জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকা, বন্দর নগর চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এস আলম গ্রুপ ‘নিয়ন্ত্রণাধীন’ ব্যাংকগুলো থেকে নগদ টাকা উত্তোলন, পে-অর্ডার ক্লিয়ারিং ও অর্থ হস্তান্তরে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক গ্রাহক ব্যাংকে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা তুলতে চাইছেন, তার অর্ধেকও পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন ইউনিয়ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলনসহ অর্থ হস্তান্তরে সমস্যা হচ্ছে বেশি। তবে এসব ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এ সমস্যা কেবল ঢাকা নয়, সারা দেশের শাখাগুলোতে হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থসহায়তা না পাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সাধারণ গ্রাহকেরা মাত্র কয়েক হাজার টাকা তুলতে হিমশিম খেলেও এ সংকটময় পরিস্থিতিতেও এসব ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে এস আলম গ্রুপ।
ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রাম পটিয়া শাখার এক গ্রাহক ব্যাংকটির ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা করে দুটি পে-অর্ডার জমা দেন ঢাকা ব্যাংক পটিয়া শাখায়। ২০ ও ২১ আগস্ট দুবার জমা দেওয়ার পরও পে-অর্ডার দুটি পাশ করেনি ইউনিয়ন ব্যাংক। ঢাকা ব্যাংক পটিয়া শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকটি ব্যাংকের চেক ও পে-অর্ডার নিয়ে তাদের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বারবার প্লেস করার পরও চেক বা পে-অর্ডারগুলো পাশ করাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। শুধু ইউনিয়ন ব্যাংক নয়, এস আলম গ্রুপ নিয়ন্ত্রণাধীন সব ব্যাংক থেকে নগদ টাকা উত্তোলন, পে-অর্ডার ক্লিয়ারিং ও অর্থ হস্তান্তরে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা না দিতে পারার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা শুধু তাদের একটি শাখার সমস্যা তা নয়, অন্যান্য শাখাসহ পুরো বাংলাদেশেরই একই অবস্থা। যেহেতু এ সময়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নগদ অর্থসহায়তা পাচ্ছে না, তাই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংক খাতে পরিবর্তন হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ে পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ভালো ব্যাংকে জমা রাখছে মানুষ। ব্যাংকগুলো এখন আর বিশেষ ধার না পাওয়ায় অনেক আমানতকারীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য দিনে সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা উত্তোলনের সীমার কারণে এসব ব্যাংকের খারাপ অবস্থা বোঝা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারা দেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো জমা থাকে। সার্কুলেশনে থাকা বাকি টাকা রয়েছে নাগরিকদের পকেট, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে।
আবার সরকার পতনের পর থেকে বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না মানুষ। এর কারণ, সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে দিনে সর্বোচ্চ ১ লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২ লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে ৩ লাখ টাকা নগদ উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এ কারণে খারাপ অবস্থার ব্যাংক থেকে অনেকেই বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছে না। বিশেষ করে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, বাংলাদেশ কমার্স ও ইউনিয়ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের পে-অর্ডার নগদায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সমস্যাগ্রস্ত ন্যাশনাল, পদ্মাসহ আরও কয়েকটি ব্যাংক থেকে টাকা তোলার চাপ রয়েছে। সীমা তুলে নিলেই এসব ব্যাংকের প্রকৃত সংকট বোঝা যাবে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, বেশ আগে থেকেই এস আলমের ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ তারল্যসুবিধা নিয়ে পরিচালিত হচ্ছিল। ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবে ঘাটতি রেখেই লেনদেনের সুযোগ দেন গভর্নর থেকে পদত্যাগ করে পলাতক আব্দুর রউফ তালুকদার। এই তারল্য দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম মানা হয়নি।
সাধারণভাবে কোনো ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকলে চেক ক্লিয়ারিং হয় না। তবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাবঘাটতি রেখে অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে চেক ক্লিয়ারিংয়ের সুযোগ দেওয়া হচ্ছিল।
তবে ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনো ব্যাংককে আর বিধিবহির্ভূত তারল্যসুবিধা দেওয়া হবে না। আবার কোনো ব্যাংক সংকটে পড়লে সেই দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নেবে না।
জানা গেছে, এস আলমের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। গত মে মাসে ব্যাংকটির চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ৩ হাজার ১৬৬ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংকে ২ হাজার ৫৯ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংকে ১ হাজার ৮৫৫ কোটি, ইসলামী ব্যাংকে ১ হাজার ১৪২ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ২২৪ কোটি ও কমার্স ব্যাংকের চলতি হিসাবে ২২২ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। বর্তমানে একমাত্র ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত ৭ আগস্ট ব্যাংকটির চলতি হিসাবে জমা ছিল ৪ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। অন্যসব ব্যাংক ঘাটতিতে রয়েছে। সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।