সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি নতুন ট্রেন চালুসহ আট দফা দাবিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া জংশন স্টেশনে রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চার ঘণ্টা স্থায়ী হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
অবরোধ চলাকালে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। এতে কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, সব আন্তনগর ট্রেনে দুটি করে অতিরিক্ত বগি সংযোজন, উন্নতমানের ইঞ্জিন স্থাপন, ডিসেম্বরের মধ্যে বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা এবং সিলেট-আখাউড়া সেকশনে দুটি লোকাল ট্রেন চালুর। এছাড়া ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কুলাউড়া থেকে সিলেট পর্যন্ত আন্তনগর পারাবত, উপবন ও কালনী এক্সপ্রেসে ৪০ আসনবিশিষ্ট একটি করে বগি সংযোজনের আশ্বাস দেওয়া হয়।
রেল কর্মকর্তারা জানান, সিলেট-আখাউড়া রেলপথ সংস্কারে এক হাজার ৭৩৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে এবং নভেম্বর মাসের মধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-কক্সবাজার রুটে দুটি নতুন ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
‘আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন’-এর মুখ্য সমন্বয়ক ও কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়া গেছে। আমরা তাদের সময় দিচ্ছি, প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে পুনরায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
কর্মসূচিতে অংশ নিতে সকাল থেকেই লাল পতাকা হাতে শত শত মানুষ কুলাউড়া রেলস্টেশনে জড়ো হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারে মিছিল নিয়ে আসেন তারা। এ সময় ‘আট দফা দাবি বাস্তবায়ন আন্দোলন’-এর যুগ্ম আহ্বায়ক এম আতিকুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনের বিএনপি মনোনয়নপ্রত্যাশী আবেদ রাজা, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী সাহেদ আলীসহ অন্যরা।
ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট বিভাগ রেল ও সড়ক যোগাযোগে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কুলাউড়ার মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে,আমরা তাদের দাবির সঙ্গে একাত্ম।
কুলাউড়া স্টেশনের স্টেশনমাস্টার রোমান আহমদ জানান, অবরোধের কারণে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি ট্রেন কিছু সময়ের জন্য শায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আটকা পড়ে।
আন্দোলনকারীদের আট দফা দাবি: ঢাকা-সিলেট রুটে অনুমোদিত টাঙ্গুয়ার এক্সপ্রেসসহ দুটি স্পেশাল ট্রেন দ্রুত চালু করা, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডুয়েলগেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করা, আখাউড়া-সিলেট সেকশনে লোকাল ট্রেন চালু, বন্ধ স্টেশনগুলো পুনরায় চালু, কুলাউড়া জংশন ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আসনসংখ্যা বৃদ্ধি, আযমপুরের পর ঢাকা অভিমুখী স্টেশনে পারাবত ও কালনী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতি বন্ধ,ট্রেনের সময়সূচি বিপর্যয় রোধে আধুনিক ইঞ্জিন সংযোজন ও যাত্রী চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন।
এদিকে একই দাবিতে শ্রীমঙ্গলেও অনুষ্ঠিত হয় রেল অবরোধ কর্মসূচি। দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয়রা ঢাকা থেকে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে অবস্থান নেন। ‘সিলেট বিভাগের ট্রেন যোগাযোগ উন্নয়ন চাই’, ‘নতুন ট্রেন চালু করো’, ‘টিকিট সংকটের সমাধান করো’-এমন স্লোগানে মুখরিত হয় স্টেশন এলাকা। পরে রেল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের আশ্বাসে অবরোধ প্রত্যাহার করা হয় এবং ট্রেনটি সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। বিক্ষোভে বক্তব্য দেন আহ্বায়ক কাওসার ইকবাল ও সদস্যসচিব মো. সাইফুল ইসলাম।
তারা অভিযোগ করেন, সিলেট-ঢাকা রেলপথে দ্রুতগামী ট্রেনের অভাব, টিকিট সংকট, পুরনো বগি ও ঘনঘন বিলম্বের কারণে যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। রেললাইনগুলোর বেহাল দশা ও দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। দ্রুত সংস্কার না হলে এই অঞ্চল একসময় রেল যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বক্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



