জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শ্রমশক্তির বাইরে। দেশের জনসংখ্যার সম্ভাবনার চেয়ে এই পরিমাণ শ্রমশক্তি অপ্রতুল। এ ছাড়া রাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অমীমাংসিত ঋণ সমস্যা শ্রমবাজারে চাপ সৃষ্টি করায় বৈশ্বিক শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার স্থবির হয়ে পড়ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বা আইএলও ‘বিশ্ব কর্মসংস্থান ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি-২০২৫’ এর প্রতিবেদনে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে।গতকাল বৃহস্পতিবার আইএলও ঢাকা কার্যালয় থেকে এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বৈশ্বিক কর্মসংস্থান স্থবির ছিল। শুধু শ্রমশক্তির বৃদ্ধির কারণে কর্মসংস্থান সামান্য বৃদ্ধি পেলেও বেকারত্বের হার ৫ শতাংশে স্থির ছিল। এতে তরুণ বেকারত্ব খুব বেশি কমেনি।
এখনো এই হার ১২.৬ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক কাজ এবং কাজের দারিদ্র্যতা পূর্ব-মহামারি পর্যায়ে ফিরে এসেছে। মর্যাদাপূর্ণ চাকরি তৈরিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের দেশগুলো।
বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে আইএলও প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, দেশে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার ৪৯.৫ শতাংশ, যেখানে নারী-পুরুষ বৈষম্য প্রকট।
এতে পুরুষদের অংশগ্রহণ ৭৮.৫ শতাংশ এবং নারীদের মাত্র ২১.২৫ শতাংশ। বিশেষ করে নারীরা কর্মসংস্থানে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে কম উৎপাদনশীল খাতে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সামাজিক ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া লিঙ্গ অনুসারে সংশ্লিষ্ট বয়সের মোট যুবক-যুবতীদের মোট সংখ্যার শতাংশ (এনইইটি) যুবকদের অংশ ৩০.৯ শতাংশে রয়েছে, যেখানে পুরুষের হার ১১.১ শতাংশ এবং নারীদের হার ৪৯.৩ শতাংশ।
এই প্রসঙ্গে আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন দক্ষতা উন্নয়ন, তরুণদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রমবাজারের সুশাসন ব্যবস্থার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা, সামাজিক সুরক্ষা সম্প্রসারণ ও বেসরকারি তহবিলের কার্যকর ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ : রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান ব্যয় এবং অমীমাংসিত ঋণ সমস্যা শ্রমবাজারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। যদিও মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেয়েছে, এটি এখনো উচ্চ অবস্থানে রয়েছে এবং মজুরির মান কমিয়ে দিচ্ছে বলে রিপোর্টটি জানিয়েছে। প্রকৃত মজুরি শুধু কিছু উন্নত অর্থনীতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বেশির ভাগ দেশ এখনো মহামারি এবং মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব থেকে পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে রয়েছে।
শ্রমশক্তিতে তরুণদের অংশগ্রহণ কমছে : নিম্ন আয়ের দেশগুলোর তরুণদের মধ্যে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার কমছে, তবে উচ্চ আয়ের দেশগুলোতে এটি বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বয়স্ক কর্মী এবং নারীদের মধ্যে। তবুও লিঙ্গবৈষম্য এখনো প্রকট এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের কম অংশগ্রহণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
তরুণ পুরুষদের মধ্যে অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবং অনেকে এখন শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা প্রশিক্ষণের মধ্যে নেই। এই প্রবণতা বিশেষত নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে প্রকট।
২০২৪ সালে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে তরুণ পুরুষদের নিট হার এক কোটি ৫৮ লক্ষ (২০.৪ শতাংশ) এবং তরুণ নারীদের নিট হার দুই কোটি ৮২ লাখে (৩৭.০ শতাংশ) পৌঁছেছে, যা ২০২৩ সালের তুলনায় যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং সাত লাখ বেড়েছে।
বিশ্বব্যাপী ২০২৪ সালে তরুণ পুরুষদের নিট হার আট কোটি ৫৮ লাখ (১৩.১ শতাংশ) এবং তরুণ নারীদের নিট হার ১৭ কোটি ৩৩ লাখ (২৮.২ শতাংশ) পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১০ লাখ এবং ১৮ লাখ বেড়েছে।
বৈশ্বিক চাকরির গ্যাপ পৌঁছেছে ৪০ কোটি ২০ লাখে : বিশ্বব্যাপী চাকরির গ্যাপ, যা চাকরি করতে ইচ্ছুক কিন্তু কর্মহীন মানুষের সংখ্যা নির্দেশ করে—২০২৪ সালে ৪০ কোটি ২০ লাখে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৬০ লাখ বেকার, ১৩ কোটি ৭০ লাখ হতাশ কর্মী। সাত কোটি ৯ লাখ মানুষ কাজ করতে চাইলেও বিভিন্ন দায়িত্বের কারণে কর্মসংস্থানে অংশ নিতে পারেনি।
ডিজিটাল এবং গ্রিন সেক্টরে নতুন সুযোগ : গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন এনার্জি এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। সৌরশক্তি এবং হাইড্রোজেন শক্তিতে বিনিয়োগের কারণে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চাকরি বিশ্বব্যাপী এক কোটি ৬২ লাখ বেড়েছে। তবে এই চাকরিগুলোর পরিধি বিশ্বব্যাপী অসম, যার প্রায় অর্ধেক পূর্ব এশিয়ায় কেন্দ্রীভূত।
উদ্ভাবনী সমাধান : আইএলওর মহাপরিচালক গিলবার্ট এফ হংবো বলেন, ‘সামাজিক ন্যায়বিচার এবং টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে মর্যাদাপূর্ণ কাজ এবং উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান অপরিহার্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।