জুমবাংলা ডেস্ক: শীতের শুরুতেই খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের ধুম পড়েছে বাচাপুকুর গ্রামে গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে। আর জুটেছে কাজ কিছু মানুষের। এতে চাঙা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষি বিভাগ খেজুর চাষ সম্প্রসারণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। পঞ্চগড়-ঠাকুরগাঁও জেলায় নবান্নের শুরুতেই রীতিমত শীত জেঁকে বসেছে। বিশেষ করে কর্তিক মাসের মধ্যভাগ অর্থাৎ নভেম্বরের শুরুতে মৃদু শীত অনুভূত হতে শুরু করে। যা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। অনেকেই বলছেন, আবহাওয়ার বেখেয়ালী আচরণে এমনটি হচ্ছে।
এদিকে আগাম শীত আসায় খেজুরের গুড় তৈরির কারিগররা বেজায় খুশি। তাদের কথা, এবার আগে আগে শীত আসায় গুড় বিক্রি বেশ ভালোই হবে। গাছ থেকে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে বর্তমানে তারা ভীষণ ব্যস্ত। বলতে গেলে খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের ধুম পড়েছে। অপরদিকে গ্রামের বধূরা খেজুরের গুড় দিয়ে তৈরি করছেন শীতের বিভিন্ন ধরনের পিঠা, পায়েস ও মিষ্টান্নসহ নানা মুখরোচক খাবার।
ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নের বাচাপুকুর গ্রামে পা রাখলে শীতের সিগ্ধ বাতাসে ভেসে আসে এক ধরনের মিষ্টি ঘ্রাণ। গ্রামের সব বয়সের নারী-পুরুষ এতোটাই ব্যস্ত যে অন্যদিকে তাকানোর সময় তাদের হাতে নেই। লোভনীয় খাবার খেজুরের গুড় তৈরিকে কেন্দ্র করে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে পুরো গ্রাম। আগাম শীত বেকারদের গুড় তৈরির কাজে টেনে এনেছে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে পূর্বাকাশে সূর্য উঁকি দেয়ার আগেই শিশির ভেজা গ্রামের রাস্তা মাড়িয়ে লোকজনের ছুটে চল শুরু হয়। কুয়াশা কেটে যাওয়ার আগেই গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পাটালি গুড় তৈরি শুরু হয় বাচাপুকুর গ্রামে
বর্তমানে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ কেজি গুড় উৎপাদন করছেন তারা। পাশাপাশি ১৫ থেকে ২০ হাঁড়ি রস বিক্রি করছেন গাছিরা। আর এই খেজুরের প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ২৫০ টাকায়।
জানা যায়, কয়েক যুগ আগে সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের মোগন ইক্ষু খামারে ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের উদ্যোগে প্রায় ১৫০০ খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে ওঠে একটি বাগান, অযত্নে ও ফসলি আবাদের কারনে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে বাগানে ৭০০টির মতো খেজুরের গাছ রয়েছে। নাটোর লালপুর থেকে আসা ৮ জন গাছি তারা প্রতিদিন গাছগুলোতে হাঁড়ি তোলেন ও নামান। সেই রস দিয়ে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক প্রতিদিন গুড় তৈরি করেন।
দর্শণার্থীরা বলেন, খেজুরের রস দিয়ে গুড় তৈরির দৃশ্য দেখতে ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমরা এখানে এসেছি। সরাসরি গাছ থেকে রস পেয়ে গুড় তৈরির প্রক্রিয়াটি দেখলাম। খেজুর বাগানের আমরা টাট্ক রস ও প্রাকৃতিক পরিবেশে তৈরি গুড় পাচ্ছি। এই গুড় অনেক সুস্বাদু এখানকার গুড় জেলা পেরিয়ে দেশের বিভিন্নস্থানের মানুষ এসে নিয়ে যাচ্ছে।
ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান মনির জানান, ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের আওয়াতায় থাকা এ খেজুর বাগানটি এক লক্ষ বাহাত্তর হাজার টাকায় লিজ নিয়েছি। শীত বাড়লে গুরু উৎপাদন বাড়বে। তবে শীতের শুরু থেকেই এখানে প্রতিদিন খেজুরের রস গুড় তৈরি করা হয়। সেটা দেখার জন্য অনেক দর্শনার্থী ভোর পাঁচটা থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত ভিড় জমান। তারা আমার কাছ থেকে গুড় ও রস কিনে নিয়ে যান।
ঠাকুরগাঁও উপজলা নির্বাহী অফিসার উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান বলেন, প্রতিবছর মতো এ বছরও ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নের বাচাপুকুর গ্রামে খেজুরের গুড় তৈরি হচ্ছে। শীত বাড়লে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় আরও বাড়বে। আমরা তাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বক্ষণিক মনিটরিং করব। জেলায় খেজুর গুড় উৎপাদন আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।