রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : নওশা মিয়া (৪৮) এবার দুই বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। এই প্রখর রোদে একাই সে ধান কাটছিলেন। কোনো কামলা বা কৃষিশ্রমিক পাননি।
জুমবাংলাকে নওশা জানান, গ্রামে এখন ধান কাটার কামলা নেই বললেই চলে। বেশির ভাগ শ্রমজীবী লোকজন ঢাকা বা চট্টগ্রাম থাকেন। যারাও গ্রামে আছেন, দিনমজুরি ৬ থেকে সাড়ে ৬শ টাকা চান।
নওশার বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কুমারগাড়ী গ্রামে। মাথায় গামছা বেঁধে আজ শুক্রবার তিনি এই গ্রামের সাপছার বিলে কাজ করছিলেন।
শুধু পলাশবাড়ী নয়, একই জেলার গোবিন্দগঞ্জ, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্যাপুর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলায়ও এবার কৃষিশ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে।
কয়েকজন কৃষক বলেন, কামলার অভাবে এবার সময়মতো ধান ঘরে তোলা যাচ্ছে না। এদিকে আকাশেরও ঠিক নেই। প্রায় দিনই ঝড়-বৃষ্টি আসি-আসি করছে। দ্রুত মাঠ থেকে ধান তুলতে না পারলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
পলাশবাড়ীর কুমারগাড়ী গ্রামেরই শাহ আলম বগার বিলে ধান কাটছিলেন। তিনি বর্গাচাষি। অন্যের তিন বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। দেড় বিঘায় ব্রি ২৮, বাকি জমিতে গুটি স্বর্ণা ধান চাষ করেছিলেন।
শাহ আলম বলেন, ব্রি ২৮ জাতের ধান তিনি শ্বশুরবাড়ির লোক নিয়ে এসে কেটেছেন। বাকি দেড় বিঘার গুটি স্বর্ণা একাই কাটতে হচ্ছে। কামলা সংকট ও উচ্চমজুরির কারণে কাউকে নিতে পারছেন না।
কৃষকেরা জানান, ব্রি ২৮সহ চিকন জাতের ধান বৈশাখের শুরুর দিকেই ফলে। গুটি স্বর্ণাসহ মোটা জাতের হাইব্রিড জাতের ধান মাসের শেষ দিকে পাকে। অন্যান্যবার প্রায় সব জাতের ধান বৈশাখের শেষাশেষি বেশির ভাগ উঠে গেলেও এবার এখনো অর্ধেক মাঠেই রয়ে গেছে।
গত কয়েক দিনে পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জের সাপছা, বগা, নাটোগাড়ী, আজরা, নাকাই ও আলসিয়াসহ বিভিন্ন বিল ঘুরে প্রায় একই চিত্র দেখা গেছে। কোনো বিলেই অর্ধেকের বেশি ধান কাটা হয়নি।
গোবিন্দগঞ্জের ডুমুরগাছা গ্রামের কৃষক শামসুল আলম বলেন, তিনি ৫ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। নিজে মাঠে কাজ করতে পারেন না। তাই কামলাই ভরসা। এবার দিনমজুরিভিত্তিতে কামলা পাওয়াই কঠিন। যাদের পাওয়া যায়, তারা চুক্তিভিত্তিক কাজে আগ্রহী। শতকপ্রতি তাদের ১২০-১৩০ টাকা দিতে হয়।
সদর উপজেলার কৃষক রফিকুল ইসলাম জেলা শহরে থাকেন। বাড়ি বল্লমঝাড় গ্রামে। তিনি জুমবাংলাকে বলেন, এখন গ্রামে শ্রমজীবী মানুষ কম থাকেন। যারা থাকেন, তারা কৃষি কাজ কম করেন। অনেকে অটোরিকশা, ইজিবাইক চালান। এতে পরিশ্রম কম হয়। তারা এই প্রখর রোদে অত কষ্ট করে ধান কাটতে কেন যাবেন?
রফিকুল বলেন, কৃষিশ্রমিক কমে যাওয়ায় বেশি সংকটে পড়েছেন গৃহস্থ ব্যক্তিরা, যারা নিজে ক্ষেতে কাজ করতে পারেন না। যারা নিজে ক্ষেতে কাজ করেন, তারা পরিশ্রম করে হলেও ফসলটা তুলে আনেন। কিন্তু যারা কামলার ওপর নির্ভরশীল, তাদের উচ্চ মজুরিতে ফসল তুলতে হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।