নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ১৪ ডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রায়েরবাজার বধ্যভূমি এবং মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন সর্বস্তরের মানুষ।
আজ শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ভোরের সূর্য ওঠার আগেই রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সর্বস্তরের মানুষ। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ছিলেন এই কাতারে। শ্রদ্ধা জানাতে এসে তারা স্মরণ করেন বিজয়ের আগ মুহূর্তে বুদ্ধিজীবী হত্যার নৃশংস ঘটনাকে।
সকালে রায়েরবাজার বধ্যভূমি খুলে দেওয়া হয় সর্ব সাধারণের জন্য। তবে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্রদ্ধার জানানোর পর।
এরপর শ্রদ্ধা জানাতে আসা সবার হাতে ছিল ফুলের তোড়া ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে লেখা কালো ব্যানার। বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে আজকের দিনে জাতির মেধাবী সন্তানদের হত্যার বিচার দাবি করেন তাদের পরিবার ও স্বজনরা।
পরিবারের সঙ্গে মোহাম্মদপুর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাত। জান্নাত জানায়, বাবা-মার কাছে সে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস জেনেছে। তৃতীয় প্রজন্মের শিশু হিসেবে সে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে। সেও বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচার চায়।
বধ্যভূমির পাশের এলাকা পুলপার থেকে পরিবারের সঙ্গে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছে তাসফিয়া। অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও সে বাবার সঙ্গে এসেছে। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পুরো ঘটনা জানা আছে তার। বুদ্ধিজীবীদের হারিয়ে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পূরণ করবে বলে প্রত্যাশা তাসফির।
শ্রেষ্ঠ মন্তানদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রসঙ্গে মোহাম্মদপুরের এই বাসিন্দা বলেন, এই বিচার অবশ্যই করতে হবে। বিচার হবেই হবে। হয়তো একটু সময় লাগবে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বিচার হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
বেলা বাড়ার সঙ্গেসঙ্গে বধ্যভূমিতে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত।
পরাজয় নিশ্চিত জেনে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করতে প্রখ্যাত শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক মেধাবী বাঙালিকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী।
মেধাবী বাঙালিদের বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে ধরে নিয়ে নৃশংসভাবে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। পরে তাদের মরদেহ রাজধানীর রায়েরবাজার ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে ফেলে দেয়া হয়।
পাকিস্তানি বাহিনী তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আল বদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ঠাণ্ডা মাথায় এ গণহত্যা চালায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যাতে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে।
জাতির মেধাবী সন্তানদের লাশ পরে মিরপুর ও রায়েরবাজারসহ অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, ড. ডালিম চৌধুরী, অধ্যাপক মুনিরুজ্জামান, ড. ফজলে রাব্বি, সিরাজুদ্দিন হোসেন, শহীদুল্লাহ কায়সার, অধ্যাপক জিসি দেব, জেসি গুহ ঠাকুর্তা, অধ্যাপক সান্তোষ ভট্টাচার্য, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব, নিজামুদ্দিন আহমেদ, এসএ মান্নান, এএনএম গোলাম মুস্তফা, সৈয়দ নাজমুল হক ও সেলিনা পারভিন।
এরপর থেকে দিনটি শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।