জুমবাংলা ডেস্ক: গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খন্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন দম্পতি ২০২০ সালে প্রথমবার দেশে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তার বাড়ির পাশে এক বিঘা জমিতে বিশাল বাগানে চাষ করেছেন ১২ জাতের ৬ রঙের ৭০ হাজার টিউলিপ। বিস্তৃত জায়গা জুড়ে শুধু বাহারী রঙিন ফুলের খেলা। এ যেন দেশের বুকে এক টুকরো নেদারল্যান্ডস।
টিউলিপ ফুল ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হয় নেদারল্যান্ডসে। টিউলিপকে নিয়েই সেখানে গড়ে উঠেছে শিল্প। তাই দেশটি প্রতি বছর পালন করে টিউলিপ উৎসব। আর তুরস্কের জাতীয় ফুলও এই টিউলিপ। নানা রংয়ের টিউলিপ মুগ্ধতা ছড়ায় চারপাশে, দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। শীতপ্রধান দেশগুলোতে টিউলিপ উৎপাদন বেশি হয়। এই টিউলিপ ভারতের কাশ্মীর, নেদারল্যান্ডস, তুরস্কসহ শীত প্রধান দেশে ফুটতো টিউলিপ। বাংলাদেশে টিউলিপ দেখা যেতো না। তবে এখন আর টিউলিপ দর্শনে বিদেশে যেতে হবে না কাউকে! চাইলে দেশেই ঘুরে যেতে পারবেন টিউলিপ রাজ্য থেকে।
বিশ্বে ফুল উৎপাদনের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান সন্তোষজনক জায়গায় না থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে দেশে টিউলিপ ফুলের উৎপাদন বিস্ময় জাগিয়েছে। ষড়ঋতুর এই দেশে শীতকালের বাহারি টিউলিপ চাষে এসেছে ব্যাপক সফলতা। এ চাষ প্রতিনিয়ত সম্প্রসারণ হচ্ছে সারাদেশে, শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনও।
বাগান পরিদর্শনে আসেন নেদারল্যান্ডের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা
বাংলাদেশে টিউলিপ ফুলের প্রথম চাষ করেন দেলোয়ার হোসেন। তিনি জানান, গত ৯ জানুয়ারি বাল্ব রোপণের পর ৩০ জানুয়ারি নাগাদ ২১ দিনের মাথায় ফুল ফুটে বের হয়। এ দম্পতি ১৫ বছর বছর ধরে ফুল ব্যবসায় জড়িত। তখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী, সচিব, সাংসদসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন। বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ উৎপাদন দেখতে বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন টিউলিপের দেশ নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশে কর্মরত কূটনীতিক। এর আগে গোলাপ, জার্বেরা, লিলিসহ নানা জাতের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আসছিলেন তারা। মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স নামে ফুল চাষের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় ফুল ছাড়াও তাদের প্রকল্পে ছিল ব্যাপক আকারে স্ট্রবেরি ও জি নাইন কলার চাষ। ফুল ও ফল উৎপাদনের পাশাপাশি তারা এগুলোর বীজ স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত পথও দেখিয়ে দেন। প্রথম বছর তাদের টিউলিপ বাগানের আয়তনের ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সফলতা পেয়ে এ বছর তারা এক বিঘা জমিতে ৭০ হাজারের বেশি টিউলিপ ফুলের চাষ করেছেন। টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল-ফলের এই প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫ নারী ও পুরুষ। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করেন তারা।
বাগানের আরেক নারী উদ্যোক্তা সেলিনা হোসেন জানান, টিউলিপ ফুলের গাছগুলো ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এগুলো টবে সাজিয়ে রাখার জন্য আদর্শ ফুল। একেকটি গাছ থেকে একটি ফুল পাওয়া যায়। পৃথিবীতে টিউলিপ ফুলের ১৫০টির বেশি জাত আছে। টিউলিপ ফুল চাষে সবচেয়ে সফল দেশের নাম নেদারল্যান্ডস। সেখানে এই ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি শীতপ্রধান দেশেও টিউলিপের চাষ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ ফুল চাষ নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করেছেন তারা। এরপর ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষে সফলতা দেখেন। পরবর্তীতে ২০২১, ২০২২ ও সর্বশেষ ২০২৩ সালে তারা ক্রমান্বয়ে ফুলটির চাষের আওতা বাড়িয়েছেন। এবছর পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে নেমেছেন তারা। বাগান থেকে কেটে ফুল বিক্রির পাশাপাশি এ বছর পটেও টিউলিপ বিক্রি করছেন। তিন থেকে পাঁচটি টিউলিপ গাছসহ এসব পটের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।
দেলোয়ার হোসেন বলেন, নেদারল্যান্ডস এখন টিউলিপ ফুল রপ্তানি করছে। আমরা চেষ্টা করলে ব্যাপকহারে এই ফুল উৎপাদন করে রপ্তানির খাতায় নাম লেখানো সম্ভব।
দেলোয়ার জানান, এ বছর পঞ্চগড়, যশোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, রংপুর ও জামালপুরের কয়েকটি এলাকায় তিনি টিউলিপ বাল্ব সরবরাহ করেছেন। এসব বাগানে তিনি নিয়মিত টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছেন। তার আশা, একদিন বাংলাদেশের ফুলপ্রেমীদের বাড়ির আঙিনায় জায়গা করে নিবে টিউলিপ। দেলোয়ারের টিউলিপ বাগান দেখতে প্রতিদিনই আসছেন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুলচাষী ও ব্যবসায়ীরা। এদের একজন কামরুল হাসান, এসেছেন ময়মনসিংহের ফুলবাড়ি এলাকা থেকে। তিনি জানান, টিউলিপ বর্তমানে বাংলাদেশের সাড়া জাগানো ফুল। এর চাষ ব্যাপক ভাবে হলে বাংলাদেশের এর বিপ্লব ঘটতে পারে। তার টিউলিট চাষ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে দেলোয়ার এর কাছে এসেছি। ফুলচাষী বুলবুল হাসান এসেছেন নরসিংদী থেকে। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ফুল ও ফলসহ নানা ধরনের গাছের চারা বিক্রি করি।
শ্রীপুরে টিউলিপ ফুটার খবরে অনেক কাস্টমার আমাদের নার্সারিতে টিউলিপ ফুলের চারা খুঁজতে আসেন। তাই আমি চেষ্টা করছি কয়েক টি টিউলিপের চারা কিনে নিয়ে বিক্রি করার জন্য। শনিবার সকালে এ টিউলিপ বাগান পরিদর্শনে আসেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা। তিনি বাগান দেখে উচ্ছ্বসিত হন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে টিউলিপের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ ফুল চাষি দম্পতিকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, টিউলিপ বাংলাদেশের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি করবে। নেদারল্যান্ড ও ইউরোপে এ টিউলিপের ব্যাপক বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের নারী ও পুরুষরা এ টিউলিপ চাষ করে তারা স্বাবলম্বী হয়ে টিউলিপ নিয়ে বাজার তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে টিউলিপ চাষে নেদারল্যান্ডস সহযোগিতা করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।