জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের চার জেলা মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং চুয়াডাঙ্গায় শুক্রবার পৃথক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন। খবর ইউএনবি’র।
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘরে বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাইক্রোবাস আরোহী ৯ বরযাত্রী নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন একই পরিবারের সদস্য। সেই সাথে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
দুপুর ২টার দিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মাওয়াগামী স্বাধীন এক্সপ্রেসের যাত্রীবাহী বাসের সাথে ঢাকাগামী মাইক্রোবাসের এ সংঘর্ষ হয়।
মাইক্রোবাসযোগে লৌহজং উপজেলার কনকশা এলাকার রুবেল হোসেনের বরযাত্রী যাচ্ছিল ঢাকার কেরানীগঞ্জের কামরাঙ্গীরচর। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বরের বাবা আব্দুর রশীদ ব্যাপারী (৬০), বোন লিজা (২২) ও লিজার মেয়ে তাবাসসুম (৪), ভাবি রুনা আক্তার (২২) ও তার ছেলে তাহসিন (৩) এবং প্রতিবেশী কেরামত আলী (৭০), মফিজুল (৬০) ও মাইক্রোবাসের চালক বিল্লাল (২৮) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। রেনু আক্তার (২৪) নামে এক নারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঘটনার পরপরই স্থানীয় লোকজন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মাইক্রোবাসের ভেতরে আটকা পড়া নিহত ও আহতদের উদ্ধার করেন। এ সময় ৩০ মিনিট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এসব তথ্য দিয়ে শ্রীনগর থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেদায়েতুল ইসলাম ভূইয়া জানান, দুই গাড়ির চার যাত্রীকে আহত অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। গাড়ি দুটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
তিনি বলেন, বেপরোয়া গতির স্বাধীন এক্সপ্রেসের (ঢাকা মেট্রো ব-১৪৮১৯৪) বাসটি ওভারটেক করতে গেলে মাইক্রোবাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। বাসের চালক ও তার সহকারী পলাতক আছেন। তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা জানায়, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা স্বাধীন এক্সপ্রেস পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটির বেপরোয়া গতির কারণে সংঘর্ষে মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো চ-১৫৫৫৬৬) দুমড়ে মুচড়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতদের প্রত্যেকের জন্য পরিবারকে ১০ হাজার টাকা ও আহতদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের সিরাজদিখানের নিমতলায় সকালে বাস চাপায় মিলন শেখ (২২) নামে এক মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। এছাড়া উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. কবির হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন।
নিহত মিলন শেখ উপজেলার চালতিপাড়া গ্রামের শাহ আলম শেখের পুত্র। বাসটি আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছে।
হাসাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল বাসেত জানান, ঢাকাগামী বসুমতি পরিবহন একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে দুজন আহত হন। গুরুতর আহতাবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়ার পথে মিলন শেখ মারা যান। আহত কবির হোসেনকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতের লাশ পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রতিনিধির পাঠানো খবর অনুযায়ী- ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ায় পৃথক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছেন।
নিহতরা হলেন ভ্যানচালক মো. কালাম (৩৫) ও মোটরসাইকেল আরোহী মো. ইসমাইল (২১)।
সীতাকুণ্ডের কুমিরা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুল ইসলাম জানান, সকাল ৮টার দিকে উপজেলার বাড়বকুণ্ডের এসকেএম জুট মিলস এলাকায় একটি ভ্যানগাড়িকে দ্রুতগতির বাস ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে ভ্যানচালক মো. কালাম নিহত হন।
কালাম বাড়বকুণ্ড এলাকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে। বাস নিয়ে চালক পালিয়ে গেছে।
সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে পাইনি। সম্ভবত নিহতের লাশ পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে গেছে।’
দোহাজারী হাইওয়ে থানার এসআই মো. জাহাঙ্গীর জানান, চুনতি মিডওয়ে হোটেলের অদূরে বেলা পৌনে ২টার দিকে সীরতুন্নবী মাহফিলে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রামগামী মারসা পরিবহনের একটি বাস। এতে ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল আরোহী মো. ইসমাইল নিহত হন।
ইসমাইল বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর মিশন পাড়ার মো. ইব্রাহিমের পুত্র। গুরুতর আহত অবস্থায় চালক মো. হোসাইনকে হাসপাতালে পাঠানো হয় বলে জানান এসআই।
কুমিল্লায় হিমালয় পরিবহনের একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে পিকআপ হেলপার মাইন উদ্দিন (২২) নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন পিকআপটির চালক।
কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার ছোট তুঘুরিয়া এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মাইন উদ্দিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী এলাকার জাফর মোল্লার ছেলে।
লালমাই হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মো. মোস্তফা মিয়া এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কুমিল্লায় ট্রেনে কাটাপড়ে পৃথক স্থানে দুই নারী নিহত হয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী ও লালমাই উপজেলার ফয়েজগঞ্জ বাজার এলাকায় দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।
দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুণবতী রেল স্টেশন এলাকা থেকে ট্রেনে কাটাপড়া এক নারীর (৪০) মরদেহ উদ্ধার করে লাকসাম রেলওয়ে থানা পুলিশ।
অপরদিকে সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের জেলার লালমাই উপজেলার ফয়েজগঞ্জ বাজার এলাকার মিয়াজি বাড়ি সংলগ্ন স্থানে রেললাইনের পাশ থেকে অজ্ঞাত (৩৮) আরেক নারীর লাশ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।
লাকসাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজিম উদ্দিন জানান, উদ্ধার হওয়া দুটি লাশের পরিচয় এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। লাশগুলো উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে দুজনই ট্রেনে কাটাপড়ে মারা গেছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় ট্রেনে কাটাপড়ে দেলোয়ার হোসেন (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা রেল স্টেশনের অদূরে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জৈবসার কারখানার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত দেলোয়ার হোসেন জীবননগর উপজেলার ধানখোলা গ্রামের মৃত আদিল হোসেনের ছেলে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির (জিআরপি) উপ-পরিদর্শক জালাল উদ্দিন জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুপুরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলস্টেশন অতিক্রম করে যাওয়ার সময় ওই বৃদ্ধ কাটাপড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে বিকালে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় পোড়াদাহ জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।