জুমবাংলা ডেস্ক : মোবাইল আর্থিক সেবা নগদে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশাসক নিয়োগ কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। আগামী দশ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর এবং অর্থ সচিবকে জবাব দেওয়ার জন্যে সময় বেঁধে দিয়েছে উচ্চ আদালত।
মঙ্গলবার হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ফারহাদ মাহবুব এবং বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।
নগদের নির্বাহী পরিচালক মো. সাফায়েত আলমের দায়ের করা একটি রিট পিটিশানের পরিপ্রেক্ষিতে এই রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
সাফায়েত আলমের পক্ষে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের নেতৃত্বের একটি আইনজীবী প্যানেল এই রিট পরিচালনা করেন।
প্যানেলের অন্য সদস্যরা ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মোঃ রুহুল কুদ্দুস (কাজল), ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান এবং ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। গত ১০ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে রিটটি দায়ের করেন ব্যারিস্টার নওশাদ জমির।
সিনিয়র আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের দুটি বিষয় প্রতিপালন করা হয়নি। বিধান অনুসারে, জনস্বার্থে প্রশাসক নিয়োগ প্রয়োজন, এই সন্তুষ্টি সাপেক্ষে প্রশাসক নিয়োগ করা যাবে। যে আদেশ দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে, তাতে এ ধরনের সন্তুষ্টির বিষয়টি ছিল না। আইনে আছে প্রশাসক নিয়োগ করার আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নগদকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
হাইকোর্টের এই রুলিং বিষয়ে নগদের প্রতিষ্ঠাতা তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘প্রচলিত আইন তোয়াক্কা না করে দেশের অন্যতম সেরা মোবাইল আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদে আইন বহির্ভূতভাবে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে বলে প্রথম থেকেই আমরা বলে আসছিলাম। আজ কোর্টে আমাদের দাবির পক্ষে প্রথম যুক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’
মূলত নগদকে ধ্বংস করার মাধ্যমে অপর একটি প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি সুবিধা দেওয়ার জন্যেই পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করা হয়েছে বলে মনেকরেন নগদের প্রতিষ্ঠাতা তানভীর এ মিশুক।
এর আগে গত ২১ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মুহম্মদ বদিউজ্জামান দিদারকে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। একই সঙ্গে আরো ছয়জনকে প্রশাসকের সহকারি হিসেবেও নগদে পাঠায় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরদিনই সকালেই প্রথমে পুলিশ পাঠিয়ে এবং পরে নিজেরা সশরীরে এসে কোনো রকম লিখিত নির্দেশ দেখানো ছাড়াই জোরপূর্বক নগদ অফিস দখল করে নেন তারা।
দায়িত্ব নিয়েই নগদের কর্মীদের একের পর এক হয়রানি শুরু করেন তারা। একই সঙ্গে ছোট-বড় বিভিন্ন পদে জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করানোসহ অনেককেই মৌখিকভাবে অফিসে না আসতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে কর্মীদেরকে ভয়ভীতিও দেখান প্রশাসক এবং তাদের প্রতিনিধিরা।
তানভীর বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘পরিশোধ ও নিস্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’এ সুস্পস্টভাবে পদ্ধতিগত বিষয়টি পরিস্কারভাবে বর্ণনা করা হলেও তা ভ্রুক্ষেপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বরং অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে নগদে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ঘটনার পরমপরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বিশেষ একটি পক্ষের প্রেসক্রিপশানে নগদের প্রশাসক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
তিনি বলেন, আইন অনুসারে কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের প্রয়োজন হলে আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানকে জানাতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানটিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু নগদের বেলায় আইনের এই ধারা অনুসরণ করেননি ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্ণর আহসান এইচ মনসুর। অথচ ‘পরিশোধ ও নিস্পত্তি ব্যবস্থা আইন ২০২৪’এর ৩১(২) ধারায় এবিষয়ে বাধ্যবাধকতা দেওয়া আছে।
‘আইনগত এই ব্যত্যয় ঘটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ একটি পক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আমরা মনেকরি অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে বাংলাদেশ ব্যাংক নগদে প্রশাসক নিয়োগ করেছে। এ বিষয়ে আইনগত প্রতিকার চাইতেই আমরা আদালতে গিয়েছি এবং প্রাথমিকভাবে আমাদের জয় হয়েছে,’ বলেন তানভীর।
২০১৭ সালে ডাক বিভাগের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালের মার্চে অনুষ্ঠানিভাবে যাত্রা করে নগদ। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় তদানন্তীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয় প্রতিষ্ঠানটির। মূলত এ কারণেই সরকার পরিবর্তণের সঙ্গে সঙ্গে নগদের গায়ে রাজনৈতিক ‘ট্যাগ’ লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাদেশের মোবাইল আর্থিক সেবার বাজারে আবারো মনোপলি প্রতিষ্ঠা করতে রাতারাতি প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে বলে মনেকরেন তানভীর।
নগদের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, সব মিলে নগদ অফিসে একটা ত্রাসের রাজত্ত্ব কায়েম করা হয়েছে এবং তার ফলশ্রুতিতে নগদের লেনদেনের পরিমান অনেক কমে গেছে। মাস দুয়েক আগেও নগদে গড়ে দিনে ১৮’শ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু ইতিমধ্যে তা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নগদের বড় করা বাজার অন্য একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অসীম ক্ষমতা ও দায়িত্ব রয়েছে। তবে আইন বিরুদ্ধ কোনো কাজ তারা করতে পারেন না। আমরা এই ঘটনার প্রতিকার চাইতেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। প্রশাসক নিয়োগ অবৈধ ঘোষণার পাশাপাশি প্রশাসক নিয়োগ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতেই এই রিট করা হয়েছে।’
চট্টগ্রামের সাবেক এমপি বাদলের কবরে হামলার পর আগুন ধরিয়ে দিল দুর্বৃত্তরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।