দীর্ঘ অপেক্ষার পর নন-এমপিও বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়—যে কোনো সময় জারি হতে পারে নতুন নীতিমালা।
বেসরকারি নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বড় সুখবর আসছে। বহুদিন পর আবারও এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জনবলকাঠামো ও নতুন এমপিও নীতিমালা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালা জারি হলেই শুরু হবে এমপিওভুক্তির আনুষ্ঠানিকতা।
নতুন নীতিমালা প্রকাশের পর সারাদেশের নন-এমপিও স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্তির আবেদন করার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেবে সরকার। পরবর্তীতে আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতা যাচাই–বাছাই শেষে সরকারের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী নির্দিষ্টসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হবে।
তথ্যমতে, সর্বশেষ ২০২২ সালের জুলাইয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে ২,৭১৬টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করেছিল সরকার। এরপর ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ২৫৫টি এবং একই বছরের অক্টোবরে আরও ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও সুবিধার আওতায় আসে।
নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে দীর্ঘদিন ধরে এমপিও প্রত্যাশী লাখো শিক্ষক-কর্মচারীর মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় তখন ক্ষমতায় থাকা এমপি-মন্ত্রীদের বিশেষ তদবিরেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এ নিয়ে তৈরি হয়েছিল নানান সমালোচনাও। এর পরও যোগ্য প্রায় ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যায় এমপিওভুক্তির বাইরেই। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনের মূল অংশ ও কিছু ভাতা সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। তাই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ বিষয়টি খুবই গুরুত্ব হিসেবে দেখা হয়।
সূত্র জানান, এবারের এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে প্রস্তুতকৃত নীতিমালাতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। কাম্য শিক্ষার্থী, একাডেমিক স্বীকৃতির সময়সহ বিভিন্ন সূচকে আসছে পরিবর্তন। এ ছাড়া নতুনভাবে নীতিমালায় যুক্ত হচ্ছে বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলো এমপিওভুক্তির সুযোগও। অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্তির বাইরে থাকা শিক্ষকরা।
বেসরকারি কলেজ মাস্টার্স শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি নেকবর হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পরে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নিচ্ছে এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। নন-এমপিও স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে। দেশের অনেক স্থানে শিক্ষকরা বছরের পর বছর বেতন (এমপিও) ছাড়া পাঠদান করে আসছেন। আশা করি যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির আওতায় এলে শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন আসবে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান করতে আরও বেশি উদ্যোগী হবেন।’
শিক্ষা উপদেষ্টা ড. সি আর আবরার সম্প্রতি নন-এমপিও ঐক্য পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, সারা দেশে সাধারণ ও কারিগরি মিলিয়ে ২ হাজার ৬০০টির বেশি এমপিওভুক্তির উপযোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিও চূড়ান্তকরণ করে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার।
শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভূঁইয়া গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি সরকারের এক প্রশংসনীয় উদ্যোগ। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির জন্য আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা-সচিবের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছিলাম। আসলে শিক্ষকদের অভুক্ত রেখে কখনো মানসম্মত পাঠদান সম্ভব নয়। আর্থিক সুবিধা পেলে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের আরও দরদ দিয়ে পাঠদান করবেন বলে বিশ্বাস করি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



