জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আপাতত সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান বিচারপতিসহ অন্যান্য বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভা। খবর বিবিসি বাংলার।
সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট রুলস সংশোধন করে ভার্চুয়াল আদালত স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশে এই প্রথমবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ফুল কোর্ট মিটিং অনুষ্ঠিত হলো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মার্চ মাসের শেষ থেকেই বাংলাদেশের উচ্চ ও নিম্ন আদালত পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এই বন্ধের সময় পাঁচই মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান এক বার্তায় জানিয়েছেন, ”ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় আইনগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
”সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মস, ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার বিষয়ে বিচারক, আইনজীবীগণের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”
ভার্চুয়াল কোর্ট কী?
সশরীরে উপস্থিত না থেকে, ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থেকেও ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিচার পরিচালনা করাই হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্ট।
বাংলাদেশে বিষয়টি নতুন হলেও, পার্শ্ববর্তী ভারত ও পাকিস্তানে এর মধ্যেই এ ধরণের আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরণের আদালত চালু আছে।
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”অনেক দেশে অনলাইনেই মামলার সকল কাগজপত্র আপলোড করা হয়ে থাকে। সেখান থেকে বিচারক ও আইনজীবীরা সেসব নথিপত্র দেখতে পারেন, পর্যালোচনা করতে পারেন। আইনজীবীরা তাদের অবস্থান থেকেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য তুলে ধরেন। কোথাও কোথাও পুলিশ স্টেশন থেকে আসামীদেরও সংযুক্ত করা হয়। শুনানির পর বিচারক তার রায় প্রদান করেন।”
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ”সম্প্রতি ভারতে করোনাভাইরাসের টেস্ট করতে টাকা না নেয়ার যে আদেশ দেয়া হয়েছে, সেটাও হয়েছে এরকম ভার্চুয়াল আদালতের মাধ্যমে।”
ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করতে রাষ্ট্রপতির কাছে অর্ডিন্যান্স জারি করার সুপারিশ করা হবে। কারণ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় এই পদ্ধতি একেবারেই নতুন করে সংযুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে হাইকোর্টের রুলসও সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে হাইকোর্টের রুলস কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অর্ডিন্যান্সেই ভার্চুয়াল কোর্টে কীভাবে শুনানি হবে, কে কে থাকবে, প্রক্রিয়া ও পদ্ধতির বিস্তারিত থাকবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি নিম্ন আদালতও এই অনলাইন বিচার ব্যবস্থার আওতায় আসবে বলে জানানো হয়েছে।
সুবিধা ও অসুবিধা?
সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় বলছেন, এর ফলে জরুরি যেসব মামলা রয়েছে, বিশেষ করে জামিন আবেদনের মামলাগুলো এভাবে শুনানি করে নিষ্পত্তি হতে পারে।
”করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এই যে দীর্ঘদিন আদালত বন্ধ থাকছে, এই সময়ে অনেক মামলা জমে যাচ্ছে। সেগুলোর শুনানি কার্যক্রম চলতে পারে। সেই সঙ্গে আধুনিকায়ন হবে। ভবিষ্যতে যদি এরকম কোন পরিস্থিতি দেখা যায় যে, আদালত সশরীরে বসতে পারছে না, তখনো বিচার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে।”
জুমের মতো নানা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই কনফারেন্স হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
তবে এখানে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
”বাংলাদেশে মামলার ক্ষেত্রে অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। অনেক কাগজপত্র দিতে হয়, স্ট্যাম্প ইত্যাদির দরকার হয়। সেই সঙ্গে পুরো নথিপত্রও এখনো ডিজিটাইজড হয়নি। ফলে নথিপত্র হয়তো আগেই জমা দিতে হবে। আবার শুনানির সময় বিচারের কোন নথি দেখার দরকার সেটার জন্যও সময় লাগবে।”
”কিন্তু বর্তমান করোনাভাইরাসের মতো পরিস্থিতি সামলাতে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিকল্প নেই,” তিনি বলছেন।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুহুল কুদ্দুস কাজল বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”দীর্ঘদিন ধরে আদালত বন্ধ রয়েছে। অনেক মানুষের যেমন জামিন আটকে রয়েছে, অনেকের শুনানি হচ্ছে না। অনেক জরুরি মামলার কার্যক্রম বন্ধ। আমাদের আইনজীবীদেরও কোন কাজ নেই। তাই আমরাও অনুরোধ করেছি, ভার্চুয়াল পদ্ধতি অবলম্বন করে হলেও যেন জরুরি মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।”
”এটা অনলাইনে হতে পারে, টেলিফোনে হতে পারে। যেভাবেই হোক, জরুরি পরিস্থিতিতেও আদালতের কার্যক্রম যেন অব্যাহত থাকে, সেটার জন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থা হতে পারে।”
ভারতে শুরু হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত
বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা শুভজ্যোতি ঘোষ জানাচ্ছেন, ভারতে লকডাউনের শুরু থেকেই অনেক রাজ্যে ভার্চুয়াল আদালত শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই সেসব আদালত থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রায়ও এসেছে।
তিনি জানান, সেখানে ভিডিও কনফারেন্সিং করে এই আদালত পরিচালিত হয়। নিজেদের অবস্থান থেকে যেমন বিচারক যোগ দেন, তেমনি আইনজীবীরাও নিজেদের বাসা থেকে আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেন।
সম্প্রতি ভারতের পাঞ্জাবের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে শুভজ্যোতি ঘোষ জানান, সেখানকার একটি অনলাইন শুনানিতে একজন আইনজীবী বাসায় বসে গেঞ্জি পরে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। তাতে আদালত ক্ষুব্ধ হয়ে সেই মামলার রায় দেননি। আদালত বলেছেন, অনলাইনে হলেও এটা পূর্ণাঙ্গ একটি আদালত, এখানে আদালতের পোশাক পরেই অংশ নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।