জুমবাংলা ডেস্ক: প্রায় দু-শো বছর আগে ঢাকাই মসলিন ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামি কাপড়। কিন্তু তার পর এটা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে। বিলুপ্ত হওয়া ঢাকাই মসলিনকে সরকারের উদ্যোগে ১৭০ বছর পর আবার বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। এবার বান্দরবানে উৎপাদিত কলাগাছের আঁশের সুতা দিয়ে তৈরি হয়েছে আকর্ষণীয় শাড়ি। শাড়িটির নাম দেওয়া হয়েছে কলাবতী সুতি শাড়ি।
মৌলভীবাজারের মনিপুরী তাঁত শিল্পী রাধাবতী দেবী জেলা প্রশাসকের অনুরোধে বান্দরবানে এসে প্রথমবারের মতো কলা গাছের তন্তু থেকে এ শাড়িটি বুনেছেন। তার তত্ত্বাবধানে পরিকল্পনাসহ দীর্ঘ একমাসের প্রচেষ্টায় কলাগাছের সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়েছে। এই শাড়িটিই বাংলাদেশে কলাগাছের সুতায় তৈরি প্রথম শাড়ি।
এ বিষয়ে প্রশিক্ষক রাধাবতী দেবী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন সুতা দিয়ে শাড়ি তৈরি হয়। তবে দেশে প্রথমবার কলাগাছের সুতা থেকে একটি শাড়ি তৈরি করলাম। বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের অনুরোধে ও তার সার্বিক সহযোগিতায় এটা সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, একটা সময় মনে হয়েছিল সম্ভব নয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফলভাবে শাড়ি তৈরি করতে পেরে আমি ভীষণ খুশি। আমার জন্য এটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথম পর্যায়ে একাধারে ১৫ দিন সময়ে এবং এক কেজি কলাগাছের আঁশের সুতা দিয়ে এই আকর্ষণীয় শাড়ি তৈরি হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামীতে আরও কম সময়ে ও কম খরচে আরও মসৃণ ও উন্নতমানের শাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে।
গত ১২ মার্চ মৌলভীবাজার থেকে বান্দরবান এসেছিলেন কারিগর রাধাবতী দেবী ও আরো এক কারিগর। প্রথমদিকে আঁশ থেকে সুতা তৈরি করা, সুতাগুলো প্রক্রিয়া করাসহ জিনিসপত্র গোছাতেই তাদের আটদিন সময় লেগে যায়। শাড়ির কাপড় বুনতে সময় লেগেছে মাত্র সাতদিন। সাধারণ একটা শাড়ি বুনতে পাঁচশ গ্রাম সুতা লাগলেও কলাগাছের আঁশের সুতায় প্রথম শাড়িটি বুনতে এক কেজির মতো সুতা লেগেছে। কারিগররা জানান, আগামীতে সব জিনিসপত্র ঠিকঠাক থাকলে একদিনেই একসঙ্গে মেশিনে তিনটি শাড়ি তৈরি করা যাবে। ধাপে ধাপে এর সংখ্যা বাড়বে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগী বান্দরবান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইং সাইং উ বলেন, পাহাড়ের নারীদের কর্মসংস্থান তৈরি ও দরিদ্রতা নিরসনে কলাগাছের আঁশ থেকে সুতা তৈরি এবং কলাগাছের সুতায় ব্যাগ, ঝুড়ি, ফুলদানি, কলমদানি, ফাইল ফোল্ডার, পাপসসহ বিভিন্ন ধরনের শোবিজ ও জিনিসপত্র তৈরির কাজ শুরু করি। পাহাড়ের নারীদের এ কাজে প্রশিক্ষণ এবং কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়। কলাগাছের সুতায় শাড়ি তৈরি ছিল এ প্রকল্পের বড় সফলতা।
পরীক্ষামূলকভাবে সফলতা পাওয়ায় টেকসই এবং গুণগতমান ঠিক রেখে শিল্পটি সম্প্রসারণ করা গেলে এই অঞ্চলে প্রচুর কর্মসংস্থান তৈরি হবে। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতা ফিরবে পার্বত্য জনপদে।
কলাগাছের সুতা (তন্তু) থেকে তৈরি করা বিভিন্ন হস্তশিল্পের পাইলট প্রকল্প ধরে এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন। তিনি বলেন, বান্দরবানে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। সেই চিন্তা থেকেই কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, বান্দরবান জেলায় অসংখ্য কলাগাছ রয়েছে। ফল সংগ্রহের পর গাছটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকেই সুতা তৈরি করা হয়। সেই সুতা থেকে পর্দার কাপড়, পাপজ, ব্যাগ, কলমদানি ও বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করার পর পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শাড়ি তৈরির।
প্রথমবার নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হওয়ায় শাড়িটির দাম এখনই ঠিক করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি করা হলে তাঁতিরা লাভবান হবেন বলে জানা গেছে।
কার্পাস থেকে আজকের কাপাসিয়া, বহু বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান চাষিরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।