জুমবাংলা ডেস্ক: ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় নদীর পাড়ের অব্যহৃত পতিত জমিতে লেবু চাষ করে ভাগ্য বদলেছেন স্থানীয় কৃষক সেলিম মিয়া। উপজেলার ঘোষগাঁও ইউনিয়নের নেতাই নদীর ওপারে ২০২১ সালের শেষের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় অব্যহৃত পতিত দুই একর জমিতে উন্নতজাতের সিডলেস (বীজহীন) লেবুর ৮০০ গাছের চারা রোপণ করেন তিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই লেবুগাছে ফল আসতে শুরু করে। তবে ফলন ও দাম বিবেচনায় লেবুর আবাদ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এ এলাকায়। লেবুতে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরাও এ লেবু চাষে ঝুঁকছেন। সিডলেস লেবু চাষে এক বছরের আয় দিয়েই ব্যয় উঠে যাবে এবং দ্বিতীয় বছর থেকে লাভের পরিমাণ দ্বিগুণ হারে বাড়তে থাকবে বলে আশা কৃষক সেলিম মিয়ার।
সরেজমিনে ঘুরে ও কৃষি অফিসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধোবাউড়া উপজেলার নেতাই নদীর পাড়ে পতিত পড়ে থাকা উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে- দোআঁশ মাটি লেবু চাষ করে কৃষক সেলিম মিয়া আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হচ্ছেন। খরচের তুলনায় কয়েক গুণ লাভ পাওয়া যায় বলে অনেক কৃষকের এ ফসল চাষে ক্রমেই আগ্রহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। উপজেলাজুড়ে গড়ে উঠেছে অনেক লেবুর ছোট-বড় বাগান। উপজেলার বিভিন্ন লেবু বাগানে উৎপাদিত লেবু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলা-উপজেলায় সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
কৃষক সেলিম মিয়া বলেন, আমাদের এই পতিত জমিতে এত সুন্দর লেবু বাগান হতে পারে তা আমরা কোনো দিন কল্পনাও করিনি। আমাদের বাগানের পাশে সরকারিভাবে আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে। সেখানে একদিন উপজেলা কৃষি অফিসার আসেন। আমাদের পতিত জমি দেখে তিনি আমাকে লেবু চাষে পরামর্শ দেন। আমি প্রথম ভেবেছিলাম পতিত জায়গায় যেখানে ফসল হয় না সেখানে কিভাবে লেবু হবে। তারপরও সামান্য আগ্রহ্য নিয়ে কৃষি অফিসে যাই। সেখান থেকে প্রথমে আমাকে উন্নতজাতের সিডলেস (বীজহীন) চারা দেওয়া হয়। আমি তাদের পরামর্শ নিয়ে চারা রোপণ শুরু করি।
তিনি আরো বলেন, আমার এখানে পানির ব্যবস্থা ছিল না। কৃষি অফিস থেকে পানির ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এভাবেই আমার লেবুগাছ রোপণ শুরু হয়। বছর না যেতেই প্রতিটি গাছে ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। আমার পতিত জমিতে এভাবে ফলন আসবে আমি নিজেই কল্পনা করতে পারিনি। এখন সারা দিন এ বাগানে সময় দিই। আমার সঙ্গে আরো দুইজন কাজ করেন। চলতি রমজান মাসে প্রথমবারের মতো বাগানের অল্প কিছু গাছ থেকে ২০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেছি। সবগুলো গাছের লেবু বিক্রি করতে পারলে লাখ টাকার ওপর প্রতি মাসেই আয় করা যাবে বলে আশা করি। এখন অনেক পাইকার আমার বাগানে লেবু কিনতে আসে।
স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ সুরুজ আলী বলেন, এই জমিগুলোতে শেয়ালসহ নানা বন্য প্রাণীর বাস ছিল। দিনের বেলায়ও কেউ আসত না। একটা সময় মানুষের আনাগোনা বৃদ্ধি পায়। এই জমিগুলোতে বালিমাটির কারণে তেমন কোনো ফসল হতো না। ফলে পতিত পড়ে থাকত। কিন্তু সেলিমের লেবু চাষ দেখে আমি অবাক হয়েছি। প্রথমে বিষয়টিকে আমরা হাসি-ঠাট্টা করে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। নদীর পাড়ের পতিত জায়গায়ও যে এত সুন্দর লেবু বাগান হতে পারে, এটি না দেখলে বুঝতে পারতাম না।
স্থানীয় আরেক কৃষক করিম উদ্দিন বলেন, আমি মাঝেমধ্যে সেলিমের বাগানে যেই। তার সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ নিচ্ছি। নদীর পাড়ে আমার কিছু জায়গা রয়েছে। আমিও সেই জায়গা পতিত না রেখে লেবু চাষ করব। লেবু চাষে তুলনামূলক খরচ অন্যান্য ফসলের চেয়ে অনেক কম। এখন বিভিন্ন অফিসার তার লেবু বাগান দেখতে আসেন।
এ বিষয়ে ধোবাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার আলম তুষার বলেন, নদীপাড়ের এই জমি এক বছর আগেও পতিত ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় আমরা কৃষক সেলিম মিয়াকে আট শ লেবুর চারা দিয়েছিলাম। এখানে পানির কোনো সুব্যবস্থা ছিল না। আমরা সৌরশক্তি ও পানিসাশ্রয়ী আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন কৃষি পাইলট প্রথম সংশোধনী প্রকল্পের আওতায় সাবমারসিবল পাম্প, ওভারহেড পানির ট্যাংকসহ ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন করে দিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে উপজেলার কোনো জমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে। যেখানে যে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আমরা কৃষকদের সেখানে সেই ফসল করার পরামর্শ দিচ্ছি। সেলিম মিয়ার বাগানের সব গাছের লেবু এখনো বিক্রির উপযোগী না হলেও বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা তার বাগানের লেবু নিতে অগ্রিম অর্থ দিয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কথা হচ্ছে, কৃষকরা যখন তার লাভ সে নিজে বুঝবে, তখন আর জমি পতিত ফেলে রাখবে না। আমরা কৃষকদের এ বিষয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি।
জমে উঠেছে চুয়াডাঙ্গার কলার হাট, দুইদিনে প্রায় ১ কোটি টাকার বেশি বিক্রি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।