জুমবাংলা ডেস্ক : কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলায় ধর্ষণচেষ্টার সময় মসজিদের ইমাম মো. মিজানুর রহমান খোকনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ময়না আক্তার (২৯) নামে এক নারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার ভাই মনির হোসেনকে (২৫) সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছন বিচারক। এ ছাড়া ময়না আক্তারকে দুই লাখ টাকা এবং মনির হোসেনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আজ রোববার সকালে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আবদুর রহিম আসামিদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ময়না আক্তার কুলিয়ারচর উপজেলার উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়ার দুবাই প্রবাসী নজরুল ইসলামের স্ত্রী। অন্যদিকে নিহত ইমাম মো. মিজানুর রহমান খোকন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের পূর্ব ভরাটি গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় মিজানুর রহমান খোকন ময়মনসিংহের নান্দাইল থানার বীরঘোষপালা এলাকার মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হন। ২০১০ সালে তিনি কুলিয়ারচরের উছমানপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের বিলপাড়া পাঞ্জেগানা মসজিদে ইমামতি শুরু করেন। ইমামতির পাশাপাশি সেখানকার মক্তবেও শিশুদের পড়াতেন তিনি।
২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত ৩টার দিকে কোনাপাড়া এলাকায় এক ব্যক্তিকে ভারী একটি বস্তা নিয়ে যাওয়ার সময় বিষয়টি এলাকার কয়েকজনের নজরে এলে তারা চোর ভেবে চিৎকার শুরু করলে ওই ব্যক্তি বস্তাটি ফেলে পালিয়ে যান। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আরেক ব্যক্তিও মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যান। পরে জানা যায়, বস্তার ভেতরে একটি লাশ রয়েছে এবং সেটি স্থানীয় পাঞ্জেগানা মসজিদের ইমাম হাফেজ মো. মিজানুর রহমান খোকনের।
পরে ১৫ আগস্ট সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বস্তাবন্দী লাশ এবং নম্বরবিহীন একটি ওয়াল্টন মোটরসাইকেল জব্দ করে। ওইদিন দুপুরে ইমাম হত্যায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ প্রথমে ময়না আক্তারকে ও পরে তার ভাই মনির হোসেনকে আটক করে। এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট রাতে নিহতের বড় ভাই মো. নূরুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে কুলিয়ারচর থানায় মামলা করেন।
পুলিশ এই মামলায় ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেনকে গ্রেপ্তার দেখানোর পর ১৬ আগস্ট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ময়না আক্তার।
ইজ্জত বাঁচাতে ইমাম মিজানুর রহমান খোকনকে ময়না আক্তার খুন করেন বলে তিনি তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন। তিনি জানান, ঘটনার রাতে ময়না আক্তারের ঘরে গিয়ে মিজানুর রহমান খোকন তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি মিজানকে বাধা দেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে ময়না আক্তার খাটে মশারি টানানোর রশি দিয়ে মিজানের গলা পেঁচিয়ে সজোরে টানতে থাকেন। এতে মিজানের মৃত্যু হয়। পরে লাশের হাত-পাঁ বেঁধে সেটি ঘরে থাকা বস্তায় ভরার পর ভাই মনির হোসেন বস্তাবন্দি লাশটি রাস্তায় পাশে ফেলে রেখে যান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কুলিয়ারচর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কোহিনূর মিয়া ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল ময়না আক্তার ও তার ভাই মনির হোসেনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। রোববার মামলার রায় ঘোষণা করেন আদালত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।