দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে পাবনার ঘি-ছানা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ইংল্যান্ডসহ ১৫ দেশে
জুমবাংলা ডেস্ক: দুগ্ধভাণ্ডার খ্যাত পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে খাঁটি দুধের তৈরি ছানা ও ঘি দেশের গণ্ডি পেড়িয়ে এখন কানাডা, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, দুবাই ও কুয়েতসহ বিশ্বের ১৫টি দেশে রফতানি হচ্ছে। ছানা ও ঘি বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর প্রায় ৪৭ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার ডেমরা গ্রামের রবি কুমার ঘোষ (৪৭) উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বাপ-দাদার ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন। ইচ্ছা ছিল চাকরি অথবা অন্য পেশায় যাওয়ার, কিন্তু জাত ব্যবসা ধরে রাখতে বাবা অমিত কুমার ঘোষের পরামর্শে ছানা-ঘি তৈরির ব্যবসায়ে মনোযোগী হন। দাদা সরোজ কুমার ঘোষ ছিলেন পাবনা অঞ্চলের নামকরা ছানা ও ঘি উৎপাদনকারী।
দীর্ঘদিন কানাডা বসবাসকারী ইমরান খানের সেখানে রয়েছে মিষ্টির দোকান। তার দেশে স্থাপিত কারখানায় প্রতিদিন ১০০ মন দুধের ছানা ও ঘি তৈরি হয়। ছানা থেকে কাঁচা গোল্লা ও সন্দেশ তৈরি করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করেন। প্রতি সপ্তাহে কানাডায়ও পাঠানো হয় বলে জানান কারখানার ব্যবস্থাপক আব্দুর রহমান।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় ছোট-বড় প্রায় ২২ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরু পালন করে দুধ উৎপাদন করা হয়। এ অঞ্চলে প্রতিদিন ১৫ থেকে সাড়ে ১৬ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেড় লাখ লিটার মিল্কভিটা এবং দুই লাখ ২৫ হাজার লিটার আফতাব, আকিজ, প্রাণ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান কিনে থাকে। এ ছাড়া ঘোষেরা (মিষ্টি প্রস্তুতকারক) ৫০ থেকে ৬০ হাজার লিটার দুধ কিনে থাকে।
ফরিদপুরের ডেমড়া গ্রামের দুলাল ঘোষ জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জের ঘোষরা ৮০-৯০টি কারখানায় প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ৪০০ মণ দুধের ছানা তৈরি করেন। ওই পরিমাণ দুধে প্রায় ২৫০ মণ ছানা তৈরি হয়। এর মধ্যে ৩০ থেকে ৩৫ মণ স্থানীয় বাজারে বিক্রির পর বাকি ছানা চলে যায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। তিনি আরো বলেন, এক মণ দুধে আট কেজি ছানা ও তিন কেজি ফ্যাট (ননী) পাওয়া যায়। তিন কেজি ফ্যাট জ্বালিয়ে দেড় কেজি খাঁটি ঘি পাওয়া যায়। এ হিসেবে দু’টি জেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার ২০০ লিটার ঘি তৈরি হয়। দেশে বিদেশে পাবনা-সিরাজগঞ্জের ছানা ও ঘির কদর দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার রঞ্জিত ঘোষ জানান, একজন ছানা উৎপাদক দুধ, জ্বালানি, লেবার ও পরিবহন খরচসহ ৩৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে প্রতিদিন পাঁচ মণ ছানা তৈরি করেন। আর এ ছানা বিক্রি হয় ৩৬ হাজার থেকে ৩৭ হাজার টাকায়। রবি কুমার আক্ষেপ করে জানালেন, প্রায় ১৩ বছরের ব্যবসায়ে বাজারে তার ২২ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। এ রকম কথা জানালেন অন্যান্য উৎপাদকরাও। এতে আসল মূলধনে টান পড়ায় ঠিক মতো ব্যবসা করতে পারছেন না বলে জানান তারা।
এ ছাড়া কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নি¤œমানের ছানা ও ঘি উৎপাদন করে অল্প মূল্যে তা বাজারে বাঘাবাড়ীর গাওয়া ঘি হিসেবে বিক্রি করায় পাবনা-সিরাজগঞ্জে তৈরি আসল ছানা ও ঘির বাজারে কিছুটা ধস নেমেছে। উৎপাদকরা মনে করেন, সরকার ও ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে এ শিল্প থেকে প্রতি বছর বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয়সহ যথেষ্ট কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সূত্র: নয়া দিগন্ত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।