জুমবাংলা ডেস্ক: শরীয়তপুরের জাজিরায় উৎপাদিত সবজির প্রথম চালান যাচ্ছে সুইজারল্যান্ডে। গত মঙ্গলবার জাজিরা থেকে প্রথমে সবজি পাঠানো হয় ঢাকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সেন্ট্রাল প্যাক হাউসে। পরে গতকাল বুধবার রপ্তানি প্রক্রিয়া শেষে সেখান থেকে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। জাজিরার এই সবজি রপ্তানি করল বিএইচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
জাজিরার মুলনা ইউনিয়নের কৃষক খোকন খালাসির কাছ থেকে নেওয়া হয় ৬৫ কেজি কাঁচামরিচ, বিলাশপুরের কৃষক বেলায়েত হোসেনের কাছ থেকে নেওয়া হয় ২০টি লাউ এবং নাওডোবার মাছুদ মাদবরের কাছ থেকে নেওয়া হয় ৭০টি পানিকচু।
জানা গেছে, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০, লাউ ২০ থেকে ২৫ ও পানিকচু ২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামরিচ ৭০, লাউ ৫০ ও পানিকচু ৩৫ টাকা দরে কিনেছে।
ঢাকার অদূরে অবস্থিত শরীয়তপুরের কৃষিপণ্য পদ্মা সেতু হয়ে রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। এর ফলে কৃষকদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে চলেছে। যোগাযোগব্যবস্থার বিড়ম্বনায় উৎপাদিত পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাতে হতো কৃষকদের। পদ্মা সেতুর ফলে এ অঞ্চলের কৃষিতে সুদিন ফিরেছে। কৃষিপণ্য কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে দ্রুত নিয়ে যেতে পারছেন কৃষকরা।
দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় শীতকালীন ও গ্রীষ্ফ্মের সবজি সরবরাহে জাজিরা উপজেলা অন্যতম। এ উপজেলায় সারাবছরই দেখা মেলে বেগুন, লাউ, টমেটো, শসা, করলা, উচ্ছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকচু, পানিকচু, লতিকচু, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, পেঁপে, কাঁচকলা, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা ধরনের সবজির। এ এলাকায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৫ হাজার টন সবজি উৎপাদিত হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় পৌনে ২০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর এখন এই বাজার প্রায় ১০ শতাংশ সম্প্রসারিত হবে বলে দাবি করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
গত ২৭ ডিসেম্বর জাজিরা কৃষি অফিসের উদ্যোগে উপজেলার মিরাশা চাষিবাজারে রপ্তানিবিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে জাজিরা থেকে কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করার আগ্রহ প্রকাশ করে ১৪ প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- গ্লোবাল ট্রেড লিঙ্ক, বি এইচ ইন্টারন্যাশনাল, গ্রিন গ্লোবাল, নাফিজা ইন্টারন্যাশনাল, ইনার ফোর্স ইন্টারন্যাশনাল, জি এল ইন্টারন্যাশনাল, আদাব ইন্টারন্যাশনাল, গ্লোবপ্যাক বিডি, ফনিক্স অ্যাগ্রো বিডি, গ্রিন ইন্টারন্যাশনাল, গ্রুপ ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স ফ্রেশ ইন্টারন্যাশনাল, ফাস্র্দ্ব এক্সপোর্ট বিডি ও কেআরএস ট্রেডিং লিমিটেড রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
জাজিরার কৃষক খোকন খালাসি, মাসুদ মাদবর ও বেলায়েত হোসেন বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ফসল আবাদ করে মিরাশার চাষিবাজারে বিক্রি করেন। স্থানীয় পাইকাররা তাঁদের কৃষিপণ্যের যে দাম দিতেন তা-ই মেনে নিতে হতো। বাজার ভালো থাকলে লাভবান হতেন, আবার লোকসানও গুনতে হতো। পদ্মা সেতু হওয়ার পর এখন বিভিন্ন জেলা ও বিদেশি রপ্তানিকারক পাইকাররা আসেন। আগের তুলনায় সবজির দাম বেশি পাচ্ছেন এবং বিদেশে রপ্তানিকারক পাইকাররা তাঁদের সবজি কিনে বিদেশে রপ্তানি করছেন। নিজেদের আবাদ করা জমির সবজি বিদেশে যাচ্ছে দেখে আনন্দিত তাঁরা। অন্যদিকে স্থানীয় বাজার থেকেও তাঁদের সবজি বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বি এইচ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল ইসলাম কল্লোল জানান, তাঁরা দেশীয় কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করে থাকেন। তিনি সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডে রপ্তানি করেন। রপ্তানির ক্ষেত্রে তাঁরা যোগাযোগব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব বেশি দিয়ে থাকেন। তিনি ১৫ বছর ধরে কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করলেও এই প্রথম জাজিরা থেকে সবজি সুইজারল্যান্ডে পাঠিয়েছেন। বিদেশি বায়াররা জাজিরার সবজি পছন্দ করলে আরও বেশি করে সবজি রপ্তানি করবেন। পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে শরীয়তপুরের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। আগে এই পথে ফেরি দিয়ে নদী পারাপারে অনেক সময় লেগে যেত, তখন জাজিরা থেকে কৃষিপণ্য নিলে ঠিক সময়ে ফ্লাইট ধরাতে পারতেন না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেনের ভাষ্য- পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই তাঁদের লক্ষ্য ছিল জাজিরায় উৎপাদিত নিরাপদ সবজি ও ফলকে আন্তর্জাতিক বাজারে নেওয়া। এরই ধারাবাহিকতায় একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম চালান হিসেবে কিছু সবজি বিদেশে রপ্তানি করছে। তারা স্থানীয় বাজার থেকে গড়ে ২০ শতাংশ বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনছে। এটি ধরে রাখতে পারলে কৃষকরা উচ্চমূল্যে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে পারবে এবং তাঁদের জীবনযাত্রার কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন তাঁদের সহযোগিতা করছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।