জুমবাংলা ডেস্ক : করোনায় দেশের রেড জোনগুলোতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকায় পূর্ব রাজাবাজার এবং ঢাকার বাইরে তিনটি এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে বাকিগুলো কবে হবে, কীভাবে হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
টেকনিক্যাল কমিটির সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকার দুই সিটি ও চট্টগ্রামের যেসব এলাকায় প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় সর্বশেষ ১৪ দিনে ৬০ জন আক্রান্ত হয়েছে সে সব এলাকা রেড জোন। আর ঢাকার বাইরে প্রতি লাখে ১০ জন।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় প্রায় তিন লাখ মানুষের বসবাস। ওই এলাকায় বুধবার রাতে হঠাৎ করেই লকডাউনের ঘোষণা দেয়া হয় মাইকে। আর এই ঘোষণায় পুরো এলাকার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তারা নানা জায়গায় ফোন করে জানতে চান বিষয়টি। কারণ এটা নিয়ে আগাম কোনো প্রচার ছিল না। পরে বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ঢালি দুঃখ প্রকাশ করেন এবং জানান লকডাউনের ঘোষণা ভুল ছিলো।
এরকম কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে করোনা প্রতিরোধে আমরা আগের চেয়ে একটু বেশি কড়াকড়ি আরোপ করেছি বসুন্ধরা এলাকায়। আর তাতেই কিছু যুবক উৎসাহী হয়ে লকডাউনের কথা মাইকে প্রচার করেন।’
এদিকে, লকডাউন ১৪ দিন না ২১ দিন তা নিয়েও বিভ্রান্তি আছে পূর্ব রাজাবাজারে। সেখানে লকডাউন শুরু হয় ৯ জুন থেকে। ১৪ দিনের হলে তা আগামী সোমবার শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বাসিন্দারা জানেন না ঠিক সোমবারে লকডাউন শেষ হবে কিনা। তারা শুনেছেন এটা ২১ দিন হতে পারে। তাহলে শেষ হবে ৩০ জুন।
ওই এলাকার বাসিন্দা গাড়িচালক মাসুদ আহমেদ এই লকডাউনে দুই ধরনের সমস্যায় পড়েছেন। তিনি একটি বাসার প্রাইভেট কার চালান। সেই বাসা আবার লকডাউনের বাইরে। তিনি সেখানে যেতে পারেন না। তিনি জানে না এখন তিনি বেতন পাবেন কিনা। আবার লকডাউন এলাকায় ভ্যানে করে শাকসবজি বিক্রি করা হলেও তার দাম চড়া বলে জানান তিনি। ওই এলাকায় অনেকেই আছেন যারা অন্য এলাকায় চাকরি করেন। সেখানে অফিস খোলা। এখন তাদের অফিস বেতন দেবে কিনা তা নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। সরকার লকডাউন এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেয়নি।
ওই এলাকার আরেকজন বাসিন্দা সাংবাদিক আমিন আল রশীদ বলেন, ‘এলাকার যারা বাইরে বেসরকারি চাকরি করেন তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি আছে যে তারা বেতন পাবেন কিনা। একারণে প্রতিদিন সকালেই লোকজন নানা অজুহাতে বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের থামাতে প্রতিদিনই মাইকিং করতে হয়।’
পূর্ব রাজাবাজারের লকডাউন এলাকায় ৫০ হাজার বাসিন্দা আছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান জানান, ‘এখনো ২১ দিন লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়নি। ১৪তম দিনে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে আর বাড়ানো হবে কিনা।’
তিনি লকডাউনে তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, গভীর রাতে কেউ কোমল পানীয়, কেউ পান-সুপারি, কেউ আইসক্রিম এনে দিতে বলছেন।
এদিকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করার পর করোনা আক্রান্ত বেড়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, লকডউনের আগে মোট আক্রান্ত ছিলেন ৩১ জন। পরীক্ষায় আরো ১৫ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে গত পাঁচ দিনে। এখন মোট আক্রান্ত ৪৬ জন।
তবে ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক বলছেন, এখন প্রতিদিন ২০-২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ফলে পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে বেশি। এরা আগেই আক্রান্ত।
উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৭টি এবং দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৮টি এলাকা, এই মোট ৪৫টি এলাকাকে ঢাকার রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১০টি, গাজীপুরের সবকটি উপজেলা, নারায়ণগঞ্জ পুরো সিটি ও জেলার আরো তিন উপজেলা এবং নরসিংদী জেলাসদরসহ তিন উপজেলা রেড জোন।
ঢাকা দুই সিটির রেড জোন ঘোষণা করা হলেও কবে, কখন লকডাউন করা হবে তা এখনো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়নি।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন, লকডাউনে সুনির্দিষ্টভাবে কার কী দায়িত্ব হবে তা জানাতে হবে। সেটা না জানানোর আগে লকডাউন নয়। ফলে ওয়ারী এলাকার মানুষ আছেন বিভ্রান্তিতে। কারণ পূর্ব রাজাবাজারের সঙ্গেই ওই এলাকাও লকডাউন হওয়ার কথা ছিলো। সেখানে এখন লকডাউনের মতোই কড়াকড়ি চলছে।
এদিকে, উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামও তার ১৭টি এলাকা রেড জোন করা হয়েছে বলে জেনেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি মনে করেন, লকডাউন করা আগে কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়া দরকার।
ঢাকার সাভার, আশুলিয়া এবং গাজীপুরে লকডাউন না করার চাপ আছে। কারণ ওই সব এলাকায় সবচেয়ে বেশি পোশাক কারখানা আছে। পোশাক কারখানার মালিকরা লকডাউন যাতে না হয় তার চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। সাভার এলাকায় কয়েকদিন ধরে লকডাউনের গুজব ছড়াচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। কিন্তু হচ্ছে না।
তবে আজ (শুক্রবার) মধ্য রাত থেকে ধামরাই পৌর এলাকায় লকডাউন শুরু হচ্ছে ১৪ দিনের জন্য। এজন্য গত দুই দিন ধরে প্রচার চলছে।
পৌর মেয়র গোলাম কবির বলেন, ‘আমরা আগেই সময় দিয়েছি। সবাইকে যার যার খাবার কিনে রাখতে বলেছি। লকডাউন কয়েকদিন চলার পর দেখে সিদ্ধান্ত নেব যে খাবার সরবরাহ করতে হবে কিনা।’
রেড জোনের একটি তালিকা করা হলেও বাস্তবে এর অনেক কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। লাখে কত মানুষ আক্রান্ত হলে রেড জোন হবে তাই চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক এবং টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা। লাখে ৩০ না ৬০ জন তাও এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। ঢাকার পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন করা হয়েছে পরীক্ষামূলকভাবে। তার ফল দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
তিনি জানান, ‘ঢাকার লকডাউনের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক সিদ্ধান্ত নেবেন। আর ঢাকার বাইরে সিভিল সার্জন। তবে পুরো প্রক্রিয়া কী হবে তা এখনো আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে।’
দেশের রেড জোন নির্ধারণ করা হয়েছে ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারির ভিত্তিতে। কিন্তু গত ৯ বছরে জনসংখ্যা আরো অনেক বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ পৌর এলাকার পুরোটাই রেড জোন। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘লকডাউনের সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারি, কিন্তু জনসংখ্যাইতো ঠিক করতে পারছি না। ঢাকার বাইরে এক লাখে ১০ জন আক্রান্ত হলে লকডাউন হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তো ২০১১ সালের হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জনসংখ্যা ২৫ লাখ ধরে রেড জোন ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখন তো জনসংখ্যা এর দ্বিগুণ। তাহলে তো আর এটা রেড জোন হয় না।’
‘আর সর্বশেষ ১৪ দিনে আক্রান্তের হিসেব করলে আক্রান্ত তো অনেক কম। আমি কিসের ভিত্তিতে লকডাউন করব। তারপরও আলাপ আলোচনা করছি,’ বলেন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ। সূত্র: ডয়েচেভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।