জুমবাংলা ডেস্ক : মদিনার প্রাণকেন্দ্রে একটি ঐতিহাসিক কূপ রয়েছে। হজরত উসমান রা. সেটি খনন করেছিলেন। মুসলমানদের কাছে এর তাৎপর্য অনেক। সম্প্রতি কূপটি সংস্কার করা হয়েছে। এর গভীরতা ও গৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য দীর্ঘ যাত্রার মধ্য দিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পুনরুদ্ধার প্রকল্পটি বড় উদ্যোগের একটি অংশ। ব্যাপক উদ্যোগের লক্ষ্য হলো সমগ্র অঞ্চলজুড়ে ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে পুনর্বাসন করা। যেন দর্শনার্থীদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করা যায় এবং সৌদি আরবের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা করা যায়।
কূপটি মদিনার আল বাকি কবরস্থানে অবস্থিত। হজরত উসমান রা. নিজ শাসনামলে এটি খনন করেন। শুরুর দিকে এর পানি দিয়ে মুসলমানরা ওজু করতো। এর পানি দিয়েই নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করতো।
মহানবী সা.-এর সময়ে হযরত উসমান রা. এক ইহুদির কাছ থেকে ওই কূপটি ক্রয় করে সর্বসাধারণের জন্য ওয়াকফ করে দেন। সৌদি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা ওই কূপের চারপাশে গড়ে ওঠা খেজুরবাগানে আজও কূপের পানি দিয়েই সেচকার্য সমাধা করা হয়।
প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত থাকা হযরত উসমানের রা. এই কূপের আসল নাম ‘বিরেরুমা’ বা রুমা কূপ। কূপটির মালিক রুমা নামক এক ব্যক্তির নামানুসারে এটাকে রুমা কূপ বলা হতো। হযরত উসমান রা. ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে কূপটি ক্রয় করে রসুলকে সা. বলেন, আমি কূপটি কিনে নিয়েছি। আজ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত এই কূপের পানি সমস্ত মুসলমানের জন্য উন্মুক্ত করে দিলাম।
আল্লাহও তার এ দানকে চিরদিনের জন্য কবুল করে নিয়েছেন। দেড় হাজার বছরেও এ কূপের পানি শুখিয়ে যায়নি। এখনো আগের মত স্রোতে বহমান আছে তার স্বচ্ছ শীতল পানি।
ঐতিহাসিক রুমা কূপের দীর্ঘ ঘটনা রয়েছে। কাফেরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলিমরা মদিনায় হিজরত করার পর সেখানে খাবার পানির সংকটে পড়ে। মদিনায় এক ইহুদির একটি কূপ ছিল।
সে মুসলিমদের কাছে চড়া মূল্যে পানি বিক্রি করত। কূপটির নাম ছিল রুমা। মহানবী সা. বিষয়টি জানতে পেরে ঘোষণা দিলেন, ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছে যে এই কূপটি কিনে মুসলিমদের জন্য ওয়াকফ করে দেবে? এটা যে করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে একটি ঝরনা দান করবেন.
ঘোষণা শুনে হযরত উসমান রা. ইহুদির কাছে কূপ বিক্রয়ের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু ইহুদি বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানাল। কোনোভাবেই বিক্রি করতে চাইল না। হযরত উসমান রা. অর্ধেক কূপ বিক্রির প্রস্তাব করলেন; এভাবে যে কূপ থেকে একদিন ইহুদি পানি নেবে অন্যদিন তিনি পানি নিবেন। ইহুদি ব্যক্তি এতে সম্মত হলো।
হযরত উসমান রা. কূপ কেনার পর বিনা মূল্যে পানি বিতরণ শুরু করেন, এতে ইহুদির পানির ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলো। অপারগ হয়ে পুরো কূপ বিক্রি করে দিলেন। ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে উসমান রা. পুরো কূপের মালিকানা লাভ করেন। কূপের মালিক হয়েই তিনি ঘোষণা করলেন, মুসলিমদের জন্য এ কূপের পানি কিয়ামত পর্যন্ত ওয়াকফ থাকবে। তা থেকে মুসলমানরা বিনা মূল্যেই পানি পান করবে। কূপের আশপাশের জায়গাও কূপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছুকাল পরে সেখানে বেশ কিছু খেজুরগাছ বড় হয়ে উঠল।
উল্লেখ্য, হজরত উসমান বিন আফফান রা. ইসলামের তৃতীয় খলিফা। তিনি ৬৪৪ থেকে ৬৫৬ সাল পর্যন্ত খেলাফতের দায়িত্ব শামাল দিয়েছেন।
সূত্র : দি ইসলামিক ইনফরমেশন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।