জুমবাংলা ডেস্ক: আবারও ভিয়েতনামি নারিকেলের চারা আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। গত ১৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মল্লিকা সিড কোম্পানিকে পাঁচ লাখ ও মেসার্স আসিফ ট্রেডার্সকে চার হাজার খাটো জাতের নারিকেলের চারা আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। ভিয়েতনামি সিয়াম গ্রিন ও সিয়াম ব্লু জাতের এসব চারা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত জমিতে চাষ করা হবে। সমকালের প্রতিবেদক জাহিদুর রহমান-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
এর আগে মল্লিকা সিডের মাধ্যমেই প্রায় সাত লাখ ভিয়েতনামি চারা আনা হয়। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চারা বিক্রি ও চাষাবাদ সম্প্রসারণ হয়। ২০১৩ সালে ভিয়েতনাম থেকে ‘দোয়ার হাইব্রিড নারিকেল’ (খাটো জাতের নারিকেল) চারা দেশে আনা হয়। এ নারিকেল গাছকে ‘পৃথিবীর স্বর্গীয় গাছ’ আখ্যা দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রচারপত্র বিতরণ করে। তিন বছরের মধ্যে ফল আসার কথা বলা হয়। কিন্তু গাছ লাগিয়ে বহু কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার গল্প উঠে আসে গণমাধ্যমে। ছয় বছরেও ফল না আসায় গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ক্ষোভে নিজের বাগানের ১০৭টি নারিকেল গাছ কেটে ফেলেন নাটোর সদরের আহম্মদপুর এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা সেলিম রেজা। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এ জাতের নারিকেল চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক। তবে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও ঝালকাঠির লবণাক্ত মাটিতে দুই চাষি এ নারিকেল চাষ করে সফল হয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বাটুয়া গ্রামের কৃষক মো. মহসিন নদীর পাড়ে একটি বাগানে খাটো জাতের নারিকেল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তাঁর বাগানে থোকায় থোকায় ধরেছে নারিকেল। মহসিন জানান, ২০১৬ সালে ৫০০ টাকা দরে ১০০টি চারা সংগ্রহ করে নদীর পাড়ে বাগান করেছিলেন তিনি। বর্তমানে নারিকেল বা ডাব বিক্রির পাশাপাশি প্রতি মাসে শুধু চারা বিক্রি করেই আয় করেন লাখ টাকার বেশি।
এ নারিকেল নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে নিজের মতামত তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) তৎকালীন মহাপরিচালক ড. মো. নাজিরুল ইসলাম। সচিবকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, ‘দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ স্থানে ভালো ফলন হয়নি। তবে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভালো ফলন হয়েছে।’ একই সঙ্গে গবেষণা মূল্যায়নের জন্য উন্নত জাতের চারা বা নমুনা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।
এ অবস্থায় শুধু দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটিতে চাষাবাদের জন্য খাটো জাতের নারিকেল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আসিফ ট্রেডার্সের কর্ণধার জয়নাল আবেদীন জানান, এরই মধ্যে ৪ হাজার চারা আমদানি করেছেন তিনি। যশোরের লেবুতলায় নিজের জমিতেই রোপণ করেছেন এসব চারা।
বারির সাবেক মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম বলেন, খাটো জাতের নারিকেল চাষের আগে বারির বিজ্ঞানীদের মতামত নেওয়া হয়নি। গবেষণা ছাড়াই চারা আমদানি হয়েছে। এটা নিয়ে অনেকে তখন ব্যবসা করে ফেলেছেন। নতুন করে আবার আমদানির জন্য অনেকে তৎপর ছিলেন। তিনি বলেন, নারিকেল চাষের জন্য আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বরিশালে যে নারিকেল হয়, সেটা ময়মনসিংহে হবে না। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বীজ উইং) আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেখানে লবণাক্ততা ও পানি বেশি আছে, সেই এলাকার জন্য খাটো জাতের নারিকেল উপযুক্ত। তাই এবার ওইসব এলাকায় চাষের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
গবেষকদের ভাষ্য, এ জাতের নারিকেলের চারা বিক্রি ও চাষের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি থাকতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলে চাষে অনুমতি দেওয়া হলেও এক শ্রেণির কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ী অতীতের মতো প্রচারণা চালিয়ে অধিক লাভের আশায় অন্যান্য এলাকায় বিক্রি করতে পারেন। নতুন করে যেন কোনো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়কে সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অনেক কৃষক খাটো জাতের নারিকেল চাষ করে সফল হয়েছেন। এ নারিকেলের চাষ সম্প্রসারণে ওই অঞ্চলকে গুরুত্ব দিয়ে কর্মসূচি নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।