আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরানের ওপর থেকে ধাপে ধাপে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার যে পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের এ সংক্রান্ত বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় ইরান তার অবস্থানের কথা জানিয়ে দিল। এই কমিশন এ রকম একটি ধারণা নিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছে। খবর পার্সটুডে’র।
গতকাল পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ইরানের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। যৌথ কমিশন পরবর্তী বৈঠক আগামী মঙ্গলবার ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। বৃথা সময় নষ্ট না করে কী করে দ্রুত ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা যায় সে বিষয়সহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে ভিয়েনা বৈঠকে আলোচনা হবে।
ইরানের একটি সূত্র জানিয়েছে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ীর নির্দেশ অনুসারে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলেই কেবল ইরান পরমাণু সমঝোতায় দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশন ধাপে ধাপে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার যে পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়ার কথা বলছে এবং আমেরিকার সঙ্গে ইরানের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ আলোচনার যে কথা বলছে ইরান তা মানবে না। পরমাণু সমঝোতা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে যত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার সবই প্রত্যাহার করতে হবে।
ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইয়্যেদ আব্বাস আরাকচি সরকারের একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে বলেছেন, আমেরিকা যেমন কোনো রকমের আলোচনা ছাড়াই ২০১৮ সালে তেহরানের বিরুদ্ধে অবৈধ ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তেমনি এখন আলোচনা ছাড়াই তা প্রত্যাহার করতে হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা ছাড়া আমেরিকার সঙ্গে তেহরানের কোনো রকমের আলোচনা হবে না।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, পরমাণু সমঝোতা বিষয়ক যৌথ কমিশনের বিবৃতির ব্যাপারে ইরানের প্রতিক্রিয়া থেকে দুটি বিষয় উঠে এসেছে যা কিনা পরমাণু সমঝোতাকে টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, পরমাণু সমঝোতার গঠন কাঠামো অনুযায়ী ইরান তার অধিকারের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। কেননা এটি একটি বহুপক্ষীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি যার প্রতি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বর্তমান অচলাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ইরান যৌক্তিক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ইরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টির নীতি থেকে সরে আসবে কিনা সেটাই এখন প্রশ্ন। যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যায় এবং ইরানের ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমনকি অন্য দেশকেও এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলতে বাধ্য করছে ওয়াশিংটন। এরপর পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ইরানও ধাপে ধাপে পরমাণু সমঝোতায় দেয়া নিজের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন আমেরিকাকে শুধু মুখের কথায় নয় কিংবা কাগজে লিখিত আকারে নয় বরং বাস্তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। তবেই ইরান এতে ফিরে আসবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।