ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জটিলতা নিরসনে সারাদেশে একযোগে চালু হয়েছে নতুন জমা খারিজ (নামজারি) পদ্ধতি। এখন থেকে প্রতিটি ভূমি মালিককে এই নতুন নিয়মে নামজারি করতে হবে। সরকারের দাবি, এ পদ্ধতিতে যেমন নাগরিকদের জন্য সুবিধা বাড়বে, তেমনি দীর্ঘদিনের জমিজমা সংক্রান্ত অনেক জটিলতা নিরসন হবে।
তবে যারা আগে থেকেই যৌথ খতিয়ান থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের জন্য নতুন নিয়ম কিছুটা জটিল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কারণ বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, মৌখিক আপস-মীমাংসা বা পারিবারিক বণ্টননামার ভিত্তিতে জমি ভাগাভাগি হলেও সেটি রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনা হয়নি। এর ফলে পরবর্তীতে অংশীদারদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এমনকি নতুন ক্রেতা জমি কিনলেও অন্য অংশীদাররা আপত্তি জানান, যা মামলা পর্যন্ত গড়ায়।
ভূমি মন্ত্রণালয় বলছে, এসব বিরোধ নিরসন ও ভূমি মালিকদের আইনগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই নতুন নামজারি পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। এতে প্রতিটি জমির মালিকানা হালনাগাদ ও রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব, জালিয়াতি বা মামলা-মোকদ্দমা কমে আসবে বলে আশা করছে সরকার।
ভূমি বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন নামজারি পদ্ধতি মালিকানা নিশ্চিত করতে সহায়ক হলেও সাধারণ জনগণকে সচেতন করে তোলাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ সঠিক প্রক্রিয়া না জানলে অনেকেই ঝামেলায় পড়তে পারেন।
উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকদের করণীয়
যারা উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিক হয়েছেন এবং এখনো নামজারি করেননি, তাদের জন্য দুটি পদ্ধতি রাখা হয়েছে—
১. সম্মিলিত নামজারি: সব ওয়ারিশ একসঙ্গে উত্তরাধিকার সনদ সংগ্রহ করে যৌথ খতিয়ানের ভিত্তিতে নামজারি করতে পারবেন।
২. বণ্টননামা দলিল: যদি কোনো ওয়ারিশ এককভাবে জমি নিজের নামে নিতে চান, তবে অবশ্যই বণ্টননামা দলিল করতে হবে। এতে বিরোধ দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট আদালতে বণ্টন মামলা (পার্টিশন স্যুট) করা যাবে। নির্দেশনা অনুযায়ী এ ধরনের মামলা ১-২ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে।
দলিলসূত্রে জমির মালিকদের করণীয়
যারা দলিলসূত্রে জমি কিনেছেন কিন্তু এখনো নামজারি করেননি, তাদের জন্যও সরকারের নতুন নির্দেশনা এসেছে। শুধুমাত্র দলিলের ভিত্তিতে আর জমির মালিকানা রেকর্ড করা যাবে না। নামজারি করে খাজনা প্রদানের রসিদ জমা দিতে হবে।
কীভাবে নামজারি করবেন?
ভূমি মালিকরা এখন অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। এজন্য land.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদনের পর এসিল্যান্ড (এসএল) অফিস থেকে শুনানির তারিখ জানানো হবে। নির্ধারিত তারিখে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে হাজির হতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নামজারি অনুমোদন করা হবে।
জানা গেছে, যারা নির্ধারিত নিয়মে নামজারি করবেন না, তারা ভবিষ্যতে মালিকানা হারাতে পারেন। রেকর্ডে নাম না থাকলে জমির প্রকৃত মালিকানা আইনি স্বীকৃতি পাবে না।
অতএব, ভূমি মালিকদের দ্রুত নতুন জমা খারিজ পদ্ধতিতে নামজারি সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।