দেশেই চাষ সম্ভব বিশ্বের অন্যতম দামি মসলা ভ্যানিলার, প্রতি কেজির দাম ৫০ হাজার!
জুমবাংলা ডেস্ক: পৃথিবীর সবচেয়ে দামি মসলা জাফরান। আর ঠিক তার পরের অবস্থান ভ্যানিলার। পরাগায়ন জটিলতার কারণে দেশে উৎপাদন না হওয়ায় আমদানির ওপরই নির্ভর করে থাকতে হয় বাংলাদেশকে। তবে এ জটিলতা কাটাতে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে দেশের মাটিতেই বাণিজ্যিকভাবে ফলানোর টেকনোলজি উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন রাজধানীর শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম জামাল উদ্দিন।
২০০৪ সাল থেকে ভ্যানিলার চাষপদ্ধতি ও সহজতর পরাগায়ন নিয়ে গবেষণার পর সফল হন এ গবেষক। জাফরানের পরই দামি এ মসলা ‘ব্ল্যাক গোল্ড’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বজুড়ে। অধ্যাপক জামালের মতে, এ মসলার বাণিজ্যিক উৎপাদন প্রভাব রাখবে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।
ইন্দোনেশিয়া ও মাদাগাস্কার বিশ্বের সর্বোচ্চ ভ্যানিলা উৎপাদনকারী দেশ হলেও ইতোমধ্যে ভারতেও শুরু হয়েছে এর বাণিজ্যিক চাষ। বেকারি শিল্প ও নির্যাস শিল্পের অন্যতম উপাদান ভ্যানিলা পডের মূল্য কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাই ভ্যানিলার বাণিজ্যিক উৎপাদনে রয়েছে অপার সম্ভাবনা।
ভ্যানিলা মূলত অর্কিডজাতীয় গাছ, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উচ্চতায় আর্দ্র জলবায়ুতে জন্মায়। ছায়া পছন্দকারী উদ্ভিদটি মাটির সংস্পর্শে যাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রেখে খুঁটির সঙ্গে নেট দিয়ে কোকোডাস্ট বেঁধে অবলম্বন তৈরি করে দিতে হবে। গাছটি বেড়ে ওঠার সময় পরাগায়নের সুবিধার জন্য হাত দিয়ে ওঠানামা করিয়ে দিতে হবে।
ভ্যানিলা উৎপাদনের প্রতিবন্ধকতা হলো এর ফুলের বৈচিত্র্যময় গঠন, যা স্বাভাবিক পরাগায়নে বাধা দেয়। সাধারণত প্রাকৃতিক পরাগায়নের উৎপাদন খুবই কম হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে কৃত্রিম পরাগায়ন করা হয়ে থাকে। ভ্যানিলা ফুলের পরাগধানী ও গর্ভমুণ্ডের মাঝে ঠোঁটসদৃশ একটি পর্দা (রোস্টেলাম) থাকায় পরাগরেণু গর্ভমুণ্ডে পতিত হতে পারে না।
তবে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন জানান, পর্দাটি নিডল দিয়ে সরিয়ে সামান্য চাপ দিলেই পরাগায়ন সম্পন্ন হয়ে যাবে। কাজটি করতে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন। একজন দক্ষ শ্রমিক দিনে এক থেকে দেড় হাজার ফুল পরাগায়ন করতে পারবেন। পরাগায়ন থেকে পড পরিপক্ব হতে ৬-৯ মাস সময় লেগে থাকে। বছরে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৬০০ কেজি কিউরড পড সংগ্রহ করতে পারবেন একজন কৃষক। পড পরিপক্ব হওয়ার শেষের দিকে এতে গ্লুকোভ্যালিন উৎপাদিত হয়, যা ফারমেন্টেশনের সময় গ্লুকোজ ও ভ্যানিলিনে পরিণত হয়। এ থেকেই তৈরি হয় এর মোহনীয় নির্যাস।
কাটিং পদ্ধতিতে বংশবৃদ্ধিপ্রাপ্ত এ উদ্ভিদটি জৈবপদার্থসমৃদ্ধ বেলে-দোআঁশ ঝুরঝুরা মাটিতে হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে মাটির পিএইচ ৫ দশমিক ৩ থেকে ৫ দশমিক ৬ রাখতে হয়। ভ্যানিলা চারা রোপণের ৩ থেকে ৪ বছর পর ফুল আসতে শুরু করে। একেকটি থোকায় ১৫-২০টি ফুল থাকে। প্রতিটি ফুল থেকে একটি করে পড হয়।
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রফতানিও করা যাবে এ অর্থকরী ফসল। এ জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন গবেষক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন। শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে ইতোমধ্যে ভ্যানিলা উৎপাদন করা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে ভ্যানিলা কাটিং করে শতশত ছাদবাগানির মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।