আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতে গত চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার নতুন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন বলে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে- যা একটি নতুন বিশ্বরেকর্ড। খবর বিবিসি বাংলার।
মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে দুনিয়ার কোনও দেশে কখনও এক দিনে এত নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। একই দিনে ভারতে মারা গেছেন ২ হাজার ১০৪ জন কোভিড রোগী, সেটিও সে দেশে একটি রেকর্ড।
এর মাধ্যমে ভারতে এপর্যন্ত মোট কোভিড রোগীর সংখ্যা গিয়ে ঠেকল ১ কোটি ৬০ লক্ষে, যা আমেরিকার ঠিক পরেই।
ভারতের স্বাস্থ্য অবকাঠামো কোভিডের এই বিধ্বংসী সেকেন্ড ওয়েভকে সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে বেড, অক্সিজেন বা জীবনদায়ী ওষুধের অভাবে অসংখ্য মানুষ কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠছে।
বস্তুত ভারতে গত কয়েকদিনে কোভিডের সংক্রমণ যে মারাত্মক তীব্রতায় আঘাত হেনেছে, গত বছরের প্রথম আঘাতের সময়ও তা অকল্পনীয় ছিল।
রাজধানী দিল্লিতে বিভিন্ন হাসপাতালের সামনে গিয়ে বিবিসির টিম দেখতে পেয়েছে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের স্ট্রেচারে নিয়ে তাদের পরিজনরা অসহায়ভাবে ছুটোছুটি করছেন। কিংবা একটা বেডের জন্য বা ডাক্তারকে দিয়ে একবার রোগীকে পরীক্ষা করানোর জন্য তারা কাকুতি-মিনতি করছেন।
মরণাপন্ন অবস্থায় অজস্র রোগী হাসপাতালে আসছেন, রাত ভোর হওয়ার আগেই তাদের অনেকেরই জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সেকেন্ড ওয়েভে এসে ভারতে রোজ যে এই লক্ষ লক্ষ রোগী কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছেন, তার আসল কারণটা যে ঠিক কী তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা খুব নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছেন না।
ভারতে ভাইরাসের একটি ডাবল মিউটেটেড ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়েছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি সারা দেশে কোভিড প্রোটোকল মানার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে চূড়ান্ত শিথিলতা।
গত দেড় মাসে হরিদ্বারের কুম্ভমেলায় জড়ো হয়েছেন লক্ষ লক্ষ হিন্দু পুণ্যার্থী, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে সব দলের নেতারাই ভাষণ দিয়েছেন বড় বড় জনসভায়।
আক্রান্তদের মধ্যেও যে হাজারে হাজারে মানুষ মারা যাচ্ছেন তার একটা বড় কারণ অবশ্যই অক্সিজেনের অভাব।
দিল্লির একটি হাসপাতালের ওয়েটিং এরিয়ায় এক ভদ্রমহিলা তার ভাই বালাজিকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলেন জোরে জোরে ধাক্কা দিয়ে। ছিল না কোনও অক্সিজেন।
ওই ব্যক্তি ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্টে নেতিয়ে পড়ছিলেন, বিবিসির টিম যখন তাদের দেখতে পায় তার কয়েক মিনিট পরেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন দুই সন্তানের ওই পিতা।
দেশের বহু হাসপাতালে মাত্র কয়েক ঘন্টার মতো অক্সিজেন অবশিষ্ট আছে বলে বিভিন্ন রাজ্য থেকেই খবর আসছে।
মহামারির প্রথম ধাক্কা সামলানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সাফল্য পাওয়ার পর সরকারের মধ্যে যে প্রবল আত্মতুষ্টি এসেছিল এবং দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকানোর জন্য দেশে কার্যত কোনও প্রস্তুতিই ছিল না তা বলতেও দ্বিধা নেই মৃতদের পরিজনদের।
কোভিডে সদ্য মা-কে হারানো গাজিয়াবাদের এক বাসিন্দা শ্মশানঘাটে দাঁড়িয়েই বিবিসিকে বলছিলেন, আসলে দেশ হিসেবে আমরা এর জন্য একেবারেই তৈরি ছিলাম না। মাকে এভাবে চলে যেতে দেখাটা যে কত যন্ত্রণার।
তিনি বলেন, মাত্র ৫৯ বছর বয়স ছিল, সদ্য অবসর নিয়ে ভেবেছিলেন এবার বাকি জীবনটা পরিবারের সঙ্গে আনন্দে কাটাবেন। আর এখন মা চিতায় শুয়ে আছেন।
মুম্বাইয়ের এক চিকিৎসক ত্রুপ্তি গিলাডার একটি ভিডিও বার্তা এ সপ্তাহে দেশে ভাইরাল হয়ে উঠেছিল, যেখানে তিনি প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন কী অসহায় অবস্থার মধ্যে তারা রয়েছেন।
তিনি বলেন, মুম্বাইতে রোগীদের আইসিইউতে বেড দেওয়া যাচ্ছে না, চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। ৩৫ বছরের তরুণ পর্যন্ত ভেন্টিলেটরে শুয়ে কাতরাচ্ছেন, আর ডাক্তাররা কোনও সাহায্যই করতে পারছেন না!
ড: গিলাডাও বিবিসি মারাঠিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এদিন বলেন, গত বছর তবু এই ভাইরাসকে না-ঠেকাতে পারার হাজারটা কারণ ছিল। কিন্তু এখন যেভাবে গোটা দেশ কোভিডের মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেই মর্মান্তিক ব্যর্থতার আসলে সত্যিই কোনও অজুহাতই হয় না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।