বিনোদন ডেস্ক : আধুনিক সমাজে যেখানে কিনা ঋতুমতী অবস্থায় ঠাকুরঘরের চৌকাঠ অবধি পেরনো মানা, ত্রিসীমানায় যাওয়া বারণ, সেখানে দমদমের তরুণী উষসী চক্রবর্তী রজঃস্বলা অবস্থায় সরস্বতী পুজো করে এক নয়া দৃষ্টান্ত প্রতিস্থাপন করেছেন। অতঃপর সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খবর ভাইরাল হতেই নেটিজেনদের -নীতিপুলিশদের রক্তচক্ষুর শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।
শুধু তাই নয়, শোনামাত্রই রে-রে করে উঠেছেন পুরোহিতদের একাংশও। কারণ, রঘুনন্দনের শুদ্ধিতত্ত্বকে উপেক্ষা করার চরম বিরোধী তাঁরা। কলকাতার দমদম এলাকার উষসী যখন ঋতুমতী অবস্থায় বাগদেবীর আরাধনা করে জোর সমালোচনা-কটাক্ষের সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই প্রেক্ষিতেই এবার তাঁর পাশে দাঁড়ালেন অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী
তিনি বলেন, “নারী দেহ পুরোপুরি শুচি কিনা”, ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়েই সমাজের প্রচলিত এই ট্যাবুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, তথাকথিত আধুনিকমনস্কদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছিলেন যে, রজঃস্বলা নারীর ঈশ্বর আরাধনায় কোনও বাধা থাকা উচিত নয়। এবারও উষসী চক্রবর্তীর পাশে দাঁড়িয়ে ‘শবরী’ ঋতাভরীর মন্তব্য, “অন্তরের ভক্তি-শ্রদ্ধাই আসল। কতটা বেদ জেনে সে পূজা করছে, সেটাই মূল। ঋতুস্রাব তো একটা শারীরিক প্রক্রিয়া। নিত্যদিন ঠিক যেমনটা আমরা মল-মূত্র ত্যাগ করি, সেরকমই।
তিনি বলেন, ঋতুস্রাবের অস্তিত্ব না থাকলে তো, এই পৃথিবী থেকে জন্ম প্রক্রিয়াটাই লুপ্ত হয়ে যাবে। তাই এসব পুরনো চিন্তাভাবনা ঝেড়ে ফেলে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করা উচিত। এটা কোনও রোগ নয়, বলা ভাল ‘শরীর খারাপ’ নয়!ঋতুস্রাব খুব সাধারণ একটা শারীরিক প্রক্রিয়া। যা না হলে আখেড়ে সৃষ্টির-ই ব্যাঘাত ঘটবে।
উল্লেখ্য, মা সারদা ঋতুস্রাব চলাকালীন ঠাকুরের পুজো করতেন, ভোগও রাঁধতেন নিজে হাতে। তাঁর স্বামী পরমহংস শ্রী রামকৃষ্ণ তাঁকে কখনও বাধা তো দেনইনি, বরং উৎসাহ জুগিয়েছিলেন। সেই দিক থেকে বর্তমান সমাজের চিন্তাধারণা এখনও অনেকটাই পিছিয়ে। ২০২০ সালে ওষুধের দোকানে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে গিয়ে যেখানে ‘লুকোচুরি’ খেলতে হয়, সেখানে এক রজঃস্বলা নারীর পুজো নিয়ে যে প্রশ্ন উঠবে, সেটাই স্বাভাবিক! সোশ্যাল সাইটে ছবি দিয়ে ঊষসী শুধু লিখেছিলেন, ‘‘জীবনে প্রথমবার সামবেদ মেনে নিজেই নিজের বাড়ির সরস্বতী পুজো করলাম। আজ আমার দ্বিতীয় দিন।’’ ব্যস, তোলপাড় শুরু হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়।
ঋতাভরী চক্রবর্তীর বলেন, দাদু ছিলেন কমিউনিজমে বিশ্বাসী। তিনি ঈশ্বরে-ই বিশ্বাস করতেন না। তবে দিদা ছিলেন ঈশ্বর বিশ্বাসী। সবরকম পূজা হতো আমাদের বাড়িতে। তবে ঋতুমতী অবস্থায় পূজা করা যায় কিনা, এই প্রশ্নটাই কখনও আমাদের পরিবারে ওঠেনি। আমাদের পরিবার ঠিক এতটাই উদারনৈতিক চিন্তাধারা পোষণ করে। আমার কাছে, পুজো করা মানে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা। সেক্ষেত্রে শরীর শুচি-অশুচি কিনা সেটা বড় কথা নয়। অতঃপর ঋতুস্রাব হওয়াটা এমন কোনও পাপ নয় যে, এই অবস্থায় ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যাবে না। যদি তাই হত, তাহলে সৃষ্টির সঙ্গে এর কোনও যোগই থাকত না।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।