
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ‘নোকিয়া-Nokia’ বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোন। একসময়ের আভিজাত্যের প্রতীকও এ ব্র্যান্ড। সেই নোকিয়া Nokia ফোন এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে পুরোদমে চলছে নোকিয়া Nokia এর অ্যাসেমব্লিং।
জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার ও বাংলাদেশের ইউনিয়ন গ্রুপের জয়েন্ট ভেঞ্চার ভাইব্র্যান্ট সফটওয়্যার (বিডি) লিমিটেড নোকিয়া Nokia মোবাইল ফোন উৎপাদনের জন্য তিন বছরের লাইসেন্স নিয়েছে।
স্যামসাং এবং নোকিয়া Nokia এর মতো কোম্পানি বাংলাদেশ মোবাইল সেট উৎপাদন করবে, এটি বোধহয় অনেকে কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ সেটা এখন বাস্তব। বেসিস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ সুযোগটা ২০১৭ সালে আমি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নিতে পেরেছিলাম। দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরিকে আরও উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে প্রযোজ্য ভ্যাট অব্যাহতি নিতে পেরেছিলাম সেই বছরে। একই সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলাম
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটির ৫ নম্বর ব্লকে পাঁচ একর জমি বরাদ্দ নিয়ে তারা কারখানা গড়ে তুলেছে। সেখানে রয়েছে ছয়টি লাইন, যার মধ্যে চারটি অ্যাসেম্বলিং ও দুটি প্যাকেজিংয়ের লাইন। কারখানায় প্রায় ৫০০ কর্মী রয়েছেন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে কারখানায় মোবাইল ফোন সংযোজন করা শুরু হয়। বর্তমানে এ কারখানাটিতে নোকিয়া Nokia এর ৩.৪ মডেলের স্মার্টফোন তৈরি হচ্ছে। এ মডেলের ১০-১২ হাজার ইউনিট মোবাইল প্রতিষ্ঠানটির বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। নোকিয়া Nokia জি-১০ মডেলের ফোনও এখানে অ্যাসেমব্লিং করা হবে। এছাড়া চলতি নভেম্বরে শেষে জি-১০ মডেলের স্মার্টফোন তৈরির মাধ্যমে দ্বিতীয় লটের উৎপাদন শুরু হবে। গত জুলাইয়ের শেষদিকে ফোন দুটি বাজারে আসার কথা থাকলেও মহামারি করোনা কারণে তা পিছিয়ে যায়।
নোকিয়া Nokia এর হেড অব বিজনেস ফারহান রশীদ বলেন, ‘নোকিয়া Nokia এর কারখানায় ৫০০ জন কর্মী সরাসরি কাজ করবেন। বিক্রি বাড়লে আরও ৫০০ জনশক্তি পরোক্ষভাবে যুক্ত হবেন। সব মিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে।’ কারখানার ইনচার্জ নওয়াব হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে আগে নোকিয়ার যে মোবাইল ফোনগুলো পাওয়া যেতো, সেগুলো ছিল উইন্ডোজ নোকিয়া Nokia। এ কারণে তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। আমরা অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল এনেছি এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত করায় এটা অনেক জনপ্রিয় হবে বলে আমরা আশা করছি। বাংলাদেশে এটি তৈরি করায় দামে সাশ্রয়ী হবে। প্রতিদিন ৩০০-৫০০ ইউনিট মোবাইল কারখানায় তৈরি হবে।’
নোকিয়া Nokia এর এ কারখানায় ৫০০ জন কর্মী সরাসরি কাজ করবেন। বিক্রি বাড়লে আরও ৫০০ জনশক্তি পরোক্ষভাবে যুক্ত হবেন। সব মিলিয়ে সহস্রাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে এখানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ মোবাইল ফোন উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই আমরা ৬২ ভাগের ওপরে ডোমেস্টিক (স্থানীয়) চাহিদা মেটাচ্ছি। স্মার্টফোনের প্রায় ৮৫ ভাগ বাংলাদেশ উৎপাদন করছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমরা রফতানিও করছি। সুতরাং সেই মাইলফলক ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘স্যামসাং এবং নোকিয়া Nokia এর মতো কোম্পানি বাংলাদেশ মোবাইল সেট উৎপাদন করবে, এটি বোধহয় অনেকে কল্পনাও করতে পারেনি। অথচ সেটা এখন বাস্তব। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) প্রেসিডেন্ট হিসেবে এ সুযোগটা ২০১৭ সালে আমি তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে নিতে পেরেছিলাম। দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট তৈরিকে আরও উৎসাহিত করতে যন্ত্রাংশ উৎপাদনে প্রযোজ্য ভ্যাট অব্যাহতি নিতে পেরেছিলাম সেই বছরে। একই সঙ্গে শর্তসাপেক্ষে কাঁচামালের আমদানি শুল্কে ছাড়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।’
তিনি বলেন, ‘আমি এখনো কৃতজ্ঞ আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে। তিনি অসম্ভব দূরদর্শিতাসম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি আমাদের সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে গিয়েছিলেন। ফলে আজকের বাংলাদেশ মোবাইল শিল্পের ক্ষেত্রে এ স্বপ্নটা দেখতে পারে যে, আমরা এক থেকে দুই বছরের মধ্যে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ হবো।’ মোস্তফা জব্বার বলেন, ‘নতুন নতুন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। নতুন ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ড বাংলাদেশ উৎপাদনের চেষ্টা করছে, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই একটা বড় পাওয়া।’
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে মোবাইল হ্যান্ডসেটের মোট উৎপাদন ও আমদানি ছিল ২৯ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ইউনিট। এরমধ্যে ১৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন ইউনিট স্থানীয়ভাবে ১০টি সংস্থা তৈরি করেছিল এবং ১৩ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ইউনিট আমদানি করা হয়েছিল।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



