গোপনে দ্বিতীয় বিয়ে করতে এসে প্রথম স্ত্রীর রোষানলে পড়ে ধাওয়া খেয়ে কনের বাড়ি থেকে পালিয়ে রক্ষা পেয়েছেন বরসহ তার সঙ্গে আসা স্বজনরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বড়ডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনার দাকোপ উপজেলা লক্ষীখোলা গ্রামের অবিভূষণ বালার ছেলে এবং বটিয়াঘাটা কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত প্রতাপ বালা প্রেমের সম্পর্কের মাধ্যমে চালনা এলাকার সুশান্ত সরদারের মেয়ে খুলনা মহানগরীতে বসবাসকারী ও একটি বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বীনা সরদারকে ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টম্বর সনাতন ধর্মের রীতিনীতি অনুযায়ী বিয়ে করেন।
পরবর্তীতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে বিয়ের দলিল সম্পাদনের লক্ষ্যে গত ২০২০ সালের ১৮ মার্চ খুলনার নোটারী পাবলিক এ্যাডভোকেট এমদাদুল হকের কার্যালয় হতে তাদের হিন্দু বিয়ের এ্যাফিডেফিট সম্পাদন করেন।
বিয়েকালীন প্রতাপ বালার কর্মস্থল ছিল বাগেরহাট জেলায়। অপরদিকে বীনা সরকারের কর্মস্থল খুলনা মহানগরীতে। তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে খুলনার সোনাডাঙ্গা মডেল থানার দেনারাবাদ লেন-২ এ বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
একপর্যায়ে স্বামী প্রতাপ বালা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত স্ত্রী বীনা সরদারের সঙ্গে সব প্রকার যোগাযোগ হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে বটিয়াঘাটা সদরে মেস ভাড়া করে থাকা শুরু করেন এবং পুনরায় বিয়ে করতে কনে দেখা শুরু করেন। একপর্যায়ে ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ইউনিয়নের মাদরাসা শিক্ষক দিপংকর মণ্ডলের কলেজপড়ুয়া মেয়ে মৌসুমি মণ্ডলকে পছন্দ করে গত ৩ মে তারিখে কাউকে কিছু না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন।
বৃহস্পতিবার বর প্রতাপ মন্ডল শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী মৌসুমীকে ধুমধামের সঙ্গে বাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করে। বিষয়টি জানতে পেরে প্রথম স্ত্রী বীনা সরদার ডুমুরিয়া থানা ও উপজেলা প্রশাসনের দারস্ত হয়ে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে অভিযোগ জানান।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিয়ে বন্ধের আইনগত কোনো সুযোগ না থাকায় লকডাউনে সরকারি বিধি নিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বোচ্চ ১০ জনের বেশি লোক সমাগম না করতে কনের বাবা দিপংকর মণ্ডলেক নির্দেশ দেন। এতে আস্থা না পেয়ে বীনা সরদার তার সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে কৈয়া এলাকায় বিয়ে করতে আসার পথে স্বামী প্রতাপ বালাকে আটকাতে ওঁৎ পেতে থাকেন।
বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে বরসহ যাত্রীরা গোপনে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে বড়ডাঙ্গায় বিয়ে বাড়িতে ঢোকার পথিমধ্যে বীনা তার স্বামী প্রতাককে গাড়ি থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করতেই তিনি দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পান।
বর যাত্রীরাও ছত্রভঙ্গ হয়ে এদিক-সেদিন গা ঢাকা দেয়। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে খবর পেয়ে থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিয়ে বাড়িতে হাজির হয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করেন।
বীনা সরদার বলেন, আমরা পরস্পরকে ভালোবেসে ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে এবং নোটারী পাবলিক কার্যালয়ে বিয়ের দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। অথচ গত প্রায় তিন মাস যাবৎ প্রতাপ আমার বাসায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে এবং আমাকে এড়িয়ে চলে পুনরায় গোপনে আবার একটি মেয়েকে বিয়ে করছে। তাই স্ত্রী হিসেবে আমি এ বিয়ে মানতে পারিনা বলে ঠেকানোর চেষ্টা করেছি।
বিয়ে বাড়ির সামনে বরযাত্রী হিসেবে আসা কয়েকজন তাকে ও তার সহযোগীদের লাঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
প্রতাপ বালা বলেন, বীনা সরদারের সঙ্গে আমার কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক নেই। তিনি বিয়ের ভুয়া কাগজপত্র সৃষ্টি করে নিজেকে আমার স্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন।
এ বিষয়ে ডুমুরিয়া থানার ওসি মো. ওবায়দুর রহমান জানান, বীণা সরকারের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্ত করতে একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। এরমধ্যে বীনা সরদার প্রতাপ বালার বিরুদ্ধে আদালতে যৌতুক আইনে একটি মামলা করেছেন যা বর্তমানে চলমান রয়েছে। সে কারণে স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে বীনাকে আদালতে যেতে বলা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।