বিশ্ব ক্রিকেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি বাজারে আফগানদের চড়া মূল্যের চাহিদা সবারই জানা। আইপিএল থেকে বিগব্যাশ, বিপিএল থেকে এসএ ২০– সর্বত্রই রশিদ খান, গুরবাজদের দাপুটে সব উপস্থিতি। তাদের অনেকেই থাকেন দুবাই-আবুধাবিতে। গত এক দশকে আফগান ক্রিকেটের উত্থান বিশ্ব ক্রিকেটে প্রবলভাবে প্রশংসিত।
কিন্তু তাদের নারী দল! ছেলেদের মতো আফগান মেয়েদেরও সম্ভাবনা ছিল। ২০২০ সালে সেই দেশের বোর্ড ২৫ নারী ক্রিকেটারকে কেন্দ্রীয় চুক্তিতেও এনেছিল। পরের বছর আইসিসি তাদের টেস্ট এবং ওয়ানডে মর্যাদাও দিয়েছিল। কিন্তু তার পরই সে দেশে তালেবান সরকার আসার পর নারীদের খেলাধুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলে আসে।
তার পরই সেই নারী ক্রিকেটারদের কেউ চলে যান কানাডায়, কেউ পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ায়। এত বছর পর নির্বাসনে থেকেই তারা ফের একসঙ্গে হয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের জংশন ওভালে কাল সকালে ক্রিকেটীয় যাত্রার নতুন সূচনা করতে যাচ্ছেন। যেখানে তারা ‘আফগানিস্তান নারী একাদশ দল’ নামে ম্যাচ খেলবেন ‘ক্রিকেট উইদাউট বর্ডারস’ নামে একটি দলের বিপক্ষে।
ম্যাচটি খেলার সুযোগ পেয়ে নতুন করে যেন স্বপ্ন দেখেছেন আফগান নারী ক্রিকেটাররা। ‘মনে হচ্ছে, আমরা একটা ইতিহাস সৃষ্টি করতে যাচ্ছি। এই প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। হতে পারে আমাদের এটি প্রীতি ম্যাচ, তবে আমাদের জন্য তা অনেক বড় কিছু। আমরা শুধু দেখিয়ে দিতে চাই, আফগান মেয়েরাও ক্রিকেট খেলতে পারে।’
মেলবোর্নের সংবাদ সম্মেলনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিনাহাফসা হাশামি। ‘আমরা শুধু বন্ধ একটা দরজা খুলে দিতে চাই, যেখান একটি ম্যাচ খেলে আমরা বিশ্বকে বলতে চাই– আমরা হারিয়ে যাইনি, আমরা এখানে আছি।’ সোফিয়া ইউসুফজাইয়ের সুরও আবেগতাড়িত।
মূলত অস্ট্রেলিয়ার ক্যানভেরা, মেলবোর্নে থাকা আফগান শরণার্থীদের মধ্যে থেকে দলটি গড়া হয়েছে। আফগান নারী এই দলটির নবযাত্রায় তাদের পাশে পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে।
ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক হকলি এই ম্যাচটিকে আফগান নারীদের নতুন আশার বলে মনে করছেন। ‘আমি মনে করি, এটা প্রথম ধাপ। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের সহকর্মীরা অ্যাশেজ দেখতে আসছেন এবং আফগান এই নারী ক্রিকেটারদের ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া উভয় দেশের পক্ষ থেকে সমর্থনের ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে। এই ম্যাচটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি নারীদের জন্য আরও সুযোগ তৈরির একটি বার্তা।’
অস্ট্রেলিয়া বরাবরই আফগান নারী ক্রিকেটের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ সদস্য দেশে অবশ্য পুরুষ ক্রিকেটের পাশাপাশি নারী ক্রিকেটেরও জাতীয় দল থাকতে হবে। সেটা আফগানিস্তানে না থাকায় অস্ট্রেলিয়া দল আফগানিস্তানের সঙ্গে সব দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেটীয় সম্পর্ক বাতিল করেছে। তারা কেবল আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে আফগানদের বিপক্ষে খেলে থাকে।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড থেকেও অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আফগান ক্রিকেটে। এবার ক্রিকেটারদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ডব্লিউসিএ থেকেও আফগান নারী ক্রিকেটারদের পাশে থাকা আহ্বান জানানো হয়েছে।
সনদ যাচাইয়ে সাড়া দেননি মুক্তিযোদ্ধা কোটায় উত্তীর্ণ ৪৯ মেডিকেল পরীক্ষার্থী
সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী টম মোফাট মনে করেন, আইসিসির এই ব্যাপারে সক্রিয় হওয়া উচিত। ‘আফগান নারী ক্রিকেটারসহ সব ক্রিকেটারের অধিকার সুরক্ষিত করার দায়িত্ব আইসিসি এবং সংশ্লিষ্ট বোর্ডের। তাদের এই ব্যাপারে অবশ্যই আরও সক্রিয় হতে হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।