন্তান। এ অবস্থায় চরম হতাশায় পড়েন ধনী রানি। উপায়ান্তর না দেখে তিনি সাহায্যের জন্য চলে গিয়েছিলেন বলিয়াদী জমিদার বাড়িতে। তখন জমিদার সাহেব সাহায্য হিসেবে কিছু ধান দিয়েছিলেন তাকে। ধনী চিন্তা করলেন, ধান থেকে চাল করে ভাত রান্না করলে কিছুদিনের মধ্যে তা শেষ হয়ে যাবে। তাই, দীর্ঘদিন খাওয়ার আশায় ঢেঁকিতে চিড়া কুটেন ধনী রানি। ঢেঁকিতে চিড়া কুটে বিস্মিত হন তিনি—এই ধানে এত সুস্বাদু চিড়া হয়! সব ধানের চিড়া না কুটে কিছু ধান বীজ হিসেবে বুনেন এবং প্রতিবেশীদেরও কিছু ধানের বীজ দেন। এভাবেই পুরো এলাকায় বিস্তার লাভ করে এ ধানের জাত।
কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পলাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারসহ কয়েকটি দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে ধনীর চিড়া। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদাও আছে বেশ। বাজারে প্রকারভেদে সাধারণ চিড়ি বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়, সেখানে ধনীর চিড়া বিক্রি করা হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায়।
পলাশ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের মালিক গোবিন্দ ঘোষ বলেন, বাজারে সাধারণ চিড়ার দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সেখানে ধনীর চিড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি। তার পরও এর ব্যাপক চাহিদা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ চিড়া নিয়ে যাচ্ছেন। অল্প কয়েকটি পরিবার এই চিড়া তৈরি করায় ব্যাপক চাহিদা থাকলেও তারা চাহিদামতো সরবরাহ করতে পারেন না।
‘গাজীপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ বই থেকে জানা যায়, ১৮৮৬ সালের দিকে রানি ভিক্টোরিয়ার জন্মদিনে তৎকালীন ঢাকার গভর্নর উপঢৌকন হিসাবে কয়েক মণ ধনীর চিড়া পাঠান। জন্মদিনে অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের অতিথিরা এ চিড়ার মান ও স্বাদের প্রশংসা করেন। পরে রানি ভিক্টোরিয়া চিড়া প্রস্তুতকারীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু, ধনী রানি ভয়ে যাননি। কেননা, জনশ্রুতি আছে—ঢাকার মসলিন কাপড় যখন বিখ্যাত হয়েছিল, তখন ইংরেজরা কারিগরদের আঙুল কেটে দিয়েছিল, যাতে তারা আর মসলিন না বানাতে পারেন। রানি ভিক্টোরিয়া আবার আমন্ত্রণ জানালে ধনী রানি শর্ত দেন— যদি তাকে বিনা পয়সায় গয়া-কাশি ও বৃন্দাবন যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি রানি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন। তার প্রস্তাব গ্রহণ করেন রানি ভিক্টোরিয়া। ১৮৮৭ সালে ব্রিটেনের রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে ধনী রানি গয়া-কাশি ও বৃন্দাবনসহ ভারত সফর করেন।
ধনীর চিড়া প্রস্তুতকারী যতীন্দ্র সরকার জানান, নয়া শাইল ধান দিয়ে এ চিড়া তৈরি করা হয়। সে ধান এখন বেশি পাওয়া যায় না। যতটুকু পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। এ কারণে চাহিদামতো চিড়া তৈরি করা সম্ভব হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।