আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক এবং বিমা সংস্থার বেসরকারিকরণ, সংযুক্তিকরণের প্রতিবাদে ফের দু’দিনের ধর্মঘট শুরু করলেন ব্যাংক কর্মীরা৷ ৩৬৫ দিনের দুর্ভোগ এড়াতে এই দুদিন সহ্য করতে বলছেন তারা৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
নামে দু’দিনের ধর্মঘট, আসলে চার দিনের৷ গত ১৩ মার্চ ছিল মাসের দ্বিতীয় শনিবার, অর্থাৎ ব্যাংক বন্ধ৷ পরদিন রবিবারের সাপ্তাহিক ছুটি৷ এর সঙ্গে জুড়ে সোম এবং মঙ্গলবারের ব্যাংক ধর্মঘট সারা দেশজুড়ে৷ অর্থাৎ গ্রাহকেরা পরিষেবা পাবেন না টানা চারদিন ধরে৷ জমে ওঠা কাজের চাপের কারণে এই দুর্ভোগের জের চলবে আরও কয়েকদিন৷ তার পরেও ধর্মঘটে যাচ্ছেন দেশের প্রায় ১১ লাখ ব্যাংক কর্মী৷ ওরা নজর ফেরাতে চাইছেন এখনকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিলগ্নিকরণের নীতির দিকে, যা দেশের প্রায় সর্বত্রই ঘটে চলেছে ২০১৪ সালের পর থেকে, ধারাবাহিকভাবে৷ এবারের কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করার সময়ই যেমন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করে দিয়েছিলেন দুটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক এবং একটি রাষ্ট্রায়ত্ব বিমা সংস্থা ২০২১–২২ অর্থবর্ষেই বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ তার জন্য কোন কোন সংস্থাকে বেছে নেওয়া হবে, তা এখনও ঘোষণা হয়নি৷ কিন্তু শেষ খবর, শুধুই দুটি ব্যাংক এবং একটি বিমা সংস্থা নয়, সরকারের নীতি আয়োগ কমপক্ষে এক ডজন রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার তালিকা তৈরি করেছে, যেগুলির বেসরকারিকরণ হবে খুব শিগগিরই৷
ব্যাংক কর্মীদের সর্বভারতীয় সংগঠন বিইএফআই–এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাশগুপ্ত হিসেব দিয়েছেন, ‘‘এখন ১২টা ব্যাংক আছে, সংযুক্তিকরণের পর৷ এই সরকার আসার পর যে প্রক্রিয়া প্রবলভাবে শুরু হয়েছে৷ প্রথমে পাঁচটা সহযোগী ব্যাংককে যুক্ত করেছে স্টেট ব্যাংকের সঙ্গে, তার পর ব্যাঙ্ক অফ বরোদার সঙ্গে বিজয়া ব্যাংক, দেনা ব্যাঙ্ককে যুক্ত করেছে৷ তৃতীয় পর্বে ‘মেগা মার্জার’ হয়েছে৷ ১০টা ব্যাংককে চারটে ব্যাংকে পরিণত করা হয়েছে৷ ফলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সংখ্যা এখন ১২৷’’কর্মী সংগঠনগুলির আশঙ্কা এর মধ্যে যে কোনও দুটো ব্যাংক বেসরকারি হাতে গেলে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৷ কিন্তু সেখানেই শেষ হবে না, কারণ সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে যে, সব ক্ষেত্রেই নূন্যতম এক এবং সর্বোচ্চ চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার দায়িত্ব সরকার বহন করবে৷ অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকের সংখ্যা ভবিষ্যতে আরও কমবে!
এর পাশাপাশি আরও কিছু প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উঠে আসছে৷ ছোট ব্যাংকগুলির সংযুক্তিকরণ হচ্ছে এই যুক্তিতে, যে তাদের কারও কারও অনুৎপাদিত সম্পত্তির পরিমাণ এতই বেড়ে গেছে, যে তুলনায় ভাল ব্যবসা করা ব্যাংকের সঙ্গে তাদের না জুড়ে দিলে প্রাণসংশয় হবে৷ কিন্তু যে কারণে ব্যাংকগুলির নাভিশ্বাস উঠছে, অর্থাৎ অনাদায়ী ঋণ, তা উদ্ধারে কি সরকার কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে? বরং দেখা যাচ্ছে, দেশের বড় শিল্পপতিরা, যাদের অনেকেই আবার বর্তমান সরকারের ঘনিষ্ঠ, ব্যাংকের থেকে ধার নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না৷ সরকারের কার্যত কোনও পরিকল্পনা দেখা যায়নি এই ঋণখেলাপিদের থেকে টাকা উদ্ধারের৷ উল্টে তাদের নামের তালিকা অবধি প্রকাশ্যে জানাতে নারাজ সরকার৷
এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ গ্রাহককে দুর্ভোগে ফেলে কি সরকারকে কথা শোনানো যাবে? বিইএফআই–এর জাতীয় সাধারণ সম্পাদক জয়দেব দাশগুপ্তর বক্তব্য, ‘‘সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তো অবশ্যই হবে৷ কিছু তো অসুবিধা হবেই৷ কিন্তু দুদিনের অসুবিধে সহ্য করে যদি ৩৬৫ দিনের অসুবিধে কাটানো যায়, সেটাই তো ভাল?’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।