জুমবাংলা ডেস্ক : ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করতেই ৩১ দফা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রবিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের হোটেল ফার্সে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের উদ্যোগে ইফতার মাহফিলে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ৩১ দফা উপস্থাপনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি এ কথা জানান।
তারেক রহমান বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলো যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে একসাথে রাজপথে ছিলাম; মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, বাক-স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামে ছিলাম, কাজ করেছিলাম, সেই সকল দল একসাথে বসে আলোচনা করে প্রায় দুই-আড়াই বছর আগে আমরা জাতির সামনে ৩১ দফা উপস্থাপন করেছিলাম। কারণ একটিই। আমরা দেখিছিলাম, পলাতক যে স্বৈরাচার তারা কীভাবে দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান সেটি শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পারে, মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হতে পারে, মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে, বিচার ব্যবস্থা হতে পারে, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হতে পারে, পুলিশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন হতে পারে, বিদ্যুৎ সেক্টর হতে পারে- প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছিল তারা। সবচেয়ে প্রথমেই যেটি ধ্বংস করেছিল সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা। সেটাকে বিতর্কিত এবং ধ্বংস করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আমরা যারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে-সংগ্রামে ছিলাম, আমরা সকলে বিশ্বাস করি যে- যেসব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল, সেসব প্রতিষ্ঠান আমাদেরকে মেরামত করতে হবে। যেহেতু আমাদের রাজনীতি হচ্ছে বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের জনগণকে ঘিরে, আমাদের রাজনীতির বড় পুঁজি হচ্ছে এই দেশের জনগণ; কাজেই এই রাষ্ট্রের কাঠামো যদি আমরা মেরামত না করি, দেশের মানুষকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারব না, মানুষের প্রত্যাশা অনুয়ায়ী গড়ে তুলতে পারব না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজকে অনেক ব্যক্তি সংস্কার নিয়ে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশে সংস্কার প্রয়োজন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোর যে সংস্কার প্রয়োজন, রাষ্ট্র মেরামতের যে সংস্কার প্রয়োজন- এটা সবচেয়ে আগে আমরাই বলেছিলাম।
এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের সময়ে একটি টকশোতে তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যেকার আলোচনার বিষয়বস্তু ‘রোগীর কাছে অ্যাম্বুলেন্স কোন রাজনৈতিক দল দ্রুত নিয়ে যেতে পারবে’ তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কে দেশ পরিচালনা করবে, জনগণের যদি তা নির্ধারণের সুযোগ থাকে- তাহলে জনগণের দাবি নিয়ে, জনআকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করতে হবে। জনগণের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের অবশ্যই চিন্তাভাবনা করা উচিত। জনগণই আমাদের রাজনীতির বড় পুঁজি।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দমাতে শেখ হাসিনার নির্দেশে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদবিরোধী দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম-খুন করা হয়েছে। এসবের বিচার হতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত এ দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেবে না।
তিনি বলেন, সংস্কারের নামে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার পাঁয়তারা চলছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া একসাথে চলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণ এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে রয়েছে। তাই চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে বলব, অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ ঘোষণা করুন।
এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এসএম শাহাদাতের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির মির্জা আব্বাস, নিতাই রায় চৌধুরী, ড. মাহদী আমিন, রিয়াজউদ্দিন নসু, আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, জামায়াতের মো. কামাল হোসেন, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের এমএন শাওন সাদেকী, মুসলিম লীগের নাসিম খান, ডিএলের খোকন চন্দ্র দাস, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণঅধিকারের ফারুক হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
ইফতার মাহফিলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান লিটন, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব তমিজউদ্দিন টিটু, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।