বিনোদন ডেস্ক : ভারতে এখন চলছে ক রো না ম হা মা রি র তৃতীয় ঢেউ। কো ভি ড-১৯ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। অনেক তারকা ক রো না ভা ই রা সে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে ক রো না য় আক্রান্ত হয়েছিলেন জনপ্রিয় বলিউড অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। এই অভিনেত্রী জানান, ধাপটি তার জন্য অনেক কঠিন ছিল।
দীপিকার ভাষায়, ‘আমার মতে, প্রথমবার লকডাউন অনেক কঠিন ছিল। আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে সেটি নিয়েই চিন্তিত ছিলাম। এই মহামারির বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করছিলাম। দ্বিতীয়বার লকডাউন সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, কারণ সেই সময় আমিসহ আমার পরিবারের সবাই কোভিড পজিটিভ হয়েছিলাম।’
কোভিডের পর তার জীবন পাল্টে গিয়েছিল উল্লেখ করে ‘বাজিরাও মাস্তানি’ সিনেমাখ্যাত এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আমাকে চেনাই যেতো না। হয়তো আমাকে যে ওষুধ দেওয়া হয়েছিল সেটির কারণে অনেক হরমোন বেড়ে গিয়েছিল। কোভিড খুবই অদ্ভুত। কারণ এর ফলে শরীর ও মনে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতি কাজ করে। যখন অসুস্থ ছিলাম সবকিছু মোটামুটি ঠিক ছিল। কিন্তু তারপর দুই মাস কাজ থেকে ছুটি নিতে হয়েছে, কারণ কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। ধাপটি আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল।’
দীপিকা পাড়ুকোন অভিনীত পরবর্তী সিনেমা ‘গেহেরিয়া’। সকুন বাত্রা পরিচালিত সিনেমাটি আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পাবে। এছাড়া শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘পাঠান’, প্রভাসের সঙ্গে নাগ অশ্বিনের একটি সিনেমায় এই অভিনেত্রী অভিনয় করবেন। হলিউডের ‘দ্য ইন্টার্ন’ সিনেমার রিমেকে দীপিকার অভিনয়ের কথা রয়েছে।
আরও পড়ুন : দীপিকা পাড়ুকোনকে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখতেন মা-বাবা। বলিউডের এই সময়ের সবচেয়ে দামী অভিনেত্রী দীপিকা পাড়ুকোন। ব্যাডমিন্টন ছেড়ে রুপালি পর্দার জগতে এসে তিনি অর্থ-নাম-যশ-খ্যাতি-প্রতিপত্তি সবই পেয়েছেন। আবার এই অভিনয়ই তার রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে! ১৫ বছর ধরে নানা চরাই-উৎরাই পেরিয়ে সাফল্য দেখেছেন দীপিকা। তার পরও তার আতঙ্ক, যদি আর ভালো চরিত্র না পান! এই ভয় আজও তাকে মাঝ রাতে ঘুম থেকে তুলে দেয়।
পারিবারিক পরিচয় বলছে, সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছেন দীপিকা। ভারতের জাতীয় স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় প্রকাশ পাড়ুকোন তার বাবা। প্রকাশের দুই মেয়ে দীপিকা আর অনীশা। বাবার মতো দুই মেয়েও খেলায় তুখোড়। হাতে তুলে নিলেই ব্যাডমিন্টন র্যাকেট যেন তাদের কথা শুনত। কিন্তু দশম শ্রেণিতে উঠেই স্বপ্ন বদলে যায় দীপিকার। ঠিক করেন, সবুজ কোর্ট নয় রুপালি পর্দায় দাপিয়ে বেড়াবেন।
দীপিকার এই চাওয়ায় কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি বাবা প্রকাশ পাড়ুকোন এবং মা উজ্জ্বলা। দীপিকাও ক্রমশ নিজেকে তৈরি করতে থাকেন অভিনয়ের জন্য। শুরু করেন মডেলিং। প্রথম সারির বিজ্ঞাপনের প্রচার মুখ ছিলেন তিনি। তবে অভিনয় দুনিয়ার নজর কাড়েন ক্লোজ আপের বিজ্ঞাপন দিয়ে। স্রেফ পাজামা-টপ পরা দীপিকার মুখের সারল্য, ঝলমলে হাসি ভালো লেগেছিল বলিউডের।
এর পরই ২০০৬ সালে দীপিকা সুযোগ পান বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক হিমেশ রেশমিয়ার মিউজিক ভিডিও ‘নাম হ্যায় তেরা’য়। সেই তার প্রথম সাফল্য। যেখান থেকে তিনি এক লাফে শাহরুখ খানের নায়িকা। ফারহা খানের ছবি ‘ওম শান্তি ওম’-এ। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন দীপিকা। রাতারাতি জনপ্রিয়।
তবে পরের বছরই সেই জনপ্রিয়তায় ভাটা। ‘বাচনা অ্যায় হাসিনো’ ছবিতে সাবেক প্রেমিক রণবীর কাপুরের বিপরীতে তিনি। ছবিটি সুপার ফ্লপ হয়। দীপিকার অভিনয়ের নিন্দাও হয়। তবে রণবীর-দীপিকা জুটি জনপ্রিয়তা পায়। কারণ, তাদের প্রেমের সম্পর্ক। সে সময় দীপিকা অভিনয়ে মন দেন। প্রবীণ অভিনেতা অনুপম খেরের অভিনয় শেখানোর স্কুলে ভর্তি হন। প্রশিক্ষণ নেন। ধীরে ধীরে তার অভিনয় ধারালো হয়।
একের পর এক ছবিতে অভিনয় আর প্রেম। ভেবেছিলেন এভাবেই দিন যাবে। কিন্তু হঠাৎই দীপিকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন রণবীর। নায়িকা জানতে পারেন, তার প্রেমিক এখন অন্য কারও হয়ে গেছে। তিনি হলেন ক্যাটরিনা কাইফ। অন্ধকার নেমে আসে দীপিকার চোখে। ছবির খারাপ ব্যবসা, অভিনয় নিয়ে কটূক্তি শুনেও যে মেয়ে ভেঙে পড়েননি, সেই মেয়েই তখন ভেঙে খানখান।
টানা তিন মাস দীপিকা প্রতিদিন উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু গুঁড়িয়ে গেছেন। মানসিক দিক থেকে এতটাই ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন যে, তাকে নাকি খাটের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখতেন তার বাবা-মা প্রকাশ ও উজ্জ্বলা। যাতে তাদের মেয়ে পালিয়ে যেতে না পারেন, আ ত্ম হ ত্যা করতে না পারেন। এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত একা ঘরে কাটাতেন দীপিকা। সারাক্ষণ কান্নাকাটি। খাওয়া-ঘুম নেই।
সে সময় দীপিকাকে নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতেন মা-বাবা আর আড়ালে চোখের পানি ফেলতেন। দীপিকা পরে নিজেও জানিয়েছেন, ওই তিন মাস তিনি অন্ধকার গুহায় বন্দি ছিলেন। যত চেষ্টা করেছেন আলোর মুখোমুখি হওয়ার, অন্ধকার যেন বেশি করে গ্রাস করতো তাকে।
বলিউডে অনেকেই ভেবেছিলেন, দীপিকা আর ফিরবেন না। কিন্তু তিনি ঠিকই উঠে দাঁড়িয়েছেন। ২০১৩ সালে ফেরেন প্রবল ভাবে। এক বছরে দুটি হিট ছবির নায়িকা তিনি। ‘ইয়ে জওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’ আর ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’। প্রথম ছবির নায়ক তার সাবেক প্রেমিক রণবীর কাপুর। যাকে ক্যাটরিনা কাইফ কেড়ে নিয়েছিলেন।
সাল ২০১৫। সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘গোলিও কা রাসলীলা: রাম লীলা’য় তিনি লীলা। রণবীর সিং রাম। এই ছবিতে দীপিকার অভিনয়ের জোশে থমকে গিয়েছিল বলিউড। বাস্তবের ‘লীলা’ পেয়েছিলেন তার জীবনের ‘রাম’কে। এই ভালোবাসায় মন বসাতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল দীপিকার। তিনি ভালোবাসায় বিশ্বাস হারিয়েছিলেন। বিশ্বাস হারিয়েছিলেন মানুষের উপর থেকেও। এত অবিশ্বাস নিয়েও ভুলতে পারতেন না রণবীর কাপুরকে।
সম্ভবত সেই জায়গা থেকেই পরবর্তীতে একই নামের মালিকের হাতে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন দীপিকা। কাপুর না হয় সিং হল। রণবীর তো তারই থাকল! এই টানে বিয়ের অনেক বছর পরও তাঁর মসৃণ গ্রীবা থেকে চুলের আড়াল সরলেই জ্বলতে দেখা যেত সাবেক প্রেমিক রণবীর কাপুরের নামের উল্কি!
সেই দীপিকা জ্বলে-পুড়ে নিঃশেষিত হতে হতে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছেন। শাহরুখ খানের সমান পারিশ্রমিক দাবি করতে পেরেছেন। পরিচালক সঞ্জয় লীলা বানসালির একের পর এক ছবির জনপ্রিয় নায়িকা হয়েছেন। নিজে ছবি প্রযোজনাও করেছেন।
যদিও অতীতের ভয়, নিরাপত্তাহীনতা আজও তাড়া করে ফেরে দীপিকাকে। ঘরে-বরে থিতু হয়েও নায়িকা মাঝ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন, তার হাতে আর ভালো চরিত্র নেই! তাকে আর কেউ নিত্য নতুন চরিত্রের জন্য ডাকছে না। অভিনয় ছেড়ে গেলে কী নিয়ে বাঁচবেন তিনি? তার যে এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। অনেক কিছু দেওয়া বাকি ভারতীয় চলচ্চিত্রকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।